bnp-flag

হঠাৎ ধরপাকড়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক

হঠাৎ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অন্তত ৩০০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পুরোনো মামলা সচল করার পাশাপাশি নতুন করে নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগ এনে মামলা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ১ সেপ্টেম্বর দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় বড় জনসভা করার পর থেকে ধরপাকড় বেড়ে গেছে। তাঁরা জানান, ঈদুল আজহার পর থেকেই বিভিন্ন জেলায় টুকটাক ধরপাকড় চলছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে ধরপাকড়ের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আবারও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারি সূত্রগুলো জানায়, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের পর সরকার মনে করছে, দলটি সংগঠিত হচ্ছে। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেকোনো সময় নেমে পড়তে পারে। এ কারণে বিএনপি যাতে সংগঠিত হতে না পারে, সে জন্য বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে হিসাবে নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি। সবার দৃষ্টি এখন নির্বাচনের দিকে। বিএনপিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শান্তিপূর্ণভাবেই সারা দেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। অনেক দিন পর এই কর্মসূচিকে ঘিরে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অনেকটা জেগে উঠেছেন। যদিও অনেক জায়গায় পুলিশের বাধা ও ক্ষমতাসীনদের হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

জানা গেছে, দলটির নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচনের আগে একটি স্বল্পমেয়াদি আন্দোলনে নামা। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামতে সাংগঠনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে পুলিশ সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ সদস্য প্রথম আলোকে বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা গোপনে সংগঠিত হচ্ছেন বলে পুলিশের কাছে খবর রয়েছে। এসব খবরের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ নজর রাখতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে দেশের কোনো কোনো এলাকায় ধরপাকড় করা হয়েছে। তবে কত লোককে ধরা হয়েছে, সে তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পুলিশের জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানার দাবি, কোনো ধরপাকড় হচ্ছে না। তবে মাদকবিরোধী অভিযানে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গত ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে ১ হাজার ৫৫৪ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ১৮৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের হিসাবে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত সংগঠনের ৩০৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর ঈদুল আজহার পরদিন থেকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭০৯ জনকে। এর মধ্যে গত শনিবার রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৮ জন, সুনামগঞ্জে ৩২, কুষ্টিয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মী মিলিয়ে ৫৮, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় আমরা একটা ভালো জনসভা করলাম। সারা দেশেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘিরে কর্মী-সমর্থকেরা সক্রিয় হয়েছে। সরকার এটাকে ভয় পায়। সেই ভয় থেকে গ্রেপ্তার শুরু করেছে। এর উদ্দেশ্য বিএনপিকে বাইরে রেখে আরেকটি নীলনকশার নির্বাচন করা। কিন্তু সেটা জনগণ হতে দেবে না।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সংগঠনের অন্তত ২০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৩০ আগস্ট ছাত্রদলের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পরদিন সোনারগাঁ থানার ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ পৌর ছাত্রদলের সভাপতি আবিদ আহমেদ, নড়াইল জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক এস এম গিয়াস উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবায়েতসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, বিভিন্ন জেলায় গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলায় বিএনপির শত শত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ নাশকতার অভিযোগ এনে মামলা করেছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বগুড়ার শাজাহানপুর থানার মামলা উল্লেখযোগ্য।

জানা গেছে, পীরগঞ্জ থানা বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল করার পর পুলিশ ৩৫ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ এনে মামলা করে। পুলিশের উপস্থিতিতে ওই মিলাদ মাহফিল হয় বলে বিএনপির নেতারা জানান।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরদিন রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে পুলিশ নাশকতার অভিযোগে মামলা করে। জানা গেছে, শনিবার ঢাকার জনসভায় এই দুই নেতাসহ মামলায় উল্লিখিত নেতা-কর্মীরা দলীয় সমর্থকদের নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন।

আর বগুড়ার শাজাহানপুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরদিন উপজেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে পুলিশ বিস্ফোরক ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ ৩০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করে। তাঁরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে পুলিশ অভিযোগ আনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এখন দরকার ছিল নির্বাচনের পরিবেশটা তৈরি করা, পরিবেশটা সুন্দর করা। কিন্তু সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে, তারা পরিস্থিতিটাকে ভীতিকর করতে চাইছে। এ লক্ষণ শুভ নয়।’

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin