দেশের আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করবে বিএনপি। এ জন্য রাজধানীর দুটি স্থানে অনুমতি চেয়েছে দলটি।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। এ জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও নয়াপল্টনের পার্টির কার্যালয়ের সামনে অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ডা. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এদের মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক রয়েছেন।
খালেদা জিয়াকে ছাড়া আমরা কোনো ভোটে অংশ নেব না: জেনারেল ইবরাহীম
‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চায় জোট। আর তাতে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা করে। আমরা নির্বাচনমুখী দল, তাই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। তবে খালেদা জিয়াকে ছাড়া আমরা কোনো ভোটে অংশ নেব না।’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম (বীর প্রতীক)।
বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কল্যাণ পার্টি আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন (বীর বিক্রম) বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই মিথ্যা ও সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে ।
প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায় বলেই বর্তমান সরকার তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে, উল্লেখ করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘দুই কোটি টাকার আত্মসাতের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা তো এখন ছয় কোটি টাকা হয়েছে। তাহলে টাকা আত্মসাৎ হলো কোথায় থেকে? মূলত খালেদা জিয়াকে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে।’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলা একটা অজুহাত। মূলত খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের প্রধান সমস্যা। কারণ খালেদা জিয়া বারবার দেশের যেকোনো জায়গায় পাঁচটি আসনে নির্বাচন বিজয়ী হয়েছেন। তিনি কখনো পরাজিত হননি। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেটা পারেননি।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার নাকি অনেক উন্নয়ন করেছেন। শুনেছি কেরানীগঞ্জে একটি আধুনিক কারাগার নির্মাণ করেছেন। বেগম জিয়াকে সেখানের একটা কক্ষে দিলে তো পারতেন। তিনিও আপনাদের উন্নয়নের কিছুটা ভাগ ভোগ করতেন। তাকে অন্ধকার কারাকক্ষে, স্যাঁতস্যাঁতে কারাকক্ষে কেন রাখা হয়েছে?’
তিনি বলেন, ‘কত নিষ্ঠুর প্রতিহিংসা পরায়ণ সরকার। বেগম জিয়াকে একটা ডিভিশন পর্যন্ত দেয় নাই। একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি জেলে গেলে তিনি সরাসরি ডিভিশন পান। কোর্টের কোনো আদেশের প্রয়োজন হয় না। সাবেক এমপি সাবেক মন্ত্রী সবাই ডিভিশন পান। আমিও সাবেক মন্ত্রী হিসেবে জেল খেটেছি সরাসরি ডিভিশন পেয়েছি। আমাদের নেত্রী কেন ডিভিশন পাবেন না। তিনি চার দিন অপেক্ষা করার পর ডিভিশন পেয়েছেন।’
মেজর হাফিজ বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করে। আমরা কখনো জ্বালাও-পোড়াও ভাংচুর করিনি। সরকারি দল নাশকতা করে বিএনপির ওপর মিথ্যা মামলা দেয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও আওয়ামী লীগ কীভাবে নৈরাজ্য করেছে, তা দেশের মানুষ ভালো করেই জানে।’
মেজর হাফিজ আরো বলেন, ‘বিএনপি সব সময় শান্তিপূর্ণ কার্যকালাপ করে। বিগত নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সহিংস কার্যকলাপ চালিয়েছে। বিএনপি ভদ্র রাজনৈতিক আচরণের দল। বেগম জিয়ার আচরণে তা প্রমান হচ্ছে।’
ওবায়দুল কাদের মতামতের ভিত্তিতে বিএনপির কোন জনপ্রিয়তা নেই। তাহলে বেগম জিয়ার রায়ের আগেই কেন রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশ পথে চৌকি বসিয়েছেন। কাকপক্ষীও শহরে আসতে দেন নাই কেন? প্রশ্ন তুলেন বিএনপির এই নেতা।
বর্তমান সরকার আবারো একতরফা নির্বাচন করতে চায় অভিযোগ করে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘কিন্তু আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো হবে না। দেশের মানুষ বাঁধভাঙা উল্লাসে ধানের শীষে ভোট দিয়ে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানাবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খান, ২০ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর মহাসচিব গোলাম মোস্তফা, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শাহিদুর রহমান তামান্না, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল মোল্লা, যুব কল্যাণ পার্টি ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কিরন প্রমুখ।