bnp_upodesta

আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি, উপদেষ্টাদের জানালেন খালেদা

শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে আবারও আন্দোলনে যাবে বিএনপি-দলের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি জানিয়ে দিলেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ জন্য তাদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাতে উপদেষ্টাদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে আগামী নির্বাচনে দলের করণীয় নিয়েও খোলামেলা কথা হয়। এ সময় খালেদা জিয়া এমন আহ্বান জানান বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা।

২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন এবং এক বছর পর সরকার পতনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচার ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারও সেই পুরনো দাবিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে এক বছর আগে তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি তুলে জানান, যথা সময়ে এই সরকারের রূপরেখা দেয়া হবে। কিন্তু বিএনপি নেতারা জানান, এই রূপরেখা দেবেন না তারা, আগের তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে গেছেন তারা।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদেরকে নির্বাচনের জন্য যেমন প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, তেমনি ওই নির্বাচন যদি ২০১৪ সালের মতো শেখ হাসিনার অধীনে হয়, তাহলে আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতেও বলেছেন।’

গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে চেষ্টা তদবিরও শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার, কেউ কেউ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলছেন।

এই বিষয়গুলো নিয়ে উপদেষ্টাদের কথাবার্তা শোনার পর খালেদা জিয়া বিএনপির অবস্থান নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নির্বাচনকালীন সংসদ ভেঙে দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে রেখে কোনো নির্বাচন নয়। এজন্য নির্বাচনের পাশাপাশি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি বাড়াতে হবে।

উপদেষ্টাদের খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি নিজেও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করব। সবাইকে সংগঠনের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।’ জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বলেন, ‘বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসন সার্বিক বিষয়ে আমাদের মতামত নিয়েছেন।’

তিন মাস চিকিৎসা শেষে ১৮ অক্টোবর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০-দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গেও বসেন বিএনপি প্রধান। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার থাকলে ভোটে না যাওয়ার কথা জানান খালেদা জিয়া। শরিক দলের নেতারাও এই অবস্থানকে সমর্থন করেন।

সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রতি উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ

বৈঠকে খালেদা জিয়ার আন্দোলনের প্রস্তুতির জবাবে বিএনপির সাংগঠনিকভাবে ‘দুর্বলতার’ বিষয়টি নিয়ে নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা।

২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে আসে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় আন্দোলন গড়ে তোলার কিছু করতে না পারায় নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন খালেদা জিয়া। ভেঙে দেয়া হয় মহানগর কমিটি।

এরপর গত প্রায় চার বছরে দেশের বিভিন্ন জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলেছে বিএনপিতে। এই পুনর্গঠন নিয়ে আবার বিভেদ, সংঘর্ষ হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। ফলে সাংগঠনিক দুর্বলনাগুলো এখনও রয়ে গেছে। আর নানা সময় দেশব্যাপী কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে অল্প কিছু এলাকায়।

বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিলেন

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার ৭৬ পদের মধ্যে হারুনার রশীদ মুন্নু, ফজলুর রহমান পটল ও আখতার হামিদ সিদ্দিকী মারা গেছেন। বাকিদের মধ্যে ৫৩ জন এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এরা হলেন: উকিল আবদুস সাত্তার, লুৎফুর রহমান খান আজাদ, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আ ন হ আখতার হোসেন, মাজেদুল ইসলাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদিন ভিপি জয়নাল, মনিরুল হক চৌধুরী, মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, এম এ কাইয়ুম, জহুরুল ইসলাম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আবদুর রশিদ, হায়দার আলী, জিয়াউর রহমান খান, তাজমেরী এস ইসলাম, শাহিদা রফিক, গোলাম আকবর খোন্দকার, কাজী আসাদ,

কবির মুরাদ, অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, একরামুজ্জামান, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, নজমুল হক নান্নু, তাহমিনা রুশদীর লুনা, এনামুল হক চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, সুকোমল বড়ুয়া, বিজনকান্তি সরকার, আবদুল হক, তৈমূর আলম খন্দকার, কামরুল মুনির, বোরহান উদ্দিন, আবদুল বায়েছ ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, শাহজাদা মিয়া, এস এম ফজলুল হক, এম এ লতিফ, আবদুল কুদ্দুস, আবদুল মান্নান তালুকদার, ফরহাদ হালিম ডোনার, খন্দকার মুক্তাদির আহমেদ, মামুন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল আলম, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস

আওয়ামী লীগে যোগদান নিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, রাজনীতিতে কিছুই নাকচ করা যায় না

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নির্বাচনী জোট বাঁধছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে- সমসাময়িক রাজনীতিতে বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে এমন গুঞ্জন। গত শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাগরিক সমাবেশে তার উপস্থিতি সকলের সবিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

কাদের সিদ্দিকী অবশ্য এ নিয়ে কিছুই বলতে চাচ্ছেন না এখনই। তার ভাষায়, সময়ই নিয়ামক শক্তি। তা ছাড়া রাজনীতিতে কিছুই নাকচ করা যায় না। রাজনীতিতে শেষ কথা বলেও কিছু নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নেতা। তার জন্মও আওয়ামী লীগে। তবে সেই আওয়ামী লীগের চরিত্রে প্রশ্নবিদ্ধ পরিবর্তন আসায় দুঃখবোধ রয়েছে তার।

সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচনী জোট গঠন প্রসঙ্গে তাকে নিয়ে অনেকে অনেক কিছু ভাবতেই পারেন। তার রাজনীতিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর উজ্জ্বল উপস্থিতি। আবার মতের অসম্মান কিংবা আসমান-জমিন পার্থক্যেও থাকবেন না। সেই সঙ্গে একদিন যারা পিঠের চামড়া তুলে নেওয়ার কথা বলে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছেন, তাদের সঙ্গেও যাবেন না তিনি।

আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা এখনও তাকে ভালোবাসেন বলে মনে করেন কাদের সিদ্দিকী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক অনুভূতির প্রতিও বিশাল শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে তার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে খুবই ভালো জানেন। তার মতামতকে গুরুত্ব দেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঘা সিদ্দিকী হিসেবে খ্যাত কাদের সিদ্দিকী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এ জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর ভারতে নির্বাসনে থাকতে হয়েছিল তাকে। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রথম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব বীরউত্তম পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান এই নেতা টাঙ্গাইল-৮ আসনের সাবেক এমপি।

নির্বাচনী জোট গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ডাকলে সাড়া দেবেন কি-না- জানতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, সেটা তখন দেখা যাবে। আর জোট হলেও দলীয় প্রতীক ‘গামছা’য় বড্ড ভালো লাগা এই নেতার। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি আমার রাজনৈতিক দলকে গলা টিপে হত্যা করতে পারব না। এ ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্যবোধ তো থাকতেই হবে।’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আরও জানিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির প্রতিপক্ষ নন। তবে নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা করছেন। সেই জোট আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির বাইরে থেকেও হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও ভারসাম্য চাই। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করি। এটা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের জন্যও বড্ড প্রয়োজন।’

ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে কোনো বিষয়ে একত্রিত হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর না হতে পারাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সরকার শুধু নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করার মতো কেউ নেই। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়ার সাহস হারিয়েছেন। অন্যরা প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে ব্যস্ত। এতে জাতির কোনো মঙ্গল হচ্ছে না।

কাদের সিদ্দিকী প্রশাসনে দলীয়করণের বিষয়টিকে সরকারের ‘খারাপ কাজ’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়া ভালো নয়। বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে না অথবা কর্মসূচি পালন করতে পারছে না- এ দুটোই বিপজ্জনক। তিনি আরও বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। তার গাড়িবহরে যদি আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়ে থাকে, তাহলে তা মোটেই ভালো কাজ নয়। বিএনপি যদি নিজেরাই হামলার ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তাহলে সেটা আরও বিপজ্জনক।

কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, গ্রামের মানুষ খুব কষ্টে আছে। সরকার সমর্থকরা গ্রাম পর্যায়ে যেসব অন্যায় কাজ করছে, তা কল্পনার বাইরে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পেরোনোর বেলায় আওয়ামী লীগের জন্য বিএনপি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ‘ইউনেস্কোর বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘মতের অমিল থাকলেই যে সেখানে যাওয়া যাবে না- তা কিন্তু নয়। আর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আমাদের। নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির বাণী। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের জাতীয় সম্পদ। তবে এখন যারা বাড়াবাড়ি করছে, ৭ মার্চ তাদের নয়।’

সমকাল

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin