kader_fakhrul

সেপ্টেম্বরে উত্তপ্ত হতে পারে রাজনীতির মাঠ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি। এরই মধ্যে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্যে এই উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগে এসে এই দুই দলের কথার লড়াই মাঠে গড়াতে পারে। শুধু এই দুটি দল নয়, এ সময় শক্তি দেখাতে মাঠে নামবে বাম দল, ইসলামি দল এবং অন্য ছোট রাজনৈতিক দলগুলো।

মূলত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে দলটির বিভিন্ন দাবি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে রাজনীতির মাঠ। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এসে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং তাদের সমমনা দলগুলো রাজপথে নামার প্রস্তুতি নেবে। বিএনপি ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজার নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট এবং বৃহত্তর ঐক্য গড়ার অংশ হিসেবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। একই সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি পালন করবেন ৮টি বাম দল নিয়ে গঠিত ‘বাম গণতান্ত্রিক জোটে’র নেতারা।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠ উত্তপ্তের মধ্যে সরকারি দলও নানা কর্মসূচি নিয়ে এ সময় মাঠে থাকার পরিকল্পনা করছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে নানা ধরনের জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। ওই নেতা বলেন, তাঁরা মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারের অংশ হিসেবে সারা দেশে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করবেন। বিরোধী দলগুলো যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে নজর রেখে ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় থাকবেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারকে এ সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী ও পক্ষের রাজনৈতিক আন্দোলনও মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত বা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন বেগবান হতে পারে। তা ছাড়া মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী ‘ষড়যন্ত্র’ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মোকাবিলা করতে হতে পারে। ফলে রাজনীতির মাঠ বিরোধী দল যেমন দখলে রাখার চেষ্টা করবে, তেমনি সরকারকে চাপমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চাইবেন রাজনীতির মাঠ তাঁদের অনুকূলেই যেন থাকে।

ঈদের দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যদি নির্বাচন বানচালের বা প্রতিহত করার কোনো চেষ্টা বিএনপি করে, তাহলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে একই দিন বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, সরকারকে অতীতের মতো আর একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করারও ঘোষণা দিয়েছেন।

রাজনীতির বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে বা সব দল মেনে নেবে, এমন কোনো ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী প্রক্রিয়া বের করা যায়নি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কোনো লক্ষণও এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে আগামী ৩-৪ মাস রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটবে। দেশি-বিদেশিদের নজরও থাকবে রাজনীতির দিকে। তাই রাজনীতির মাঠ স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ থাকবে না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহূর্তে রাজনীতিতে সুষ্ঠু ধারা অব্যাহত নেই। বিশেষ করে ভোটাধিকার না থাকায় নির্বাচন নিয়ে সংকট তৈরি হয়ে হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে আসা না–আসা নিয়ে চিরাচরিত নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে। এখন সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে যে অবিশ্বাস, তার সুষ্ঠু সমাধান না হলে রাজপথেই এই সমাধান হবে, এটাই সব সময় দেখা যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যে দাবি তুলেছে, তা সবার কাছেই যৌক্তিক প্রমাণ হয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবিতে বিএনপির সোচ্চার আছে, সামনেও থাকবে। এর সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আছে। তিনি বলেন, বিএনপি তো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাচ্ছে। সেটা না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।

একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলতে কাজ করছে বিএনপি। এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে আছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। আর পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করছেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি খুব সহজ, তা নয়। মধ্য সেপ্টেম্বরে গিয়ে এটি একটি কাঠামোতে আসতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ ঢাকায় একটি বড় সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম। সেখানে ১৪ দল, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এই সমাবেশে যুক্তফ্রন্ট অংশ নিতে পারে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দেশ এখন যেভাবে চলছে, সেভাবে চলতে পারে না। এক ব্যক্তির শাসন চলছে। আইনের শাসন নেই। এ অবস্থায় ঐক্য দরকার। তাঁরা এ ধরনের একটি ঐক্য গড়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় আসবে, তারাই দেশ পরিচালনা করবে। এতে জবাবদিহি থাকবে।’

সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের নানা তৎপরতার মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ সময় রাজপথে সক্রিয় থাকবে। দলটি এই প্রক্রিয়াকে জাতীয় নির্বাচনের ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়া’ বলছে। দলটি বলছে, তারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসজুড়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করবে। এ জন্য আসনওয়ারী সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক এবং সব পর্যায়ের নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় যেতে বলেছেন। সরকারের পক্ষে প্রচার চালাতে বলেছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, সামনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখন মাঠেই থাকবেন। সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো মাঠে নামলে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ ঘরে বসে থাকবে না। বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করবে। তিনি বলেন, বিরোধী পক্ষ রাজনীতির মধ্যে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করলে আওয়ামী লীগ কোনো বাধা দেবে না। তবে খারাপ পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে তখন যেভাবে প্রয়োজন, সেভাবেই তা মোকাবিলা করা হবে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin