রাজপ্রাসাদের কাছে গোলাগুলি, হলে নারী দর্শকের ঢল – কোন পথে সৌদি আরব?

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের সংরক্ষিত এলাকায় রাজপ্রাসাদের কাছে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতে এ ঘটনার পর রিয়াদ পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি দূরনিয়ন্ত্রিত একটি খেলনা ড্রোন। আল-খাজুমা পুলিশ স্টেশনের এক কর্মকর্তা সেটি জব্দ করেছেন। ড্রোনটি দেখার পরই পুলিশ যাবতীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়ে তৎপর হয়।

এ ঘটনা তদন্তে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে কাজ শুরু হয়েছে বলেও সৌদি সরকার নিয়ন্ত্রিত আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ৭টা ৫০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

তবে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে আর কেনই বা ঘটেছে, এতে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্স সৌদি আরবের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এ সময় বাদশাহ সালমান রাজপ্রাসাদে ছিলেন না। ‘বাদশা দিরিয়ায় তাঁর খামারবাড়িতে ছিলেন,’ যোগ করেন সৌদি কর্মকর্তা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওই এলাকায় সামরিক বাহিনীর যানবাহন থেকে আলোর ঝলকানি বের হচ্ছে এবং সঙ্গে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, ড্রোনটি ভূপাতিত করার জন্য গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনাকে ঘিরে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা, এমনকি অভ্যুত্থানের’ গুজবও ছড়িয়ে পড়ে বলে রাশিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা আরটির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের জুনে নিজের চাচাতো ভাইকে যুবরাজের পদ থেকে সরিয়ে দিলে আলোচনায় আসেন ৩১ বছর বয়সী মুহাম্মদ বিন সালমান। এর পর থেকেই সৌদি আরবে নানা অর্থনৈতিক ও সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছেন যুবরাজ। একই সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়ে নানা আলোচনার জন্ম দেন তিনি।

গত নভেম্বরে সৌদি আরবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে প্রিন্স, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী এবং ধনকুবের ব্যবসায়ীরা ছিলেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে  প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। যদিও পরে ধীরে ধীরে ‘আপসরফার’ মাধ্যমে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর আগে অক্টোবরে জেদ্দায় বাদশাহর রাজপ্রাসাদের বাইরে একজন বন্দুকধারী গুলিবর্ষণ করলে দুই নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এ সময় আহত হন আরো তিনজন। পরে অবশ্য নিরাপত্তা বাহিনী ওই বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করে।

সৌদি রাজপ্রাসাদের বাইরে গোলাগুলির নেপথ্যে

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে শনিবার রাতে রাজা সালমানের প্রাসাদের কাছে ব্যাপক গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে বিভিন্ন বার্তা সংস্থায় খবর প্রকাশিত হয়। সেইসঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের ক্যামেরায় তোলা ভিডিও ক্লিপও মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, শনিবার রাতে সৌদি রাজপ্রাসাদ ও এর আশপাশে কি ঘটেছিল? কোনো কোনো বার্তা সংস্থা খবর দেয়, গোলাগুলির শব্দ শোনার পর আতঙ্কিত রাজা সালমান বিন আব্দুলআজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে যান।

এসব বার্তা সংস্থা জানায়, সৌদি রাজা ও যুবরাজ মার্কিন সেনাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা রিয়াদের নিকটবর্তী একটি সামরিক ঘাঁটিতে পালিয়ে যান। কোনো কোনো সূত্র সৌদি আরবে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এ ঘটনার ব্যাপারে সৌদি সরকার সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে এবং এই নীরবতা শনিবার রাতের গোলাগুলি সম্পর্কে গুজবের ডালপালা বিস্তারে সহায়তা করছে।

গোলাগুলির ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সেদেশের পুলিশের বরাত দিয়ে দাবি করে, রাজপ্রাসাদের কাছে একটি ড্রোন আকাশে ওড়ার কারণে সেটিকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। অথচ বার্তা সংস্থাগুলো বলছে, গোলাগুলির যে শব্দ শোনা গেছে তা একটি ড্রোনকে গুলি করার শব্দ নয় বরং তা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যাপক ও তীব্র।

তবে এ ঘটনায় যে কারণে আলে সৌদ পরিবার তীব্র আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে তা হলো দেশটিতে সম্ভাব্য অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। প্রকৃতপক্ষে রাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসনে অতিষ্ট সৌদি আরবের জনগণ রাজা সালমানের পতনের খবর শোনার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছেন।

এদিকে যুবরাজ বিন সালমান নিজের ক্ষমতা সংহত করার লক্ষ্যে সাম্প্রতিক সময়ে রাজ পরিবারের বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধে যেভাবে দমনপীড়ন চালিয়েছেন তাতে রাজপ্রাসাদেও তার শত্রুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কাজেই খোদ বিন সালমান যেকোনো মুহূর্তে রাজ পরিবারের ভেতর থেকে তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় রয়েছেন এবং এরকম দুশ্চিন্তার কারণে কার্যত তার গোটা জীবনই এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

ইহুদিবাদী ইসরাইলি দৈনিক মাআরিভের বরাত দিয়ে লেবাননের বার্তা সংস্থা আল-আহদ জানিয়েছে, সম্ভবত সৌদি প্রিন্সদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে শনিবার রাতের গোলাগুলি হয়েছে।

নিজের অন্যায় কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের ভেতরে ও বাইরে সৌদি যুবরাজের শত্রুর অভাব নেই। তিনি একদিকে বহু প্রিন্সকে ক্ষমতাচ্যুত করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলমানদের প্রধান শত্রু  ইহুদিবাদী ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে বিন সালমান ফিলিস্তিনিদের হিতাকাঙ্ক্ষী প্রতিটি মুসলমানকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছেন।

সৌদি যুবরাজ দেশে সেক্যুলার নীতি বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে সাধারণ মানুষ ভীষণ ক্ষিপ্ত। এ ছাড়া, দারিদ্র পীড়িত ইয়েমেনের নিরপরাধ মানুষের ওপর হাজার হাজার টন বোমা নিক্ষেপ করেছে সৌদি আরব। নিহত নিরপরাধ মানুষগুলো বিশেষ করে ইয়েমেনের শিশুদের আর্তচিৎকার যুবরাজের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

শনিবার রাতের গোলাগুলির  শব্দ সম্পর্কে পর্যবেক্ষকরা আরেকটি সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। আর তা হচ্ছে, যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান রাজপরিবারের ভেতরে ও বাইরে নিজের বিরোধীদের দমন করার জন্য নিজেই এই কৌশল অবলম্বন করেছেন। এই ঘটনাকে অজুহাত করে এখন তিনি তার রাজসিংহাসনে বসার পথের সব কাঁটা অপসারণ করবেন। গোলাগুলির ঘটনার দায় বিরোধীদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।

সৌদির প্রথম সিনেমা হলে নারী দর্শকের ঢল

সৌদি আরবের নতুন যুবরাজের হাত ধরে কেটে গেল ৩৫ বছরেরও বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা। আবারও সিনেমা হল চালু হয়েছে দেশটিতে। গেল ১৮ এপ্রিল সৌদির রাজধানী রিয়াদে যাত্রা শুরু করেছে নতুন সিনেমা হল। সেখানে প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছে হলিউডের সুপারহিট ছবি ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’।হলের উদ্বোধনীর দিন দেখা গেল দর্শকের ঢল নেমেছে।

নিষেধাজ্ঞার কারণে সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখার সুযোগ না পেলেও সেই ইচ্ছেটা যে তাদের মনের গহীনে ভীষণ রকমেরই ছিলো তারই যেন প্রমাণ মিললো। বিশেষ করে নারী দর্শকের উপস্থিতি ছিলো তুলনামূলক অনেক বেশি। সব নিষেধের বেড়াজাল ছিন্ন হওয়ায় সেখানকার নারীরাও নিজেদের বিনোদন উপভোগ করতে বিরত থাকেননি।

পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে তারা সিনেমা দেখতে এসেছেন। তবে ৩৫ বছর পর চালু হওয়া সিনেমা হলের প্রথম প্রদর্শনীর সাক্ষী হতে সবার আগ্রহটা ছিলো একটু বেশিই।

বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশে সিনেমা দেখতে এসেছেন সৌদি আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারী ও পুরুষেরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, সবাই পপকর্নের সঙ্গে ছবি উপভোগ করেছেন। সেদিন স্থানীয় সৌদি নাগরিকদের পাশাপাশি নানা দেশের প্রবাসীরাও সিনেমা দেখতে ভিড় করেছিলেন।

অনেক গণমাধ্যম দাবি করছে, বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ সৌদিতে বাস করেন। সেইদিক থেকে সিনেমা হলের ব্যবসায়ে দেশটিতে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেই সুযোগটা নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেক প্রতিষ্ঠানই। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মার্কিন চলচ্চিত্র কোম্পানি এএমসি এন্টারটেইনমেন্ট হোল্ডিংস (এএমসিডটএন) সৌদি আরবে ৪০টি থিয়েটার নির্মাণ করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালের দিকে সৌদি আরবে কিছু সিনেমা হল থাকলেও দেশটির তৎকালীন ধর্মীয় পণ্ডিতরা সেগুলো বন্ধ করে দেন। ওই সময় আরব অঞ্চলের দেশগুলোতে ইসলামি শাসনের ব্যাপক উত্থান ঘটে। ২০১৭ সালে সৌদি সরকার জানায়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপক সংস্কার চলছে, তার অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

শুধু তাই নয়, গত বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরবে প্রথম কোনো গানের কনসার্টে নারী সংগীত শিল্পীকে গাইতে দেখা যায়। একই সঙ্গে কিছুদিন আগে স্টেডিয়ামে গিয়ে মেয়েদের খেলার দেখারও অনুমতি দেয়া হয়েছে দেশটিতে। নারীদের দেয়া হচ্ছে গাড়ি চালানোর লাইসেন্সও।

সৌদি যুবরাজের তথাকথিত সংস্কার: মুসলিম উম্মাহর অনুভূতিতে ভয়াবহ আঘাত

নিজের দেশেই এখন আমাদের সমস্যার অন্ত নেই। বুখারী খতমে হিন্দু প্রধান অতিথী। মাহফিলে কুরআনের কথা বলতে আলিমদের কে বাধা। বর্ষবরণের নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন। শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, নকলের ছড়াছড়ি। সর্বত্র ভেজাল । এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়েও। তাও আবার সচীব পর্যায়ে। আহলে হাদীস, সালাফী, মাযহাব-তাকলীদ, তাবলীগ, পীর-মুরীদ, কওমী-আলীয়া।

এক ভয়াবহ ঘূর্ণিপাক। যেন যাওয়ার কোন জায়গা নেই। দাঁড়াবার কোন ঠাঁই নেই। ভাবার কোন অধিকার নেই। বাকস্বাধীনতার কোন স্বাধীনতা নেই। এরপরও কথা বলতে হয়। ভাবতে হয় বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে নিয়ে। কারণ, অন্যথায় যে আমরা হয়ে যাবো আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় অপরাধী। রাসূল (স.) বলছেন: من لم يهتم بأمر المسلمين فليس منهم

“যারা মুসলিম উম্মাহকে নিয়ে ভাবে না, তারা আমার উম্মাত নয়” (হাকিম, তাবারানী, বায়হাকী)। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ তাঁর দেশে সংস্কারের নামে যা করছে, তাতে একজন মুসলিম হিসেবে আমি মারাত্মকভাবে ব্যথিত। আমার বিশ্বাস, গোটা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার এ সব কর্মকান্ড দেখে। তাকে অর্বাচিন বললেও হয়ত কম হবে।

তাকে যুবরাজ ঘোষণার বিষয়টিও অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। এ সব সৌদির অভ্যন্তরীণ বিষয়, এ রকম চিন্তা করারও আমাদের সুযোগ নেই। সৌদি আরব অন্যান্য দেশের মত নয়। ঈমান ও ইসলামের প্রশস্ত চেতনার মানদন্ডে বিচার করতে গেলে বলতে হয়, সৌদি সকল মুসলমানের দেশ। কারণ,

ক. এখানেই জন্ম নিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী, বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (স.)। খ. এই ভূমিতেই অবতীর্ণ হয়েছিলো আল-কুরআন। গ. এখানেই প্রতি বছর ইসলামের অন্যতম রুকন হাজ্জ পালিত হয়। গ. এখানেই আল্লাহর ঘর “কাবা” অবস্থিত। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য নিরাপত্তা ,আশ্রয়কেন্দ্র ও কিবলাহ বানিয়েছেন। ঘ. এই ভূমিতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বদর, উহূদ, খন্দক, খয়বর,তাবুক ইত্যাদি।

ঙ. এই ভূমির ধুলাবালুর সাথে মিশে আছে প্রিয় নবীজির (স.) পবিত্র পায়ের স্পর্শ। আছে অসংখ্য সাহাবির স্মৃতি। চ. যে ভূমিতে অবস্থিত আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মক্কা। ছ. যেখানে অবস্থিত রাসূলের মসজিদ (স.), কবর , অসংখ্য সাহাবীর কবর। জ. সেখানে অবস্থিত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অসংখ্যা নিদর্শন: মাকামু ইব্রাহীম, সাফা-মারওয়া, ঝমঝম কুপ, মিনা, মুযদালিফা, আরাফাহ ইত্যাদি। ঝ. যেখানে গিয়ে বিশ্বের মুসলিমরা প্রতিনিয়ত উমরাহ করছেন, তাওয়াফ করছেন।

এক কথায়, মক্কা-মদীনা, হারামাইন শারীফাইন যেই ভূমিতে অবস্থিত। সেই ভূমি শুধু সৌদি রাজ পরিবারের নয়; সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহর বিশ্বাস, আবেগ, ভালোবাসা, আশা-আকাংখার সাথে রয়েছে এর ঘনিষ্ঠ ও গভীর সম্পর্ক।

কথা ছিলো, সৌদি রাজপরিবার বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দিবে। মুশরিক, কাফির , নাস্তিক বিরোধী সংগ্রামে উম্মাহ যখন ক্লান্ত, তখন তাদের কে দিবে স্বান্ত্বনা, সাহস, শক্তি, পরামর্শ ও সঠিক নেতৃত্ব। কিন্তু বাস্তবতা হলো উল্টো:

ক. সৌদি যুবরাজ আজ আমাদের প্রিয়নবীর (স.) দেশে খুলেছে সিনেমা হল। তাও আবার মুশরিকদের সহযোগিতায়। তাদের সিনেমা দিয়ে। সেই সিনেমা হলে কালিমা খোঁচিত পতাকা প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটা কি কালিমার সাথে বেয়াদবি নয়? উপহাস নয়?

সিনেমা হলে কালিমা প্রদর্শন, এর চেয়ে বড় ধৃষ্ঠতা আল্লাহর সাথে কী আছে? এই কালিমা সমস্ত মুমিনের হৃদয়স্পন্দন। কালিমা নিয়ে ঠাট্টা করার এই অধিকার কে দিয়েছে যুবরাজকে? যেই নবী সারা জীবন অশ্লীলতা বিরোধী আন্দোলন করে একটি পবিত্র জাতি গঠন করেছিলেন, সেই নবীর দেশেই এখন ওরা অশ্লীলতার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

খ. মুসলমানদের চির শত্রু ইসরাইলের সাথে অতিমাত্রিক দহরম মহরম। নিজেদের গদি ধরে রাখার জন্য নিজেদের হাতে মুসলিম উম্মাহর কবর খনন করার কাজ নয় কি এটা? যদি গদির জন্য ইয়াহুদীদের পদলেহন করতে হয়, সেই গদির চেয়ে বাংলাদেশে এসে রিকশা চালানো অনেক শ্রেয় নয় কি? এ গদির যোগ্যতা তোমাদের নেই। যাদেরকে তোমরা বন্ধু বানিয়েছ, তারাই তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবে। মীরজাফররাও কিন্তু ইংরেজদের সাথে আঁতাত তরে বাঁচতে পারেনি।

গ. মসজিদের মিম্বার থেকে খতীবদেরকে টানাহেচড়া করে গ্রেফতার করা; আলিম-উলামাদের সাথে বেয়াদবী করা, তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া, তাদেরকে সত্য বলতে বাধা দেয়া, সত্য বললে, গুম করা এসব কি সৌদি আরবের মত দেশের শাসকদের জন্য শোভা পায়?

ঘ. মিশরের নরঘাতক সিসির সাথে বন্ধুত্ব ভয়াবহভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ঙ. ইসলামের প্রতিষ্ঠিত ফিকহী মাযহাবগুলোর বিরুদ্ধে কিছু পেইড এজেন্ট ঢুকিয়ে দিয়ে গোটা উম্মাহকে খন্ডিত-বিখন্ডিত করার ভয়াবহ খেলা।

মোটকথা, ইসলামের শিক্ষা বাদ দিয়ে সৌদি যুবরাজ ও তার অনুগতরা পাশ্চাত্যের যে পথ বেছে নিয়েছে, তাতে যে শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা নয়। বরং নীলনকশা অনেক সুদূর প্রসারী। সৌদি হলো মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বাসের প্রতীক। সৌদিকে যদি ধ্বংস করা যায়, তাহলে মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংস করা সহজ হবে। অতএব, আমরা আশা করবো, সৌদি যুবরাজ তার এই ধ্বংস খেলা থেকে ফিরে আসবেন।

তার মধ্যে চৈতন্য জাগ্রত হবে। তার মনে রাখতে হবে, এটা শুধু তাঁর বাপদাদার মালিকানা নয়; সৌদি গোটা মুসলিম উম্মাহর আশা আকাংখার কেন্দ্রভূমি। অতএব, তাদের কর্মকান্ড যেন নাস্তিকদের কে অারো সীমালংঘনে উৎসাহিত না করে। রাষ্ট্রক্ষমতা একটি আমানাত। এই আমানাতের সাথে তারা খিয়ানাত করবেন না এটাই আমাদের আশা।

অন্যথায়, ইসলামের পবিত্র স্থানসমূহ তথা বিশ্বনবীর জন্মভূমি, হিজরতের ভূমি ও ওহীর ভূমির পবিত্রতা রক্ষার জন্য মুসলিম উম্মাহকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। এভাবে চোখের সামনে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না।

 

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

সৌদি শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের অপসারণ: ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নাকি সামরিক ব্যর্থতার ফল?

সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সব পদে রদবদল ঘটিয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনী চিফ অব স্টাফ আব্দুর রহমান বিন সালেহ আল-বুনিয়ান, বিমান বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বিন আয়াজ সাহিম এবং স্থল বাহিনীর প্রধান ফাহাদ বিন তুর্কি বিন আব্দুল আজিজকে তাদের পদ থেকে বরখাস্ত করেছেন।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণের ঘটনা কয়েকটি দিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়।

সৌদি সরকার সম্প্রতি রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বহু কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে যাকে সৌদি রাজার পক্ষ থেকে নীরব অভ্যুত্থান হিসেবে দেখা হচ্ছে। সৌদি আরবে ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে সামরিক অভ্যুত্থানসহ যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ ও তার পরিবার চিন্তিত। এ কারণে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

পাশ্চাত্যের বিভিন্ন গণমাধ্যম সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীকে ক্ষমতার লড়াই বলে মন্তব্য করেছে। কিছুদিন আগে বিবিসি টিভি চ্যানেল “সৌদি রাজ পরিবারে ক্ষমতার যুদ্ধ” শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দুর্নীতির নানা দিক তুলে ধরেছে। সৌদি সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী সাআদ আল ফাকিয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “রাজ পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত দাম্ভিক এবং স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের।

তাদের এ স্বৈরাচারী মনোভাব ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে তীব্রতর করেছে।”পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে তার পুত্র মুহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার পর মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এ দ্বন্দ্ব ও রেষারেষি শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ থাকবে তা নয় নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও যে কোনো সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রচলিত নিয়ম বা সৌদি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজের অসিয়ত অনুযায়ী ক্ষমতা রাজার কাছ থেকে রাজার ভায়ের হতে হস্তান্তর করার কথা এবং ক্ষমতা তৃতীয় প্রজন্মের হাতে ন্যস্ত করা যাব না।

কেউ কেউ মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন যুদ্ধে সামরিক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে রাজা মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদে রদবদলের পদক্ষেপ নিয়ে থাকতে পারেন। কারণ ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি বাহিনীর পরাজয়ের আলামত ফুটে উঠেছে। সৌদি রাজ পরিবারে বর্তমান ক্ষমতার লড়াই এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে রদবদলের ঘটনাকে ইয়েমেন যুদ্ধে ব্যর্থতা পরবর্তী কম্পন হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

মিশরের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সামেহ আসগারি বলেছেন, “ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের রাজনৈতিক, সামরিক ও নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। গত তিন বছর ধরে চলা ইয়েমেন যুদ্ধে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে, হাজার হাজার নারী পুরুষ শিশু হত্যা করে, যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার খুইয়ে সৌদি আরব কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি।”যাইহোক, ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে সৌদি আরব।

রিয়াদ ভেবেছিল অল্প সময়ের মধ্যে আনসারুল্লাহ যোদ্ধাদের পতন ঘটিয়ে তাদের পছন্দের সরকারকে ইয়েমেনে বসাতে পারবে। কিন্তু গত প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও সৌদি আরব তার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

Check Also

মুখ ফিরিয়ে নিলেন আত্মীয়স্বজন, হিন্দু বৃদ্ধের সৎকার করলেন মুসলিম যুবকরা

বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় ভারতের বুলন্দশহরের বাসিন্দা রবিশংকরের। অথচ প্রতিবেশীরা মনে করেন করোনা সংক্রমণের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin