হারের কারণ জানলেও বলবেন না ‘বোবা’ ঝন্টু

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় পরাজয়ের কারণ দুই এক দিনের মধ্যে সবাই জেনে যাবে জানিয়ে এ নিয়ে এখন কিছু বলতে চান না ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু। বলেছেন, তিনি এ ক্ষেত্রে বোবা (বাকশক্তিহীন) হয়ে গেছেন। তাই কিছু বলবেন না।

আলোচিত নির্বাচনে ভোটের পর দিন শুক্রবার রংপুরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন রংপুর আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে এই নেতা। এ সময় বৃহস্পতিবারের ভোট নিয়ে কথা বলেন তিনি। বলেন, রংপুরের উন্নয়নে নবনির্বাচিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পাশে থাকবেন তিনি। সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।

এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোস্তফা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯। আর ঝন্টু পেয়েছেন ৬২ হাজার চারশ ভোট। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে ঝণ্টু এক লাখ ছয় হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। আর তখন মোস্তফা তার চেয়ে প্রায় ৩০ হাজার ভোট কম পান।

রংপুরের ভোটে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টুর পরাজয়ের বিষয়টি এতদিন ছিল অস্বাভাবিক ঘটনা। পৌরসভা, উপজেলা, সংসদ নির্বাচন বা সিটি করপোরেশন ভোটে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়েছেন অনায়াসেই। ঝণ্টু কখনও ভোটে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির হয়ে, কখনও আওয়ামী লীগের হয়ে। প্রতিবারই বিজয়ের মালা গলায় পড়েছেন। এ থেকেই এটা প্রমাণ হয়েছে, জনগণের মধ্যে তার কতটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

ডাকসাইটে সেই নেতার ওপর এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আস্থা রেখেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তিনি এবার আর ভোটারদের মন জয় করতে পারেননি।

এবার ঝণ্টু হেরে যেতে পারেন, নির্বাচনী এলাকায় বলাবলি হচ্ছিল আগে থেকেই, কিন্তু তাই বলে তিনি প্রায় এক লাখ ভোটে হারবেন-এটা কল্পনারও অতীত ছিল তার সমর্থকদের কাছে। কিন্তু কার্যত হয়েছে তাই। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে যত ভোট পেয়েছিলেন এবার তার ৬০ শতাংশ ভোটও পাননি ঝণ্টু।

বৃহস্পতিবার রাতে সিটি নির্বাচনের ফল সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরই ঝণ্টুর এত বড় পরাজয়ের কারণ নিয়ে নানাজন বলছেন নানা কথা। ঝণ্টুর কাছেই বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কেন পরাজিত হয়েছে, আমার পরাজিত হবার পেছনের কারণ কী এসব আমি এখন বলতে চাই না, আপনারা সাংবাদিক। আমার বিশ্বাস আপনারাই ভালো জানেন, দুই একদিন পর স্পষ্টভাবেই জানবেন। আমি এখন বোবা, মুখ খুলতে চাই না।’

জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন ঝণ্টু। বলেছেন, ‘আমি আগেই বলেছি ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে, ভোটাররা তাদের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে যে ফলাফলই হোক না কেন, আমি মেন নেব।’

‘আমি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সাথে (জাতীয় পার্টির বিজয়ী প্রার্থী) টেলিফোনে কথা বলেছি, তাকে স্বাগত জানিয়েছে। আমি আগামীকাল (শনিবার) সকাল ১১টায় তার বাসায় যাব তাকে ফুলের মালা পরিয়ে আসব। আমরা রংপুরের মানুষ। রংপুরের উন্নয়নের এক সাথে কাজ করব।’

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গার নাম উল্লেখ না করে তার প্রতি ক্ষোভও জানান ঝণ্টু। তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি, আমার পাড়ার এক ছোট ভাই সরকারের প্রতিমন্ত্রী। তার উত্থান কীভাবে হলো সে ভুলে গেছে। গত বৃহস্পতিবার আমাকে দুনীতিবাজ বলেছে। আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি। তার উচিৎ তার নিজের সম্পর্কে জানা, আমি কীভাবে তাকে উত্থান করিয়েছি।’

মেয়র নয়, ভাই মোস্তফা হতে চান জাপা নেতা

শুক্রবার সকাল থেকেই নেতা-কর্মী সমর্থকদের ফুলে ফুলে সিক্ত হন নতুন মেয়র মোস্তফা। এ সময় তিনি দায়িত্ব নিয়ে কী কী কাজ করবেন সেসব বিষয়ে নগরবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

মোস্তফা বলেন, তিনি মেয়র হিসেবে পরিচিত হতে চান না। আগের মতোই ভাইয়ের মতো নগরবাসীর পাশে থাকতে চান।

‘আমি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম, তখনও নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে চলেছি। দেড় বছর উপজেলার চেয়ারম্যান থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেই। পরাজিত হলেও পরের দিন থেকে নগরবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছি। দিনরাত তাদের পাশে থেকেছি। এখন মেয়র মোস্তফা নয়, মোস্তফা ভাই হিসেবে নগরবাসীর পাশে থাকতে চাই। সেবা করতে চাই তাদের।’

মেয়র হিসেবে কোন কাজগুলো করতে চান তার বর্ণনাও দেন মোস্তফা। বলেন, ‘আমার নির্বাচনী কমিটমেন্ট আছে। আমি প্রথম কী কাজ করব, দ্বিতীয় কী কাজ করব এই বিষয়গুলো আমি উপস্থাপন করেছিলাম। আমার পার্টির প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা নিয়ে প্রথমেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজ শুরু করব।’

‘এরপর দ্বিতীয় কাজ করব নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করা। এ জন্য নগরীর ১৬ কিলোমিটারের ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খালকে দখল মুক্ত করে পুনরায় তার ঐতিহ্য ফিরে আনব।’

‘এরপর নগরীতে ফুটপাত দখল মুক্ত করা, যানজট নিরসন, অটোরিক্সার জন্য আলাদা লেন করাসহ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করব। শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রত্যেকটা খাতওয়ারী উন্নয়নের পরিকল্পনা আছে।’

ঢাকাটাইমস

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin