স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিশেষ এমআরআই করাতে খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ করেছে বিএনপি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রয়োজনে জেলকোডের বাইরে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। চিকিৎসকেরা যেভাবে পরামর্শ দেবেন, সেভাবেই তাঁর চিকিৎসা হবে। তিনি বলেছেন, বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার বিশেষ এমআরআই করানোর জন্য তাঁকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ। এরপর আলোচনা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এ মন্তব্য করেন বলেন।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান নজরুল ইসলাম খান এবং হাফিজউদ্দিন আহমেদ। সেখানে তাঁরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেন এবং তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার আহ্বান জানান। তাঁরা খালেদা জিয়ার বিশেষ ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানান।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়াকে একটি বিশেষ এমআরআই করানোর জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেন বিএনপি নেতারা। তিনি বলেন, জেলকোড অনুযায়ী খালেদা জিয়ার যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তার সবই তিনি পাচ্ছেন। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিলে এর বাইরে গিয়েও চিকিৎসা করানো হবে। ইউনাইটেডে এমআরআই করার বিষয়েও তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) আগে থেকেই কতগুলো রোগে ভুগছেন। আমাদের চিকিৎসকেরা তাঁর পরীক্ষা করেছেন। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে আমরা তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেগুলো আমরা একের পর এক পালন করছি। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া কয়েকজন চিকিৎসকের কথা বলেছিলেন। এসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাঁর চিকিৎসাসেবা দিতেন। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিনি তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য জানিয়েছিলেন। তাঁর চাওয়া মতো সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, যেসব চিকিৎসক তাঁকে সেবা দিতেন, সে সমস্ত চিকিৎসক তাঁর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা আরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেছেন। এর মধ্যে একটি পরীক্ষা হলো এমআরআই। এটি করা একটু কঠিন। খালেদা জিয়ার কৃত্রিম হাঁটু সংযোজিত আছে। এই ধরনের মেটাল যাঁদের থাকে, এমআরআই তাঁরা করতে পারেন না।

প্রতিনিধি দলের আবেদনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ এমআরআই করতে হবে। এটাই আমাদের জানিয়ে গেছেন যে, এই এমআরআই ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে। সে জন্য তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যেতে রিকোয়েস্ট করেছেন।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কবে নেওয়া হবে, জানতে চাইলে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, ‘ওনারা (বিএনপি নেতারা) তো বলে গেলেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। আমাদের ডাক্তাররা তো বসে নেই, ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন।’ খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হবে কি না-এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) ঘন ঘন বিদেশে গেছেন, এমন নজির আছে? নাই। তিনি দেশেই চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা চিকিৎসা করছেন।’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি মাথায় রেখে গত ২৯ মার্চ ঢাকার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের একটি দল তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। পরে ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের পরামর্শে ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন দোতলা থেকে নামতে পারছেন না। তাঁর উন্নত চিকিৎসা দরকার। এ কারণে তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা।’ তিনি বলেন, আমরা বলেছি যে, ইউনাইটেড হাসপাতালে এর আগেও ওনার পরীক্ষা হয়েছে এবং সেখানে যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং চিকিৎসকদের ওপর ওপর খালেদা জিয়ার আস্থা আছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ইতিবাচক জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কারা মহাপরিদর্শককে ডেকে এনেছিলেন। তাঁর সামনেই কথা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেখানে খালেদা জিয়ার ভালো চিকিৎসা বা পরীক্ষা করা সম্ভব, সেখানে চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর সম্মতির কথা জানিয়েছেন। এখন কারা মহাপরিদর্শক কী ব্যবস্থা নেন, এটা দেখার অপেক্ষা করছেন তাঁরা। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আজকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

খালেদা জিয়ার প্যারোল মুক্তি নিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই প্রশ্ন আসে কেন? আমি বুঝি না। তাঁর (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা এখানকার হাসপাতালেই করার কথা আমরা বলেছি। এখানে চিকিৎসা হলে অন্য কোথায় নেওয়ার প্রশ্ন আসে কেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কেউ এই প্রশ্নটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তুলছেন বলে আমি মনে করি। বাইরে তাঁকে পাঠানোর কোনো প্রশ্নই আসছে না।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাব অথবা বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে আগামী ২৫ এপ্রিল মানববন্ধন কর্মসূচি ও ১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশসহ অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ যাতে বাধা না দেয় সে জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতাও চেয়েছেন নজরুল ইসলাম খান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে বন্দী আছেন খালেদা জিয়া।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin