আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার কমিটি গঠন করছে বিএনপি। কেন্দ্রভিত্তিক এসব কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এসব কমিটি আগামীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনেও রাজপথে সক্রিয় থাকবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, মাসখানেক ধরে কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে
দলের পক্ষে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন যারা, তারাই মূলত কেন্দ্রের নির্দেশে কমিটি গঠনের কাজটি করছেন।
প্রসঙ্গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রায় ৪০ হাজার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের কথা ভাবছে। ইসি আগামী ৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রের সংখ্যা চূড়ান্ত করবে।
সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ একাধিক নেতাকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ তদারকি করতে দেখা গেছে। এর পর সারাদেশে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এক মাস ধরে এ কার্যক্রম চলছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি পূরণ হলে আমরা নির্বাচনে যাব। সেটি বিবেচনায় রেখে দাবি পূরণে আন্দোলনের প্রস্তুতি যেমন চলছে, তেমনই চলছে নির্বাচনে গেলে ফল যেন ছিনিয়ে না নিতে পারে, সে প্রস্তুতিও।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু আমাদের সময়কে বলেন, ভোট কেন্দ্রভিত্তিক যে কমিটি হচ্ছে, তা কি কাজে লাগবে তা নির্ভর করবে দলের সিদ্ধান্তের ওপর। যদি আন্দোলনের জন্য হয়, তা হলে শহর-গ্রাম সর্বত্র একযোগে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আর যদি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তা হলে তা ভোটের প্রচার ও ভোটের ফল বুঝে নেওয়াসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, আন্দোলনের চেয়ে নির্বাচনের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দল। পরিস্থিতি বাধ্য না করলে আমরা আন্দোলনে নাও নামতে পারি। তাই নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রস্তুত করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। সেদিন কেন্দ্রে-কেন্দ্রে পাহারা দিতেই কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিগুলো করা হচ্ছে। দলের হাইকমান্ড থেকে এসব কমিটির কাজ তদারকি করা হবে।
সম্প্রতি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলাপকালে বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, নির্বাচনের পাশাপাশি আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। নেতাকর্মীদের সেই মানসিকতা ও সাহসও রয়েছে।
চলতি সপ্তাহে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষনেত্রী। সেই রাতেই দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তের কথা সবাইকে অবহিত করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির নীতিনির্ধারণ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিরোধে যে আন্দোলন হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের পাশাপাশি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও থানার ভিত্তিতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোরও কমিটি গঠনে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে বিএনপি আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দিন থেকে এই আন্দোলন আরও জোরদার করার চিন্তা করছে দলটি।
জানা গেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি ইস্যুতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কথা রয়েছে। খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া, না যাওয়া নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে মতের অনৈক্য রয়েছে। সেটি কাটিয়ে উঠে কীভাবে দলকে নির্বাচনমুখী করা যায়, বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হবে। দলটির নেতারা মনে করেন, নির্বাচনে যেতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি ঠিক করতে হবে বিএনপির। সেসব দাবি নিয়ে কথা বলতে হবে বিভিন্ন ফোরামে এবং কূটনৈতিক পর্যায়েও। দাবিগুলো সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করতে স্থায়ী কমিটি এ আলোচনায় বসবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ে আন্দোলনের জন্য বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর পাশাপাশি সমমনা অন্যান্য দলের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে। আশা করি, এবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত আছি বলেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চাইছি।
উৎসঃ আমাদের সময়