saki_mash

এবার কোচের দায়িত্বে মাশরাফি-সাকিব!

আপাততঃ মানে তিন জাতি ক্রিকেট আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজের আগে যে বিদেশি হেড কোচ আসবেন না বা কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবেনা-তা বোঝাই যাচ্ছিল। আর সে কারণেই সহকারি কোচ রিচার্ড হ্যালস্যালের সঙ্গে গত চার বছরের ম্যানেজার ও অভিজ্ঞ খালেদ মাহমুদ সুজনকে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর করে যৌথ কোচিং প্যানেলের মত তৈরি করা হয়েছে।

ভাবা হচ্ছিল, রিচার্ড হ্যালস্যাল ক্রিকেটারদের নিয়ে খাটা-খাটনির কাজটুকু করলেও গেম প্ল্যান, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কৌশল আঁটবেন খালেদ মাহমুদ সুজন। আজ বিকেলে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের কথা শুনেও তাই মনে হলো।

সোমবার বিকেলে ধানমন্ডিতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপে বিসিবি বিগ বস জানিয়ে দিলেন, এই সিরিজে তো বাইরে থেকে কোনো কোচ এখন আসছে না। তিনি বলেন, ‘এটা আমরা মোটামুটি ঠিক করেই রেখেছিলাম। এখন আমাদের যারা আছে, তাদের দিয়েই চলবে। শুধু এই সিরিজটাই। তারপরে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরা বাইরে থেকে একটা কোচ নিয়ে আসবো।’

‘তবে এবার (মানে তিন জাতি ক্রিকেট ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে) বোর্ড থেকে একজন প্রতিনিধি থাকবে। বর্তমান সাপোর্ট স্টাফ যা আছে, তাই থাকছে। পাশাপাশি বোর্ড থেকে আমাদের খালেদ মাহমুদ সুজন থাকবে। ও সবসময় ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতো, সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে কাজ করতো, খেলোয়াড় কোচ ও বোর্ডের মাঝে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতো, সেটা সেই থাকছে। যেহেতু সে থাকছে, তাই তাকে একটা পদ দিয়ে রাখা হচ্ছে।’-বলছিলেন পাপন।

তার মানে যা শোনা যাচ্ছিলো, সেটাই সত্য। পদত্যাগী চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ছাড়া আর যে সব কোচিং স্টাফ আছেন, তারা সবাই থাকবেন। তবে মূল নজরদারি ও খবরদারিটা থাকবে খালেদ মাহমুদ সুজনের হাতে।

তবে এখানেই শেষ নয়। বোর্ড প্রধান আরও কথা বলেছেন। একটি চমকপ্রদ তথ্যও দিয়েছেন। তাহলো খালেদ মাহমুদ সুজন কিংবা রিচার্ড হ্যালস্যাল কোচিং কার্যক্রম পরিচালনায় থাকলেও সত্যিকার কোচের ভূমিকায় থাকবেন মাশরাফি বিন মর্তুজা আর সাকিব আল হাসান।

মাশরাফি আর সাকিব কোচ? অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন নিশ্চয়ই। বিশ্বাস করতেও নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে। তারা তো দলের অধিনায়ক। সাকিব টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটের আর মাশরাফি ওয়ানডে দলের। তারা কোচিং করাবেন কি করে ?

এমন প্রশ্ন হয়তো উঠবে। উঠছেও। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেটাই সত্য। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশকে নিয়ে যে ত্রিদেশীয় সিরিজ হবে সেখানে আর শ্রীলঙ্কার সাথে হোম সিরিজে মাশরাফি আর সাকিব অধিনায়কের পাশাপাশি কোচের ভূমিকায়ও থাকবেন।

প্রস্তুতি কার্যক্রমে এবং মাঠে তাদের চিন্তা-ভাবনা এবং মত অনেক বেশি গুরুত্ব পাবে। আর আজ বিকেলে সে তথ্যটাই জানালেন বিসিবি সভাপতি। নাজমুল হাসান পাপনের ব্যাখ্যা , ‘আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, আসলে দেশের মাটিতে তিন জাতি টুর্নামেন্ট ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে কোচ কে? তাহলে বলবো, এবার কোচ হচ্ছে সাকিব ও মাশরাফি। ওদের উপরই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। সিনিয়র খেলোয়াড় যারা আছে, তাদের উপরই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ওরা বেশ আত্মবিশ্বাসী যে ওরা এই সিরিজটা নিজেরাই সামলাতে পারবে। কাজেই ধরে নেন এবার খেলোয়াড়রাই হচ্ছে কোচ। আমাদের সহকারী কোচ হ্যালসল আছে, সুজন আছে। ওর কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে। এ দুজনই আগাগোড়া চালাবে।’

বোর্ড প্রধান যখন এ কথা বলেন, তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না হেড কোচ নিয়োগ বা দায়িত্ব শুরুর আগের সময়ে মাশরাফি-সাকিবের কাঁধেও থাকবে বাড়তি দায়িত্ব। সেটা কি হুট করে? নাজমুল হাসান পাপনের কথা শুনে জানা গেলো, না। আগেই ঠিক করা ছিল।

তাই তো তার মুখে এমন কথা, ‘গত মিটিংয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলে রাজি হয়েই আমরা এ সিদ্ধান্তে এসেছি। এই মুহূর্তে আমরা অন্তবর্তীকালীন, স্থায়ী কোনো কোচ আনছি না। আমাদের যারা আছে, তারাই করবে। আমাদের সহকারী কোচ যে হ্যালসল আছে, সে আছে কোচিংয়ের দায়িত্বে। এরপরেও যদি আরও কিছু দরকার হয় সুজন আছে। আমার মনে হয় এটা যথেষ্ট। খেলোয়াড়রাও তাই মনে করে।’

এদিকে আজ প্রেসের সামনে আসার আগে মাশরাফি আর সাকিবের সাথে একান্তে কথা বলেছেন বোর্ড প্রধান। কেন কি কারণে দুই অধিনায়কের সাথে বসা এবং একান্তে কথা বলা? জানতে চাওয়া হলে নাজমুল হাসান পাপন যা বলেন, তার সারমর্ম হলো, এ বছর বিশেষ করে সামনের দিনগুলোয় দেশে ও বাইরে প্রচুর খেলা। সেজন্যই মাশরাফি ও সাকিবের চিন্তা-ভাবনাটা জেনে নেয়া।

নাজমুল হাসান পাপন এ নিয়ে বলেন, ‘সাকিব, মাশরাফি দুই অধিনায়কের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। বসার কারণ কয়েকটি। তার মধ্যে প্রথম কারণ নববর্ষ। এছাড়া এ বছরটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে যেমন খেলা আছে, দেশের বাইরেও খেলা আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া সফর আছে। আমাদের এখানে ত্রিদেশীয় সিরিজ হচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় সিরিজ আছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর আমাদের কাটবে। সেজন্য বছরের প্রথম দিন দিনই ওদের সাথে বসে একটু আলাপ করি।’

সেখানে আসন্ন তিন জাতি সিরিজ নিয়েও খোলামেলা কথা হয়েছে। কৌশলগত বিষয়ে দলের দুই সিনিয়র সদস্য মাশরাফি আর সাকিবের চিন্তা -ভাবনা কি? দুই অধিনায়ক কি চাচ্ছেন? তাদের কি কি প্রয়োজন? তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। পাপন বলেন, ‘আসন্ন যে সিরিজ আছে, সেটা নিয়ে কিছু কৌশলগত আলোচনা হয়েছে। ওরা কি ধরনের চিন্তা ভাবনা করছে। ওদের কি প্রয়োজন এবং এখন অনুশীলনে কি ধরনের কাজ হচ্ছে, আরও কিছু লাগবে কিনা। এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

বোর্ড সভাপতির উপরের কথা বার্তায় পরিষ্কার, মাঠে নেতৃত্ব দেবার পাশাপাশি মাশরাফি ও সাকিব কৌশল নির্ধারণ এবং দলের গঠন শৈলিতেও এবার বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে যাচ্ছেন।

চিন্তাটা অবশ্য মন্দ নয়। অনেক দিন ধরে খেলছেন দুজন। অভিজ্ঞতার ভান্ডার অনেক সমৃদ্ধ। খেলেছেন প্রচুর। দেখেছেন অনেক। জানা-শোনাও যথেষ্ট। কৌশল নির্ধারণের পর্যাপ্ত সামর্থ আছে মাশরাফি-সাকিবের। তার প্রয়োগের ক্ষেত্রটা যদি সত্যিই মেলে, তাহলে ক্ষতি কী ?

জাতীয় দলকে কোচিং না করালেও প্রায় এক যুগ ঘরোয়া ক্রিকেটে যিনি ক্লাব পর্যায় ও বিপিএলে মাশরাফি-সাকিবের কোচের ভূমিকায় ছিলেন, সেই লড়িয়ে যোদ্ধা খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথে মাশরাফি-সাকিবের মিশ্রণে ভাল কিছু আশা করাই যায়!

Check Also

অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন মাশরাফি

এমনভাবেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজের শেষ ম্যাচের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin