dildaar

কেমন আছে দিলদারের পরিবার?

চলচ্চিত্রের পর্দায় দুঃখ ভুলানো মানুষ ছিলেন তিনি। ছবি দেখতে দেখতে কষ্ট-বেদনা বা ক্লান্তিতে মন যখন আচ্ছন্ন হয়ে যেতো তখনই তিনি হাজির হতেন হাসির ফোয়ারা ছড়িয়ে, পেটে খিল ধরিয়ে। বলছি, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী কৌতুক অভিনেতা দিলদারের কথা।

মৃত্যুর পর এই অভিনেতাকে আজও মিস করেন বাংলা ছবির দর্শক। ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর দিলদার অভিনীত ছবিগুলো সিনেমা হলে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় যখনই প্রচার হয় দর্শকরা তাকে নিয়ে আফসোস করেন। দিলদার গেলেন, তার মতো কেউ আর আসেনি।

মাত্র ৫৮ বছর বয়সে দিলদারের চলে যাওয়ায় বাংলা ছবিতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয় সেটা টের পাচ্ছে চলচ্চিত্রের মানুষরা। দিলদারের মৃত্যুর এতগুলো বছর পরও তিনি তুমুল জনপ্রিয়। এই অভিনেতা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করেছেন। সিনেমার জন্যই পরিবারকে কম সময় দিতেন, ব্যস্ত থাকতেন সিনেমায় শুটিং নিয়ে।

সেই প্রিয় মানুষ দিলদার নেই। এখনো তাকে ভালোবাসেন দর্শক। এখনো তার নামটি মজার মানুষদের পরিচয় হিসেবে উচ্চারিত। অনেকেই জানতে চান এই অভিনেতার পরিবার সম্পর্কে। কেমন আছে, কীভাবে কাটছে দিলদারের পরিবারের সদস্যদের জীবন। এইসব জানাতে জাগো নিউজের মুখোমুখি এই অভিনেতার ছোট মেয়ে জিনিয়া-

দিলদার এর ছোট মেয়ে জিনিয়া

গেল রোববার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর নিকেতনের বাসায় দিলদারের কনিষ্ঠ কন্যা জিনিয়া আফরোজ এই প্রতিবেদকের কাছে জানান তাদের পরিবারের অবস্থা। জাগো নিউজকে জিনিয়া বলেন, ‘আব্বা (দিলদার) যখন মারা যান তখন আমার বয়স ২৫ বছর।

উনি চলে যাওয়ার পর আমাদের মাথার ওপর থেকে নির্ভরতার ছায়া সরে যায়। বাবার কবর দেয়া হয় সানারপাড় এলাকায় (ডেমরা, ঢাকা)। ওখানে আমাদের পারিবারিক গোরস্তান। আমি এখনো মাঝেমধ্যে গিয়ে কবর জিয়ারত করি। রোজা, ঈদে, বাবার জন্মদিন, মৃত্যুদিনে তার কবরের পাশে যাই।’

জিনিয়া জানান, দিলদারের স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের নাম মাসুমা আক্তার। পেশায় তিনি দাঁতের ডাক্তার। বিয়ে করেছেন অনেক আগেই। তার ছেলে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়য়ে পড়ছে আর মেয়ে পড়ছে ক্লাস সেভেনে।

দিলদারের ছোট মেয়ের নাম জিনিয়া আফরোজ। দিলদারের কনিষ্ঠ কন্যা জিনিয়া বলেন, আমার মা-বাবা দু’জনার পৈতিক বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়। বাবা প্রথমে থিয়েটারে কাজ করতেন। এরপর চলচ্চিত্রে আসেন। তখন আমরা ‘গুলশান ২’ এলাকায় থাকতাম। পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছেন। বাবা প্রচুর টাকা খরচা করতেন। মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। তার মন কতো বড় সেটা আমাদের চেয়েও বেশি জানেন চলচ্চিত্রে তার কাছের মানুষেরা।

তার আয় যেমন ছিল, ব্যয়ও করতেন তেমন। তখন আমার মা একটা বুদ্ধির কাজ করেছিলেন যার ফল আমরা এখন ভোগ করছি। বাবা যা আয় করতেন ওখান থেকে টাকা জমিয়ে সারুলিয়া (ডেমরা) তে একটা পাঁচতলা বাড়ি করেছেন। ওই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। এখন চারতলা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া এবং পাঁচ তলায় আমার মা মাঝেমধ্যে থাকেন। এছাড়া তিনি চাঁদপুর এবং ঢাকায় আমাদের দু-বোনের কাছেও থাকেন। আল্লাহর রহমতে আম্মার শরীর ভালো আছে।’

দিলদার চলে যাওয়ার পর চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয় বলে জানান তার কন্যা জিনিয়া। তিনি বলেন, ‘আব্বা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরেও অনেকেই খোঁজ খবর রাখতেন। কিন্তু এখন মিডিয়ার কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই আমাদের। বিশেষ করে কৌতুক অভিনেতা আনিস আঙ্কেল বাবার অনেক কাছের বন্ধু ছিলেন। আমাদের সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। এছাড়া নায়ক মান্নাও আমাদের টুকটাক খবর নিতেন। এখন কেউ খোঁজ নেয় না। তবে আব্বা বিএনপি’র জিসাস (জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ)’র সভাপতি ছিলেন। মারা যাওয়ার পর প্রথম তিন-চার বছর সংগঠনটি আব্বার মৃতুবার্ষিকী পালন করতো। আজকাল আর কেউ মনে রাখে না।’

দিলদারের ছোট মেয়ে জিনিয়া আগে টেলিকমিনিকেশনে চাকরি করতেন। সেখানে থেকে চলে আসেন ব্রাক ব্যাংকে। পাঁচবছর চাকরির পর সেটিও ছেড়ে দেন। শারীরিক অসুস্থতা ও অতিরিক্ত কাজের প্রেসারে ওই চাকরিটি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এরপর চাকরির ইন্টার্ভিউ দিতে যান এশিয়ান গ্রুপে। তখন সেখানে কর্মরত ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। বললেন, ‘রিয়াজ ভাই আমার পরিচয় পেয়ে আপ্লুত হয়েছিলেন। তিনি আমাকে চাকরিটা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি সার্বিক বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত আর যাইনি। পরে আমাকে সময় দিয়েছিলেন সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। কিন্তু তার মাসখানেক পর তিনিই চাকরিটা ছেড়ে দেন।

আপাতত আমি গুলশানের আশপাশে চাকরি খুঁজছি। দেখা যাক কি হয়। অফিস দূরে হলে আমার জন্য সমস্যা। কারণ আমার একছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ওদের দেখাশোনর সমস্যা হয়। ছেলে ‘ও লেভেল’ এ পড়ছে এবং মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ছে। আমার স্বামী মারা গেছেন। ওদের দেখাশোনার জন্য আমি দূরে অফিস নিতে পারছিনা। আর এখন রেফারেন্স ছাড়া চাকরি পাওয়াও মুশকিল!’

টেলিভিশন বা কোথাও বাবার সিনেমা প্রচার হলে সেগুলো দেখেন না জিনিয়া। বললেন, ‘আব্বাকে টেলিভিশন বা সিনেমার পর্দায় দেখলে নিজে ঠিক থাকতে পারি না। তখন আমি সেখান থেকে সরে যাই। আমার মাথায় ধরে আসে। এত আদর তার কাছ থেকে পেয়েছি, তাকে ছাড়া এতগুলো দিন কটলো, পুরো জীবনটাই কেটে যাবে ভাবলেই মন কেঁদে ওঠে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখন যা কিছু আছে সবকিছু আমার মা দেখাশোনা করেন। ওনারও বয়স হয়েছে। আমাদের সংসার রয়েছে, তার ফাঁকেও দেখভাল করি যতটুকু পারি। আর আমার তো কোনো ভাই নেই তাই আম্মাকে আমাদের দুই বোনকেই দেখতে হয়।’

বাবার স্মৃতি টেনে জিনিয়া বলেন, ‘আব্বা যখন ‘আবদুল্লাহ’ ছবি করেছিলেন তারপর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অনেকদিন তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন। আর আমাদের সঙ্গে অনেকসময় দেখা হতো না। কারণ তিনি শুটিং নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। আমার মডেলিং করার শখ ছিল। কিন্তু আব্বা চাইতেন না আমি মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হই। গিটার বাজানো শিখতে চেয়েছিলাম। আব্বা সেটাও দেননি, কারণ তিনি মনে করতেন লেখাপড়ায় ঘাটতি পড়বে। মিডিয়াতে কাজের নেশা চেপে বসবে। আমার মাও খুব সাধারণ জীবন যাপন করেছেন আগে, এখনো করেন। কখনো ঘুরে টাকা পয়সা উড়াননি। কখনো মেকআপ, শপিং বিলাসবহুল জীবন যাপন করেননি। আমরা কখনো আব্বার শুটিং দেখতে যেতাম না। কারণ আব্বা চাইতেন না সেটা।

তিনি বলেন, ‘আব্বা মারা যাবার পর একটা বিরাট পরিবর্তন টের পেয়েছি চারপাশে। তিনি বেঁচে থাকার সময় চারপাশের মানুষ আমাদের যেমন মূল্যয়ন করতেন এখন সেভাবে করে না। আর আব্বা ছিলেন আমাদের মাথার ওপর বট গাছ। অনেক ঝড় গেছে আব্বাকে হারানোর পর। আম্মা আমাদের দু-বোনকে আগলে রেখেছেন অনেক কষ্টে। আব্বার মৃতুবার্ষিকীতে শিল্পী সমিতি দোয়া-মিলাদের আয়োজন করেছে এবার। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। কেউ কিছু বলেওনি। তারপরও শিল্পী সমিতির কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ আগে কেউ এভাবে দোয়া মিলাদের আয়োজনও করেনি।’

জিনিয়া বলেন, ‘আব্বা মৃত্যুর আগে নাটক লেখা, প্রযোজনা করছিলেন। দুটো নাটক প্রচারও হয়েছিল। তারপর চলে যান। আব্বা অনেক রিজার্ভ মাইন্ডের ছিলেন। ঝামেলা কম পছন্দ করতেন, সাহস ছিল কম। আব্বার শেষ ইচ্ছে ছিল তার নাতিপুতিদের মুখ দেখা। আজাদ প্রোডাক্টসের মালিকের সঙ্গে আব্বার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। তাদের ছেলের বিয়ে, মেয়ের বিয়েতে আমাদের দাওয়াত দেয় এখনো। সম্পর্কটা বেশ ভালো।’

আলাপের শেষের দিকে দিলদার কন্যা জিনিয়া বলেন, ‘আব্বার চলে যাওয়ায় তার অভাব শুধু আমরা নই, পুরো দেশের চলচ্চিত্র প্রিয় মানুষরা অনুভব করেন। আব্বা ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। তার মূল্যায়ণে তাকে দেশের মানুষ মনে রেখেছে এটাই তার সন্তান হিসেবে আমার কাছে শ্রেষ্ঠ পাওয়া মনে হয়।। শুধু আমার বাবা নয়, সব শিল্পীদের ক্ষেত্রে এটা হওয়া উচিত।

আর ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত কিংবা তাদের পরিবারের জন্য ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের একটা ফাণ্ড থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ, একজন শিল্পী মারা যাওয়ার পর তার পরিবার অনেক সমস্যায় পড়েন। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’

jagonews24

Check Also

নি’জের ফ্ল্যাট থেকে জনপ্রিয় অ’ভিনেত্রীর লা’শ উদ্ধা’র, আবারো শোকের ছায়া টেলি জগতে (ছবিসহ)

হায়দ্রাবাদে নি’জের ফ্ল্যাট থেকে উ’দ্ধার করা হলো ভারতীয় দক্ষিণী ইন্ডা’স্ট্রির জন’প্রিয় টে’লি অ’ভি’নেত্রী বি’শ্বশা’ন্তির লা’শ। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin