তারা কি সরকারের এজেন্ট?

প্রথমে মনে করা হয়েছিল কল্যাণ পার্টির নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের যে উদ্যোগ সেটি সবকারের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে তিনি বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে একত্রিত করে কূটনীতিকদের সঙ্গে যে মিথস্ক্রিয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন সেই উদ্যোগকে সরকারও সন্দেহের চোখে দেখেছিল।

এবং সরকার মনে করেছিল এটি ষড়যন্ত্রের নতুন ধারা।  কিন্তু সময় যতই যাচ্ছে ততই সরকার নয় বরং এই ঘটনাটি বিএনপিকে উদ্বিগ্ন করছে।  আজকে অনুষ্ঠিত বিএনপি`র একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে চারজন নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে যারা বিএনপিকে ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। 

এদের মধ্যে রয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি নেতা মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, এলডিপি নেতা কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমেদ এবং শওকত মাহমুদ।

এদের বিরুদ্ধে বিএনপি`র প্রধান অভিযোগ হলো যে, বিএনপি`র চিন্তা চেতনার বাহিরে গিয়ে এরা আলাদা একটি প্লাটফর্ম করতে চাইছেন এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পৃথক হয়ে বৈঠক করছেন এবং বিএনপি`র যে নির্ধারিত কর্মসূচি, সেই কর্মসূচির বাইরে গিয়ে তারা বিভিন্ন মহলকে সংগঠিত করতে চাইছেন। এবং তাদের এই পদক্ষেপকে বিএনপি`র অনেক নেতাই মনে করছেন বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হিসেবে।

গত কিছুদিন ধরে বিএনপি`র মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা এবং অস্বস্তি চলছিল। বিশেষ করে ২০ দলীয় জোটকে কার্যকর না করা, সরকার বিরোধী আন্দোলন না করা, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন না গড়ে তোলা এসব নিয়ে বিএনপি`র মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ও বিভক্তি চলছিল।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছিল। এমন প্রক্ষাপটে মেজর (অবঃ) হাফিজ এবং শওকত মাহমুদ এই দুজন ২০ দলীয় জোটের একটি ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এই বিক্ষোভ মিছিল করে তারা কারণ দর্শানোর নোটিশ এর শিকার হয়েছিলেন। সেখান থেকে বিতর্কের শুরু হয়।

এরপর কর্ণেল অলি বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে তার বাসভবণে এবং বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করেছেন।  অন্যদিকে কল্যাণ পার্টির উদ্যোগও অবসবপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে যে ঐক্য তৈরি করা হয়েছে সেই ঐক্য বিএনপি ভাঙ্গারই একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন বিএনপি`র নেতৃবৃন্দ। আর এরকম পরিস্থিতিতে এদের সঙ্গে কোনো বৈঠকে বিএনপি যাবে কিনা বা যাওয়া উচিৎ কিনা তা নিয়ে আলোচনা বসছে বিএনপি`র নেতৃবৃন্দ।

লন্ডন থেকে বিএনপি`র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন। বিএনপি`র একজন নেতা বলেছেন, কল্যাণ পার্টির যে উদ্যোগ সে উদ্যোগের বিএনপি`র কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং এ ধরনের যদি কোনো মোর্চা করতে হয় তাহলে বিএনপি সেই মোর্চা করার জন্য সক্ষমতা রাখে এটির জন্য কল্যাণ পার্টিকে ভাড়া করতে হবে না।  বিএনপি`র অন্য নেতারা বলছেন যে, এধরনের উদ্যোগের ব্যাপারে বিএনপি`র সঙ্গে নূন্যতম আলাপ আলোচনাও করা হয়নি। 

বিএনপি`র মধ্যে একটি ধারা ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে যারা মনে করছে যে, ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করতে হবে এবং ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করার মধ্য দিয়েই সরকার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করতে হবে।  কিন্তু সেই কাজটি করার ক্ষেত্রে বিএনপি`র বর্তমান নেতৃবৃন্দ ব্যার্থ হচ্ছে।

বিএনপি`র একজন নেতা বলেছেন, কল্যাণ পার্টির নেতা মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, কর্ণেল অলি`র যে উদ্যোগ, আসলে সরকারের একটি নীল নকশার অংশ এবং একটি সরকার বিরোধী মোর্চা করার জন্য তারা এই উদ্যোগ নিচ্ছে যেখানে মূল লক্ষ্য হলো বিএনপিকে ভেঙ্গে ফেলা।

বিএনপি`র একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় বলেছেন যে, দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা দরকার। এই শক্তিশালী বিরোধী দলের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপিকে ভেঙ্গে একটি বিরোধী দল হবে কিনা এ নিয়েও বিএনপি`র মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। তাই প্রথম থেকে কল্যাণ পার্টির উদ্যোগ বিএনপি`র অনেকে আশান্বিত হলেও এখন তারা এটাকে সন্দেহের চোখে দেখছে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin