alig_bnp

৫ জানুয়ারি ঘিরে হঠাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ !

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপুর্তির দিন আগামী ৫ জানুয়ারি। এই দিন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদল বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে। এনিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগ রাজধানীসহ সারাদেশের মাঠ দখলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপযাপন পালন করবেন।

অপরদিকে বিএনপি এই দিনকে ’গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসাবে পালন করবে। ঢাকায় বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশ এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে কালোপতাকা হাতে ’শো-ডাউন’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের নেতারা বলছেন, তারা এই দিনকে ঘিরে কোনো সংঘাতে যেতে চান না। সারাদেশে মাঠ দখলে রাখবে আওয়ামী লীগ

দশম সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তির দিন আগামী ৫ জানুয়ারি রাজপথসহ সারাদেশের মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দিনটিকে সামনে রেখে যাতে বিএনপি-জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি কোনো ধরনের নাশকতা ও সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সারাদেশেই বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপযাপনে দিনটিতে সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকা মহানগরের দুটি স্থানে সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রা করবে আওয়ামী লীগ।

৫ জানুয়ারি বেলা ৩টায় রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ এতে উপস্থিত থাকবেন।

রাজধানী অলিগলিসহ দুই শতাধিক স্থানে দিনভর সতর্ক অবস্থানে থেকে বিজয়োত্সব পালন করবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ। এসব স্থানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাগানিয়া গান সারাদিন মাইকে বাজানো হবে।

শোভাযাত্রাসহ রাজধানীর দুই সমাবেশে অগণিত জনতার ঢল নামানোর টার্গেট নেওয়া হয়েছে। যে কোনো ভাবেই হোক এদিন রাজপথ দখলে রাখবে আওয়ামী লীগ।

দিনটিকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি মেয়াদ শেষের বছর হওয়ায় নানাভাবে এটি এবার গুরুত্ব পাচ্ছে। এছাড়া এর আগের বছরগুলোয় দিনটিকে ঘিরে মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার নজির রয়েছে।

তাই সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা কেউ উড়িয়ে দিচ্ছে না। এদিকে দিনটিকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও বেশ সতর্ক। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’। গণতন্ত্র প্রগতি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা ও সাহসী পদক্ষেপের কারণেই ২০১৪ সালের এদিন বিএনপি-জামায়াত জোট চক্রের সংবিধানবিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে দেশের জনগণ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত করে।

নির্বাচন বানচালে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, সন্ত্রাস, লুটতরাজ, ভাঙচুর, বৃক্ষনিধন ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় দেশের জনগণ।

তিনি আরো বলেন, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র, কর্নফুলী ট্যানেল, পায়রা সমুদ্র বন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে গুমদুম পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্প, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত মেগাপ্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রামে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অগ্রগতির এক অনন্য মাইল ফলক।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি রবিবার এক বিবৃতিতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ঘোষিত কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য দেশের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

একইসাথে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে গণতন্ত্রের বিজয়ের এই ঐতিহাসিক দিনটি উত্সবমুখর পরিবেশে উদযাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, শুধু নতুন বছরের ৫ জানুয়ারিই নয়, বছরের শুরু থেকে মাসব্যাপী মাঠে থাকতে তৃণমূলে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত মঙ্গলবার থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস উপলক্ষে সারা দেশে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কালোপতাকা শোডাউন করবে বিএনপি

আগামী ৫ জানুয়ারি বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। ঢাকায় বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশ এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে কালো পতাকা হাতে ‘শো-ডাউন’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তারা ওইদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির বদলে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি নামে প্রায় অপরিচিত একটি দলকে। তারা সেখানে ‘জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা’ শীর্ষক সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে।

এই নিয়ে বিএনপি নেতারা গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। তারা জানিয়েছেন ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশ করবেন। দলের নেতারা আজ পুলিশের সাথে দেখা করে এনিয়ে আলোচনা করতে চান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান না পেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সমাবেশ করতে চান তারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের সমাবেশ করতে না দেয়ার অজুহাত হিসাবে একটা অপরিচিত নামগোত্রহীন ইসলামিক পার্টিকে সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। এটা সাজানো নাটক। এতেই প্রমাণিত হয় এই সরকার আসলে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। হত্যা করে চলেছে।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের পরিবর্তে সরকারের বানানো একটি সাইনবোর্ড সর্বস্ব পার্টিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। আমরা এটা নিয়ে চেয়ারপারসনের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব। রিজভী বলেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফাভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। বাকি আসনগুলোয়ও শতকরা ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। এই প্রহসনের নির্বাচনের দিন বিএনপি প্রতি বছর অনাস্থা জানিয়ে আসছে। এবছরও অনাস্থা জানাবে। এই দিন সারাদেশে কালো পতাকা হাতে মানুষ প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ বিক্ষোভ করবে। জেলা, মহানগর, উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচি পালিত হবে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী জানান, আজ মঙ্গলবার তারা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দফতরে যাবেন। তারা সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার আশা করছেন। যদি অনুমতি না মেলে তা হলে দল সিদ্ধান্ত নিবে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তারা কোনো সংঘাতে যেতে চান না। ফলে ৫ জানুয়ারি ঘিরে বিগত তিন বছর সারাদেশে যে সংঘাত ও সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, এবার তা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এখনই সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে— এমন কর্মসূচিতে গেলে আবার নেতা-কর্মীদের হয় জেলে যেতে হবে, নয়তো পালিয়ে বেড়াতে হবে। তাই জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত সংঘাতপূর্ণ কোনো কর্মসূচিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আছে।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার গতকাল বলেন, বিএনপির আগে আবেদন করায় ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দীতে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে বিএনপির আবেদনের একটি চিঠি সোমবার পেয়েছি। কিন্তু একইদিন সমাবেশের অনুমতির জন্য বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টির আবেদন পেয়েছি গত ১২ ডিসেম্বর। আগে আবেদন করায় ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টিকেই সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে একইদিন সমাবেশ হওয়ায় বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা ইছমাইল হোসেন গতকাল জানান, তারা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পরপরই সমাবেশের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

এদিকে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিএনপিকে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। এই ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি ৫ জানুয়ারিতে কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে দলের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।

ইত্তেফাক

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin