বিএনপি’র রাজনীতিতে এখন প্রধান সমস্যা হলো জিয়া পরিবারের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাপ নেই বিএনপি’র ব্যাপারে। বরং বেগম খালেদা জিয়াকে দু’দফায় প্রায় এক বছর বিশেষ বিবেচনায় জামিন দিয়েছে সরকার। বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় নেই।
প্রায় সব নেতাদের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতি, অগ্নিসংযোগ জ্বালাও পোড়াও এর মামলা আছে সেই মামলা গুলো থেমে গেছে। তারপরেও বিএনপিতে অস্থিরতা চলছে, বিএনপি’র মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। আর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, এর পেছনে মূল কারণ হল জিয়া পরিবারের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
খালেদা জিয়া জেল থেকে বের হবার পরই তারেক জিয়া এবং খালেদা জিয়ার মধ্যে নানা রকম বিরোধের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই দলের মনোনয়ন কমিটি নিয়ে মা-ছেলের দ্বন্দ্ব প্রতিদিনই প্রকাশ্য হচ্ছে।
তবে বিএনপির একাধিক সূত্র বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া অনেক অসুস্থ এবং তিনি মুক্ত অবস্থায় তার যে, দেশে-বিদেশে হাজার কোটি টাকা সম্পদ আছে। সেই সম্পদগুলোর ব্যাপারে একটি ফয়সালা করতে চান। আর এ নিয়েই এখন বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছেন।
এই সম্পদের জন্যই তারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। উল্লেখ্য যে, বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক জিয়া অনেক বিত্তবান এবং তারও বিভিন্ন দেশে হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তারপরও খালেদার সম্পদের দিকে নজর রয়েছে তারেক জিয়ার।জানা গেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার সৌদি আরব, আবুধাবি, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর- এই দেশগুলোতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে।
সৌদি আরবে বেগম খালেদা জিয়ার দুইটি শপিং মলের শেয়ার রয়েছে, আভিজাত্য এপার্টমেন্ট রয়েছে তিনটি। এছাড়াও তার দুইটি দোকান আছে বলে সৌদি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। এছাড়াও সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার নামে বাংলাদেশি টাকায় তিনটি পৃথক পৃথক এফডিয়ার রয়েছে, যে তিনটি এফডিআরের মূল্য ১৩০ কোটি টাকা।
সৌদি আরব ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেগম খালেদা জিয়ার একটি শপিং মলে ৮টি দোকানের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি সৌদি আরবে বুর্জ খলিফায় একটি এপার্টমেন্টের মালিক। এ ছাড়াও সৌদি আরবে তার আরও দুটি এপার্টমেন্ট আছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া সৌদি ব্যাংকে খালেদা জিয়ার গচ্ছিত এফডিয়ারের পরিমান ৮৭ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া সম্পদ আছে ব্রুনাইয়ে। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশি টাকার ৮০ কোটি টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত আছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
ব্রুনাইয়ে বেগম খালেদা জিয়ার একটি অ্যাপার্টমেন্ট হাউস এবং একটি বাংলো রয়েছে বলেও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুরে বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদ আছে বাংলাদেশি টাকায় ৫০ কোটি টাকা। এছাড়াও সিঙ্গাপুরে বেগম খালেদা জিয়ার নামে ২টি অ্যাপার্টমেন্ট আছে, বলে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার একটি দোকান এবং ৩টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় খালেদা জিয়ার সম্পদ স্থানীয় বি্এনপি এবং প্রভাবশালীরা দেখাশোনা করেন। এক সময় মোসাদ্দেক আলী ফালু এই সম্পদ দেখাশোনা করতেন। এখনও অনেক সম্পত্তি ফালু দেখাশোনা করেন।
এখন বেগম খালেদা জিয়ার এই সম্পত্তিগুলো তার উত্তরসূরিদের কাছে হস্তান্তর করতে চান। বেগম জিয়াই বলেছেন, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে, যে কোনো সময় তিনি চলে যেতে পারেন। এর আগেই যেন সম্পত্তিগুলো তার নিকট আত্মীয় ও উত্তরাধিকারদের কাছে পাঠানো হয়।
সে ব্যাপারে তিনি ইতোমধ্যে তার আইনজীবিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বেগম জিয়ার এই সম্পত্তিগুলোর উত্তরাধিকার তিনজন, তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার এবং বোন সেলিমা ইসলাম, তারা দু’জনই বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ট হয়েছেন। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখাশোনা করছেন।
এই প্রত্যাশা থেকেই যে, বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদের ভাগ হয়তো তারা কিছুটা হলেও পাবেন। তবে কতটুকু পাবেন সেগুলো দেখার বিষয়। বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী এবং তার দুই সন্তান এই সম্পত্তির বেশি অংশ চায়। কারণ কোকোর স্ত্রী সিঁথি মনে করেন, তারেক অনেক বিত্তবান।
কাজেই, এই সম্পত্তির বড় অংশীদার তিনি। এছাড়া তারেক জিয়া ও তার মেয়ে জাইমা রহমান এই সম্পত্তির বড় দাবিদার। বেগম জিয়ার ঘনিষ্টরা বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া তার তিন নাতিকে সম্পত্তির বেশির ভাগ অংশ দিতে চান। বাকি অংশটি তিনি তার ভাই-বোনদের মধ্যে দিতে চান।
এজন্য তিনি সিঁথি বা তারেক রহমানকে কোনো সম্পত্তি দিতে চান না। বিএনপিতে এটি নিয়েই জিয়া পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্পত্তি ভোগ দখলের জন্য দলের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে জিয়া পরিবারের সদস্যরা। তারেক জিয়ার পূর্ণ কতৃত্ব রয়েছে বিএনপিতে এবং ধরে নেয়া হয়, তিনি খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকার।
এখন শর্মিলা রহমান সিঁথিও বিএনপি’র বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নাক গলাচ্ছেন, শামীর ইস্কান্দারের গুরুত্ব দলে বেড়ে গেছে। এই তিন জনেরই দলের তৎপরতার কারণ হল বেগম জিয়ার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার তার উইল কাকে সম্পত্তি দেন বা কীভাবে সম্পত্তি বন্টন করেন- সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার