চলতি বিপিএলের এ পর্যন্ত ১২ জন বিদেশিসহ মোট ৭৭ জন জুয়াড়িকে পাকড়াও করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট। এদের মধ্যে ৬৫ জন বাংলাদেশি, ১০ ভারতীয় ও ২ জন অন্য দেশের। এরা খেলার সময় গ্যালারি থেকে বেটিংয়ে সহায়তা করছিল। বিসিবির বিশেষ টিম আড়ি পেতে তাদের সনাক্ত করে। এবং পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। গত বছরও কয়েকশ জুয়াড়িকে আটক করেছিল পুলিশ। এদের মধ্যে প্রায় একশ’র মতো ছিলেন ভারতীয়।
সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান সিনহা, সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক। আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান আকরাম খান ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
বিপিএল আসলেই জমজমাট হয়ে ওঠে জুয়ার আসর। বল বাই বল, ওভারে কত রান ইত্যাদি নানাভাবে বেটিং করা হয়।মূলত মাঠের বাইরেই বেটিং করা হয়। বেটিংয়ে জিততে মাঠে টিকিট কেটে প্রবেশ করে জুয়াড়িদের প্রতিনিধি। মাঠের চেয়ে টিভি বা রেডিওতে সম্প্রচার ৫/৭ সেকেন্ড পরে হয়। বল বাই বেটিংয়ে ফোনের মাধ্যমে রান কতো হলো তা গ্যালারি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
কদিন আগে বিপিএলের জুয়া নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা থেকে একজন নিহত হবার মতো ঘটনা ঘটে। মাঠের বাইরের জুয়া নিয়ে দেশের মিডিয়াগুলো সোচ্চার। কিন্তু বিপিএলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক জানান, জুয়া নিয়ে দেশে তেমন শাস্তির বিধান না থাকায় এটা বন্ধ করা কঠিন।
মাঠের বাইরের জুয়া নিয়ে বিসিবির করার কিছু নেই বলেও জানান তিনি। এটা বন্ধ করা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ বলে মনে করেন আই এস মল্লিক। তিনি বলেন,‘ আমরা যেটা করতে পারি তাহলো- মাঠ থেকে জুয়াড়িদের সনাক্ত করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা। আমরা সেটাই করছি। এর বেশি কিছু আমাদের করার নেই। এ নিয়ে আইন থাকলেও শাস্তির বিধান নেই। এক দুই দিন আটকে রাখার পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।’
ঢাকাটাইমস
মাশরাফির নেতৃত্বে খেলতে মুখিয়ে আছেন ম্যাককালাম
এমন নয়, বিপিএলে আগে কোন বড় তারকা খেলেননি। বিশ্ব ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র ক্রিস গেইল, মাহেলা জয়বর্ধনে, কুমারা সাঙ্গাকারা আর শহীদ আফ্রিদি ছাড়াও অনেক নামি-দামি তারকা বিপিএলে নাম লিখিয়েছেন। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন ‘ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।’
গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীতে পা রাখা এ নিউজিল্যান্ড সুপারস্টার আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মত শেরে বাংলার ইনডোরে প্র্যাকটিসে এসেছিলেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সবচেয়ে বেশী রান তার। শুধু এটাই ম্যাককালামের একমাত্র পরিচয় নয়।
বিশ্ব ক্রিকেটে মাত্র চারজন ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দুটি করে সেঞ্চুরির মালিক। তার একজন হলেন এই ম্যাককালাম। বাকি তিনজন-ক্রিস গেইল, এভিন লুইস ও কলিন মানরো। ম্যাককালাম হলেন গেইলের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান, যার ব্যাট থেকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি বেড়িয়ে এসেছে। আর সবার আগে এই ফরম্যাটে হাজার রান করার কৃতিত্বটাও এ কিউই উইলোবাজের।
২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অকল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি অভিষেক ম্যাককালামের।
ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে ৩৩ নম্বর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি শতক। ৫৬ বলে ১১৬। যাতে ছিল এক ডজন বাউন্ডারি আর আট ছক্কার মার। এরপর ২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেল্লেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৮ বলে ১১ বাউন্ডারি ও সাত ছক্কায় ১২৩ রানের ইনিংসটিই তার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি শতক।
যাকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সবচেয়ে কার্যকর ও ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান বলে ভাবা হয়, সেই ম্যাককালাম প্রথমবার বিপিএল খেলতে এসেছেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে। কেমন লাগছে তার বিপিএল খেলতে এসে? আসুন তার মুখ থেকেই শোনা যাক।
‘বিপিএলে প্রথবার খেলতে এসে খুব ভালো লাগছে। বিপিএল তো অনেক দিন ধরেই চলছে। আমার প্রথমবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের অনেকের কাছ থেকেই অনেক ভালো ভালো কথা শুনেছি বিপিএল নিয়ে।’-বলছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক।
প্রথম সংলাপটিই বলে দেয় তিনি বিপিএল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন এবং এ আসর খেলতে আসার আগে সব জেনেই এসেছেন। চরম পেশাদার ম্যাককালাম মুখিয়ে আছেন, নিজের সেরাটা উপহার দিতে। তাইতো মুখে এমন কথা, ‘রংপুর রাইডার্সের হয়ে নিজের সেরাটা দিতে আমি মুখিয়ে আছি।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, এ আসরে রংপুর রাইডার্সের হয়ে জুটি বাঁধবেন ক্রিস গেইল আর ম্যাককালাম। এ দুজন হার্ডহিটার ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দুই সফলতম ও বিধ্বংসী উইলোবাজ এর আগে ভারতের সাড়া জাগানো আইপিএলে কোলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে উদ্বোধনী জুটি বাঁধেন। এবার তারা আবার এক দলে।
নিজেদের বিধ্বংসী এই জুটি নিয়ে কি বলেছেন ম্যাককালাম। তিনি বলেন, ‘মাঠের বাইরে আমাদের জমে দারুণ। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে একসঙ্গে খেলেছি দু’জন। এখান থেকে কলকাতা খুব দূরে নয়। আবার ওর সঙ্গে জুটি বাঁধার সুযোগ দারুণ ব্যাপার। টি-টোয়েন্টিতে ক্রিস বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানদের একজন। ওর সঙ্গে ব্যাটিং উদ্বোধন করা হবে দারুণ কিছু। হয়ত আমি ওকে স্ট্রাইক দেব আর শুধু দেখব ছক্কা মারতে!’
রংপুর রাইডার্স পয়েন্ট টেবিলে ভাল অবস্থানে নেই। শুরু ভালো হয়নি। তিন ম্যাচে জয় মোটে একটি। শক্তি বাড়াতেই গেইল ও ম্যাককালামের শরণাপন্ন তারা। ম্যাককালামও নিজেকে মনের দিক থেকে তৈরী করে ফেলেছেন, দলের অবস্থার উন্নতিতে তাদের রাখতে হবে কার্যকর ভূমিকা।
তাই তো মুখে এমন কথা ম্যাককালামের, ‘তিন ম্যাচে মাত্র একটি জিতেছি আমরা। তবে এটি অনেক লম্বা টুর্নামেন্ট। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা স্থির থাকি, আতঙ্কিত না হই। আমাদের সাপোর্ট স্টাফ খুবই স্থির, অধিনায়কও ঠান্ডা মেজাজের। আমাদের দলটাও দারুণ। আমি নিশ্চিত, পরস্পরের সঙ্গে যখন মানিয়ে নেব আমরা, তখন ভালো করব। অবশ্যই এই টুর্নামেন্টে আরও অনেক ভালো দল আছে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা ভালো খেলি।’
গেইল-ম্যাকাকালামদের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ককে নিয়ে কিউই ব্যাটসম্যানের ভাবনা বা মূল্যায়ন কি? ম্যাককালাম যা বললেন, শুনে মাশরাফি ভক্তদের মন খুশিতে ভরে যাবে।
ম্যাককালাম নাকি মুখিয়েই রয়েছেন মাশরাফির অধীনে খেলতে। এ সম্পর্কে তার বক্তব্য, ‘মাশরাফি আমার পুরণো সাথী। তার সঙ্গেও আমি আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছি। ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক দারুণ। গত কাল মাঠে এসে ওকে দেখে খুব ভালো লেগেছে। মধ্য তিরিশেও যথেষ্ট ফিট। অনেক কিছু অর্জন করেছে ক্যারিয়ারে। শুধু এখানে নয়, পুরো ক্রিকেটবিশ্বই ওকে সমীহ করে। ওর নেতৃত্বে খেলতে আমি সত্যিই মুখিয়ে আছি।’
onlinenewsnow.com