অন্তর্দ্বন্দ্বে আর কাঁদা ছোঁড়াছুড়ির কারণে রাজশাহীতে বিপর্যস্ত মহানগর ও জেলা বিএনপি। এতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। এ অবস্থায় দলটির হাই কমান্ড তৃণমূলের সঙ্গে জনসম্পৃক্ত এমন নেতাকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন। এ লক্ষ্যে আসছে নির্বাচনের জন্য সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলে জানান সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি সংসদ আসনই ছিল বিএনপির দখলে। তবে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবকটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন। বর্তমানে দলীয় কোন্দল-দ্বন্দ্ব পারস্পরিক অবিশ্বাস ও গ্রুপিং এর কারণে বিপর্যস্ত রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি। সম্প্রতি কর্মী সম্মেলনে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। যদিও সংগঠনটির দাবি আসছে সিটি করপোরেশন ও একাদশ জাতীয় সংসদকে নির্বাচনকে টার্গেট করে দল গোছাতে শুরু করেছেন।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘মিথ্যা মামলা এবং অত্যাচার নির্যাতনের মধ্যে এখনো আমাদের অনেক ছেলেরা ব্যস্ত রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস সরকার নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করবে। আমাদের দলের কোনো কোন্দল নাই।’
রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন তপু বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দিয়েছেন যে, সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। যারা যাকে নির্বাচিত করবে, তারাই সে নির্বাচনের সম্মিলিত নির্দেশ পরিচালনা করবে।’ এ অবস্থায় ৬টি সংসদীয় আসনে বিএনপির মাঠ পর্যায়ে হাই ভোল্টেজ প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির হাই কমান্ড।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, ‘বিগত দিনে যেমন নির্বাচন হয়েছে, আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আসছে নির্বাচনে আমাদের হাই কমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে, কে কোথায় নির্বাচন করবে। হাই কমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে ফাইনাল।’ এরইমধ্যে নতুন কমিটি গঠনের পাশাপাশি নানা কৌশল অবলম্বন করে রাজশাহীতে নির্বাচন প্রচার করা শুরু করেছে বিএনপি।
উৎসঃ সময় টিভি
নৌকায় চড়তে চান নাজমুল হুদা
বিএনপির এক সময়কার ডাকসাইটে নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এখন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় চড়তে চাইছেন। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
সমকালের সঙ্গে আলাপকালে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বিশদ আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাকে ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা বলেছেন।
নাজমুল হুদা ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি। আগামী নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সালমান এফ রহমান।
তিনি সম্পর্কে নাজমুল হুদার চাচা। নাজমুল হুদা বলেছেন, তিনি তার চাচা সালমান এফ রহমানকে তার নিজের ঢাকা-১ আসনটি ছেড়ে দিয়েছেন।
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় জোট গঠন করা হয়েছে। তিনি এই জোটের চেয়ারম্যান। জাতীয় জোটে ৩১টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বলে তার দাবি। জাতীয় জোট গঠনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে সম্পৃক্ত হন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সম্ভাব্য নির্বাচনী জোটে নাজমুল হুদার জাতীয় জোটের সম্পৃক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গত ১৮ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাগরিক সমাবেশে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার উপস্থিতি সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক এই মন্ত্রী সমকালকে বলেছেন, দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে আওয়ামী লীগ, আরেকদিকে আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তি। আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে। তবে আওয়ামী লীগে বিলীন না হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন।
তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এটা তো বাস্তবতা- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির কল্যাণে দৃশ্যমান অনেক কিছুই করেছেন। দেশে এখন আর সহিংসতা ও অস্থিরতা নেই। হরতাল উধাও হয়েছে। দেশজুড়ে উন্নয়ন হচ্ছে।
ভবিষ্যতে জাতীয়ভাবে অনেক বিষয়ের মীমাংসা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তার ভাষায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জয় বাংলা স্লোগান হলো জাতীয় সম্পদ। এ দুটি বিষয় দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে চলবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
নাজমুল হুদা নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে দেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনাকেই বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা হিসেবে দেখছেন। তার দৃষ্টিতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বের কারণেই দেশ বড় ধরনের সর্বনাশ থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের সময়ে রাজনীতিতে সাফল্য আসেনি বলে তিনি মনে করছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এই সাফল্য আসবে বলে তার অভিমত।
এক সময়ে বিএনপির অন্যতম নীতিনির্ধারক এই নেতা বলেছেন, বর্তমান বিএনপির নেতৃত্বে ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে। তবে বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাদের কোনোভাবেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য বিএনপি চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগকে নির্বাচনী কৌশল চূড়ান্ত করতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ‘ইউনেস্কোর বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে যোগদান প্রসঙ্গে নাজমুল হুদা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ওই ভাষণের মাধ্যমে শর্ত সাপেক্ষে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ওই ভাষণের প্রেরণা নিয়ে জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৭ মার্চের ভাষণ না এলে দেশ স্বাধীন হতো কি-না সন্দেহ। এই ভাষণ এখনও পুরনো হয়নি। কখনও পুরনো হবে না।
উৎসঃ samakal