sinha_02

ছুটি, বিবৃতি,পদত্যাগ – দেখুন সব বিস্তারিত

প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি সহকর্মীদের নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পরিদর্শক বইয়ে তিনি লেখেন, ‘বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন, অর্থাৎ এদেশের মানুষ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে, বর্তমান সরকার এদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে বলে আমার বিশ্বাস’।

পরদিন এজলাসে বসে বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, ‘ঔপনিবেশিক আমলে করা দেশের বিদ্যমান আইনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা প্রয়োজনীয় আইনগুলোকে গণতন্ত্রিক জাতির উপযোগী করে তুলতে পারিনি’।

‘সুতরাং, আমি এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি’।

দীর্ঘ একমাস ১০ দিন ছুটির শেষ দিনে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সিঙ্গাপুর থেকে হাইকমিশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন বিচারপতি সিনহা। শনিবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১টা নাগাদ পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে পৌঁছে।

আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরে যাওয়ার দুই মাস ২১ দিন আগেই পদত্যাগ করলেন তিনি।

পৌনে তিন বছরের দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচিত হন বিচারপতি সিনহা। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মীর কাসেম আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় দেওয়ার প্রাক্কালেও তার নানা সমালোচনা উঠে আসে।

সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সংবর্ধনা সভায় এস কে সিনহা বলেন, ‘যদি সরকার মনে করে, প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, তাহলে আমি বলবো- হ্যাঁ, প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের স্বার্থে রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন। বিচারকদের অবস্থা, বিচার বিভাগের উন্নয়নে প্রধান বিচারপতি প্রয়োজনবোধে আরও বলবেন। এ ব্যপারে আমি দ্বিধান্বিত হবো না’।

গত ০৩ জুলাই উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ। গত

০১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে তুমুল সমালোচনা দেখা দেয়।

সমালোচনা করেন তার সাবেক সহকর্মী ও সাবেক একজন প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের সাবেক একজন বিচারপতিও। ষোড়শ সংশোধনীর ওই রায়ে প্রধান বিচারপতির ‘অগ্রহণযোগ্য’ বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছিলেন আইনমন্ত্রী। আর শিগগিরই পুরো রায়টিরই পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি সমাবেশও করেছেন। সরকার সমর্থকরা ওই পর্যবেক্ষণ বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে না হলে তাকে অপসারণে আন্দোলনের হুমকিও দেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বিচারপতি সিনহার পক্ষে সভা-সমাবেশ করেছেন।

এর মধ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরু হয়। ওই অবকাশের মধ্যে ১৬ দিনের বিদেশ সফরে ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন গত ০২ অক্টোবর অসুস্থতার কথা জানিয়ে একমাসের (০৩ অক্টোবর থেকে ০১ নভেম্বর) ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে আরও দশদিনের (০২ থেকে ১০ নভেম্বর) ছুটি বাড়িয়ে গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া যান তিনি।

গত ০২ অক্টোবর আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞাকে ওই একমাসের জন্য প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি। বিচারপতি সিনহার ছুটি বেড়ে যাওয়ায় বিচারপতি ওয়াহ্‌হাব মিঞার দায়িত্বকালও ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন রাষ্ট্রপতি।

অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের লিখিত বক্তব্য দিয়ে
যান বিচারপতি সিনহা।
তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শঙ্কিত বটে। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই’।

পরদিন বিবৃতি দিয়ে প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যকে বিভ্রান্তিমূলক উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে’।

আপিল বিভাগের অন্য পাঁচজন বিচারপতি অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে না বলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানিয়ে দিয়েছেন বলেও সুপ্রিম কোর্টের ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।

এদিকটাতে ইঙ্গিত করে তিনি বিদেশে থাকাকালে ‘দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূরপরাহত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তাদের যুক্তি ছিল, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা যদি তার সঙ্গে না বসতে চান, তাহলে তিনি কিভাবে বিচার করবেন?’
সূত্র: বাংলানিউজ

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin