ডা. জাফরুল্লাহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা। তিনি বিএনপি ঘরনার একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তাকে বিএনপি’র অন্যতম ‘থিংক ট্যাঙ্ক’ ও মনে করে। করোনা মহামারীর সময় শুরু থেকেই জাফরুল্লাহ’র ওপর ভর করেছিল বিএনপি। করোনা নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে জাফরুল্লাহ যে পথ নির্দেশনা দিয়েছেন সেই পথেই চলেছে বিএনপি।
ডা. জাফরুল্লাহ প্রথমে বলেছিলেন যে, র্যাপিড টেস্ট করতে হবে এবং তিনি র্যাপিড টেস্টের জন্য ব্যবস্থা করেছিলেন। র্যাপিড টেস্টের কিট উদ্ভাবন করেছিলেন। যদিও সেই কিট শেষ পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। কিন্তু বিএনপি জাফরুল্লাহ’র সুরেই এই র্যাপিড টেস্টের কথা বলেছিল।
ডা. জাফরুল্লাহ করোনা নিয়ে যে সমস্ত পরামর্শ এবং সরকারের সমালোচনা করেছিল সেগুলোই বিএনপি’র নেতাদের মুখে অনুরিত হয়েছিল। যখন ভ্যাকসিন আসা শুরু হলো তখন ডা. জাফরুল্লাহ এবং ফরহাদ মাজহার, এই দুই জন ভ্যাকসিনের বিরোধিতা করে নানারকম বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছিল। ফরহাদ মাজহার এই ভ্যাকসিনকে ভারতীয় ভ্যাকসিন এবং ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতীক ইত্যাদি বলে নানা সমালোচনা করেছিল।
অন্যদিকে ডা. জাফরুল্লাহ বলেছিলেন যে, এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা ঠিক হবে কিনা তা আগে বুঝতে হবে, ভ্যাকসিন কতটুকু মানসম্মত তাও বুঝতে হবে। কিন্তু দুটি কিডনি বিকল হয়ে থাকা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক ডা. জাফরুল্লাহ প্রথম দিন যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম। জাফরুল্লাহ’র এই ভ্যাকসিন নেওয়ার ঘটনাটি বিএনপি’র কেউ জানতোনা।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ডা. জাফরুল্লাহ নিজেই আগ্রহী হয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ভ্যাকসিন নেয়ার পর তিনি বলেছেন যে, এই ভ্যাকসিন ভালো এবং এতে আতঙ্কের কিছু নেই। আপনারা ভ্যাকসিন নিন। ডা. জাফরুল্লাহ’র একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পর তার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ঔষধ নীতি প্রণয়ন ইত্যাদির কারণে স্বাস্থ্যখাতে তাকে একজন অভিভাবক মনে করা হয়।
তিনি যখন এই ভ্যাকসিন নিতে বলেছেন তখন ভ্যাকসিন নিয়ে যে বিরোধী পক্ষের যে সমালোচনা সে সমালোচনাগুলো অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। ফলে, এখন বিরোধী দল ভ্যাকসিন নিবে কি নিবে না সেই নিয়ে একটা সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি’র নেতারা মনে করছেন যে, ডা. জাফরুল্লাহ যদি ভ্যাকসিন না নিতেন, তাহলে বিএনপি’র নেতারা এই ভ্যাকসিনের সমালোচনা করতে পারতেন এবং ভ্যাকসিন না নেয়ার প্রচারণা বিএনপি’র নেতারা করতে পারতেন। তবে সেটি ঘটেনি। বরং ডা. জাফরুল্লাহ’র এই ভ্যাকসিন গ্রহণের মধ্য দিয়ে ভ্যাকসিনের একটি সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করছেন যে, মন্ত্রী-এমপিরা ভ্যাকসিন নেয়ার মাধ্যমে মানুষ যতটুকু সচেতন হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে ডা. জাফরুল্লাহ’র মতো একজন বিরোধী পক্ষের মানুষের ভ্যাকসিন নেয়ার মধ্য দিয়ে। ডা. জাফরুল্লাহ কেন হঠাৎ করে এই কাজটি করলেন সেটা নিয়ে বিএনপি’র লোকজন বিব্রত এবং তারা এখন জাফরুল্লাহ’র ওপর চটেছেন।
বিএনপি’র একজন নেতা বাংলা ইনসাইডার কে বলেছেন যে, ডা. জাফরুল্লাহ এমন ডিগবাজি দিবেন এটা যদি আমরা আগে জানতাম, তাহলে তার উপর আমরা নির্ভর করতে পারতাম না। এর আগেও ডা. জাফরুল্লাহ বহুবার এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন যেগুলো বিএনপি’র স্বার্থবিরোধী।
যেমন- তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার কথা বলেছেন, জামাত থেকে বিএনপিকে বিযুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন। এই সব কথাই বিএনপির জন্য বিব্রতকর। এখন তিনি এই ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপিকে আরেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন।
বাংলা ইনসাইডার