bnp

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একদফা আন্দোলনের নীতিগত সিদ্ধান্ত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার রাত সোয়া ৯টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়ে চলে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও মির্জা আব্বাস।

এর আগে ২৭ জানুয়ারি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।

শনিবার দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার পর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলো।

বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতেই মূলত দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বৈঠকে মামলার সম্ভাব্য রায় ও নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। রায়ে বেগম জিয়ার কিছু হলে এবং ক্ষমতাসীনরা বিএনপির নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি না মানলে একদফা আন্দোলনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়েও আওয়ামী লীগ আগের অবস্থানেই রয়েছে। ফলে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

এর আগে শনিবার জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলছে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে এত আগে প্রচারের কারণ কী? নৌকা এমন ডোবা ডুবছে, যে তোলার জন্য এত আগে ভোট চাইতে হচ্ছে? হাত তুলে ওয়াদা করাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, হাত তুলে ওয়াদা করিয়েও ডুবন্ত নৌকা ভাসানো যাবে না।’

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিএনপির কোনো ভয় নেই। বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন আছে, পুলিশ আছে, সশস্ত্র বাহিনী আছে। এ দেশের জনগণ আছে। দেশের বাইরে যাঁরা আছেন, তারা আছেন। কাজেই বিএনপির কোনো ভয় নেই, ভয়টা আওয়ামী লীগের।’

এসময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারের তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় খালেদা জিয়া বলেন, সরকার প্রশাসনকে দলীয় নেতাকর্মীদের মতো ব্যবহার করছে। তারা মনে করে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়া যায়। কিন্তু প্রশাসন যদি একটু সুযোগ পায়, তাহলে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। কেননা, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তিনি আরও বলেন, পুলিশকে বাধ্য করা হচ্ছে অন্যায় ও দলীয় কাজ করতে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘গুম, খুনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ জেগে উঠবে, ২০ দল জেগে উঠবে। সকল রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। আজ দেশের এই অবস্থায় জাতীয় ঐক্য অনেক বেশি প্রয়োজন। আমরা কে কী পেলাম, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের পাওয়া ওটাই হবে, যদি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশটাকে রক্ষা করতে পারি, তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ দেশ জাগবে, জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে। সকলেই আমরা দেশ গড়ে তুলব। দেশ গড়ার জন্য অনেক লোকের প্রয়োজন হবে। সেখানে আজ যারা জুলুম-অত্যাচার করছে, তাদের সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না, তাদেরও সঙ্গে নিতে আমরা কোনো দ্বিধা করব না।’

খালেদা জিয়া নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। বহু সংকট আসবে, ষড়যন্ত্র হবে এবং নানা রকমভাবে ভয়ভীতি দেখাবার চেষ্টা করবে, কিন্তু আমরা ভয়ে ভিতু নই।’

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘যারা সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, যারা কাজ করেছে, যারা দলের সঙ্গে বেইমানি করেনি, দলে তাদের ভালো ভালো জায়গায় অবস্থান দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়, তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই তারা মূল্যায়ন পাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু যারা বেইমানি করবে, এক পা এদিকে, আরেক পা ওদিকে রাখবে, তাদের কোনো মূল্যায়নের জায়গা নেই।’

আগে ক্ষমা করার উদাহরণ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারপরও আমরা কিন্তু ক্ষমা করেছি। ক্ষমা একবার হয়, বারবার হয় না। তাই আমি বলতে চাই, বিপদ আসলে আসুন সকলে একসঙ্গে বিপদ মোকাবিলা করব। আর সুদিন আসলে একসঙ্গে সুন্দর করে দেশ গড়ব।’

খালদো জিয়া বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিকাল চলছে। আমরা এখানে সভা করতে চাইনি। ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, সোহরাওয়ার্দী ছিল, কিন্তু কেন সভা করতে দেওয়া হলো না। বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। তারপরও বলবেন দেশে গণতন্ত্র আছে?’ তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল আইনের নামে নতুন কালাকানুন করা হচ্ছে। সাংবাদিকেরা সত্য কথা বলেন। সেই কথাগুলো যখন মানুষ শোনে, তখন জনগণের অধিকার হরণ করতে নতুন আইন করা হচ্ছে।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত বলছেন নিম্ন আদালত সরকারের কবজায়। পত্রিকায় যা দেখছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে, সঠিক রায় দেওয়ার সুযোগ নেই। সঠিক রায় দিলে কী পরিণতি হয়, তা তো দেখেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমানের রায় দেওয়ার পর বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে। অপরাধ নেই। সেখানে কীসের বিচার হবে। কিন্তু তারা জোর করে বিচার করতে চায়।’

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সময় মিলনায়তনে উপস্থিত নির্বাহী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দেন। নেতারা স্লোগানে বলেন, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দী হতে দেব না।’ ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে যেতে দেব না।’

বক্তব্যের শেষে এসে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না কেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাকে কোনো ভয়ভীতি দেখিয়ে দমাতে পারেনি, পারবেও না। আমি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছি, দেশের মানুষের সঙ্গে আছি । খালেদা জিয়া বলেন, ‘সাহস সঞ্চার করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আসুন, সবাই এই দেশটাকে রক্ষা করি, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।’

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করবেন আদালত। গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ দিন নির্ধারণ করেন। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠ অনেকটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে বেগম জিয়ার কিছু হলে তারা একতরফা সরকার পতন আন্দোলনে যাবে। অন্যদিকে সরকার সব ধরনের পরিস্থিতি শক্ত হাতে মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin