সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মেয়ে মানসি চিল্লার হয়েছেন মিস ওয়ার্ল্ড-২০১৭। গতকাল শনিবার চীনের সানাইয়া সিটিতে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড ফিনাল থেকে এই ঘোষণা আসে। এরপর বিশ্ববাসীর নজর এখন ২০ বছর বয়সী মানসির দিকে। জানার ইচ্ছা, কে এই ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ মানসি চিল্লার? ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, মানসির আগাগোড়া পরিচয়।
ভারতীয় সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ সালের ১৪ মে হরিয়ানায় এক চিকিৎসক পরিবারে জন্ম মিস ওয়ার্ল্ড মানসি চিল্লার। তার বাবা-মা দু’জনেই পেশায় চিকিৎসক। বাবা মিত্রবসু চিল্লার ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের একজন বিজ্ঞানী। আর মা নীলম চিল্লার ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান বিহেভিয়র অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক।
বাবা-মাকে দেখে ছোট থেকেই মানসির ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবেন। তখন থেকেই পড়ার বইয়ে মুখ গুজে থাকতেন এই মেয়ে। আর বাকি পাঁচটা মেয়ের মতো পড়াশোনাটাই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। একসময় মানসির পরিবার হরিয়ানা থেকে চলে আসে উত্তর দিল্লিতে। তখন মানসি ভর্তি হন দিল্লির সেন্ট থমাস স্কুলে। দ্বাদশ শ্রেণিতে খুব ভালো ফলাফল করে সোনিপাতের ভগতফুল সিংহ সরকারি কলেজ ও হাসপাতালে (মহিলা) ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হন।
পড়াশোনার পাশাপাশি বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী রাজা রেড্ডি, রাধা রেড্ডি এবং কৌশল্যা রেড্ডির কাছে মানসির তালিম চলছিল কুচিপুরি নৃত্যশৈলীরও। এমনকী ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার ছাত্রী তিনি। পড়াশোনা, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, নাচ আর নাটক এই নিয়ে জীবনটা একই খাতে বইছিল মানসির।
তবে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় একবার অংশ নেয়ার একটা সুপ্ত বাসনা ছিল তার মনের মধ্যে। সে কথাটা মা-বাবাকে একদিন বলেও ফেলেন। মেয়েকে উৎসাহ দিতে কোনো কার্পণ্য করেননি তার বাবা-মা। সে সময় চণ্ডীগড়ে ছিলেন মানসি। একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পান। আর দেরি করেননি। নাম লেখাম করে ফেলেন সেই প্রতিযোগিতায়।
সেই থেকে জীবনটাকে এক্কেবারে অন্যভাবে দেখা। তখন থেকেই বিশ্বের সেরা সুন্দরীর মঞ্চে সেরার তকমা আদায় করার জন্য শুরু কঠিন অধ্যবসায়। যে সময় আর পাঁচটা ছাত্রী ঘুমতে যেতেন, সে সময় কঠিন অনুশীলনে ব্যস্ত থাকতেন ভারতের নতুন বিশ্ব সুন্দরী। একটা বছর ঠিকমতো পড়াশোনাটাও করে উঠতে পারেননি সে জন্য।
এসব কিছু অবশ্য বৃথা যায়নি। জয়ের শেষ হাসিটা হেসেছেন মানসি। ২০১৭ সালের ২৫ জুন হরিয়ানার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে জিতে নিয়েছিলেন ‘মিস ইন্ডিয়ার’ খেতাব। এবার বিশ্ব সুন্দরীর মুকুট জিতে নিলেন মানসি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে প্রথমবার ভারতীয় হিসেবে ‘মিস ওয়ার্ল্ডে’র মুকুট জয় করেন ঐশ্বরিয়া রাই। এরপর ডায়ানা হেডেন ১৯৯৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ভারত থেকে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। পরে যুক্তা মুখী ১৯৯৯ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ খেতাব পান। পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সালে আবার ভারত থেকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ বিজয়ী হয়েছিলেন। এর ১৭ বছর পর আবারও ভারতের মানসি চিল্লার হলেন মিস ওয়ার্ল্ড।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ ভারতের মানুসি ছিল্লার
এবার ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ খেতাব জিতেছেন ভারতের হরিয়ানার মানুসি ছিল্লার। তাঁর বয়স ২১ বছর। আজ শনিবার সন্ধ্যায় চীনের সানাইয়া শহরে ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ডের চূড়ান্ত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। নতুন মিস ওয়ার্ল্ডকে মুকুট পরিয়ে দেন গত বছরের বিশ্বসুন্দরী স্টেফানি দেল ভালে। মেক্সিকোর আন্দ্রে মেজা প্রথম রানারআপ হন আর দ্বিতীয় রানারআপ হন ইংল্যান্ডের স্টিফেনি হিল। আড়াই ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান ডিজাইন করেছে বেইজিং রাইজ। উপস্থাপনা করেছেন ২০১৩ সালের মিস ওয়ার্ল্ড মেগান ইয়ং। মানুসি ছিল্লার ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ জেতা ষষ্ঠ ভারতীয়।
জমকালো এই অনুষ্ঠান শুরু হয় চীনের নৃত্যশিল্পীদের নাচ দিয়ে। এ ছাড়া ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ডের প্রতিযোগীদের বিভিন্ন পরিবেশনা মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। চীনের সানাইয়া সিটি এরেনায় ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ড চূড়ান্ত অনুষ্ঠানের মঞ্চকে ঘিরে ছিল কঠোর নিরাপত্তা।
মানুসির মা-বাবা দুজনই চিকিৎসক। মানুসি পড়াশোনা করেছেন দিল্লির সেন্ট থমাস স্কুলে। মানুসি নিজেও একজন চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। তাই এখন তিনি সোনেপতের ভগত ফুল সিং গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ ফর ওমেনে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পাশাপাশি কাজ করছেন মেয়েদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয় নিয়ে।
মানুসি ছোটবেলা থেকেই নাচের সঙ্গে আছেন। কুচিপুড়ি নাচের শিল্পী মানুসি শাস্ত্রীয় নৃত্যে তালিম নিয়েছেন কৌশল্যা রেড্ডির কাছে। মানুসির বাবা ডা. মিত্র বসু চিল্লর ডিআরডিওতে গবেষণা করছেন আর মা নীলম চিল্লর বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন। মানুসির বোন পেশায় আইনজীবী আর ছোট ভাই স্কুলে পড়ছে। আজ মঞ্চের সামনে তাঁরা সবাই এসেছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, এনডি টিভি