২০ দলীয় জোটের বৈঠক – খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত

আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ দলীয় জোট। শুক্রবার (৬ এপ্রিল) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সন্ধ্যা ৭টায় বৈঠক শুরু হয়। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বৈঠকে শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোট নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ম্যাডাম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করছি। তিনি আপনাদেরকে সালাম জানিয়েছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত ২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতা জানান, জোটের ঐক্য ধরে রাখার স্বার্থেই গাজীপুর ও খুলনায় বিএনপির প্রার্থীকে জোটগতভাবে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

দুই সিটির জন্য ২০ দলীয় জোটের নেতাদের নিয়ে পৃথক সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। তারা প্রচারণা থেকে শুরু করে সামগ্রিক নির্বাচনী কর্মকাণ্ড সমন্বয় করবেন। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর এই সমন্বয় কমিটির প্রধান ও সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে।

বৈঠকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শরিক জামায়াতে ইসলামী মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে, বিষয়টি আলোচনায় আসে। দুটি সিটিতে জামায়াতের প্রার্থীদের প্রচার অব্যাহত আছে, ফখরুল জামায়াত নেতা আব্দুল হালীমকে হাস্যোজ্বলমুখে বলেন, ‘আপনাদের প্রার্থীরা ভালোই প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখছেন।’

এসময় হালিম ফখরুলকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘জোটের স্বার্থে জামায়াত সব ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২০ দলকে আরও শক্তিশালী করবে।’

এ সময় জোটের পক্ষ থেকে দলটিকে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে জামায়াত তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি তাদের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে মত দেন।

এছাড়া বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আরও জোরদার এবং তাতে জোটের শরিক দলগুলোর সক্রিয় হওয়ার আহবান জানানো হয়।

জোটের বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের চেয়ারম্যান মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাগপার রেহেনা প্রধান, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সৌদ, লেবার পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, অপর অংশের এমদাদুল হক চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মুনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে ওলামার মহিউদ্দিন ইকরাম, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ।

এর আগে শুক্রবার পৌনে আটটার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জোটের বৈঠক শুরু হয়। রাত ৯টার দিকে বৈঠকটি শেষ হয়। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্য নির্বাহী সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, আসন্ন খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও গাজীপুর মহানগরে জামায়াতের সিটি আমির মাওলানা সানাউল্লাহকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত ছিলো। এ বিষয়ে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি ও দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম জানান, দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি জোটের সিদ্ধান্ত জানাবেন।

জাতীয় পার্টি (জেপি)-এর মহাসচিব আব্দুল মতিন সাইদের দাবি, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী দেওয়া নিয়ে ২০ দলীয় জোটের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।’

ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘প্রার্থী প্রত্যাহারে বিষয়টি তাদের দলীয় বৈঠকে আলোচনা করে ২০ দলীয় জোটকে জানাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে জামায়াত।’ গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান গোলাম মোস্তফা।

জোটের শরিক মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জেনারেলি সিদ্ধান্ত হয়েছে আমাদের প্রার্থীই দুই সিটিতে প্রার্থী হবে। তবে দু’একজন আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাদের সঙ্গে কথা বলব। সর্বোপরি ২০ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবেই সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে।’

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin