সেই নির্দেশ দাতাই এখন খালেদার মামলার প্রধান আইনজীবী!

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটি করা হয় বিগত ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়।

সেসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন অ্যাডভোকেট হাসান আরিফ। যাকে কিনা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলার অন্যতম কুশিলব হিসেবে ধরা হয়।

মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করলেও এক্ষেত্রে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরোক্ষ সমর্থন বা নির্দেশ যে ছিলো সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সে সরকারের আইন উপদেষ্টা (আইনমন্ত্রী সমতুল্য) হিসেবে অ্যাডভোকেট হাসান আরিফকে এ মামলার পেছনের একজন নির্দেশ দাতা বা ছায়া সঙ্গী বলা যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এতো দিন পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া যখন কারাগারে ঠিক তখন খালেদার আইনজীবী হিসেবে যদি সেই হাসান আরিফকে নিয়োগ করা হয় তবে কেমন শুনাবে ?

কি একটি বিখ্যাত গানের কলির কথা মনে পড়ছে নিশ্চই ? ‘সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো’… আসলেই তাই।

এবার খালেদা জিয়াকে ওঝা হয়ে ঝাড়ার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন অ্যাডভোকেট হাসান আরিফ।

শোনা গেছে, তিনি নাকি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে আপিলে বেগম জিয়ার প্রধান কৌসুলী হবেন। বিএনপির আইনজীবীদের উপর আস্থাহীনতা থেকেই একরম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই মামলায় বিএনপির আইনজীবীদের প্রতিযোগিতা এবং সমন্বয়হীনতা ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বেগম জিয়ার পরিবার দলীয় আইনজীবীর বাইরে, একজন পেশাদার আইনজীবীকে মামলার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট হাসান আরিফ বেগম জিয়ার মামলার ফাইল গ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেন, ‘একটা টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা এই মামলা লড়তে চাই।

তিনি আইন উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় এই মামলা হয়েছিল, এখন তিনিই আবার আসামির আইনজীবী এটা স্ববিরোধীতা কিনা, জানতে চাইলে হাসান আরিফ বলেন, এই মামলা আইন মন্ত্রণালয় করেনি, করেছে দুদক। কাজেই স্ববিরোধিতার কোনো প্রশ্নই আসে না।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা বাংলাদেশে চলমান আলোচিত একটি মামলা। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তি। এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ এ মামলায় ৬জন আসামী রয়েছেন।

বিদেশ থেকে আসা এতিমখানার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ, তারেক রহমান সহ অন্যান্য আসামীদের ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়। তারেক রহমানসহ বাকি ৫ আসামীর ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা হয়।

zoombangla

প্যারোলে মুক্ত হয়ে লন্ডন যাবেন খালেদা?

রাজনৈতিক সমঝোতা হলে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করবেন, এর মধ্যে বাংলাদেশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যে নির্বাচনে বিএনপি বেগম জিয়া ও তারেক জিয়া ছাড়া অংশগ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং কয়েকটি প্রভাবশালী বন্ধু রাষ্ট্রের কূটনৈতিক সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তবে সরকারের একজন শীর্ষ কর্তা বলেছে, এটি খুবই প্রাথমিক অবস্থায় থাকা একটি সমঝোতা প্রস্তাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বেগম জিয়ার আত্মীয় স্বজন আশঙ্কা করছেন যে, বেগম জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ হতে পারে। তিনি এমনিতেই বৃদ্ধ এবং অসুস্থ। এ কারণেই, বেগম জিয়ার দুই আত্মীয় তাঁর মুক্তি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ওই দুজন সদস্যই বিএনপি চেয়ারপারসন কারান্তরীণ হবার পর অন্তত তিনবার দেখা করেছেন। তাঁদের ধারণা, সরকার চায় না বেগম জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করুক।

এজন্যই তাঁকে জেলে রেখে নির্বাচন সারতে চায় সরকার। এর ফলে, অসুস্থ বিএনপি প্রধান আরও আসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এই কারণেই ‘বেগম জিয়ার সুস্থতা’র স্বার্থে তাঁরা একটি সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। সূত্র মতে, এই প্রস্তাব একটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের কাছে, বেগম জিয়ার ভাই প্রথমে দেন। যাতে বলা হয়েছে, বেগম জিয়া প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করবেন, একই সঙ্গে বর্তমান মামলায় তাঁকে জামিন দেওয়া হবে।

প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন। দীর্ঘদিন সেখানেই অবস্থান করবেন। ফলে, আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি (বেগম জিয়া) অংশ নেবেন না।

প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকের প্রস্তাবটি পছন্দ হয়েছে। তিনি দুজন সরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে আটকে রাখার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো হাত নেই। এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। আদালতেই নির্ধারিত হবে তিনি জামিন পাবেন কিনা। তবে সরকার থেকে বলা হয়েছে, যদি তিনি প্যারোল চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বিবেচনা করে দেখবে।

উল্লেখ্য, যেকোনো বন্দীকে জরুরি বিবেচনায় প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আছে।

অবশ্য বিএনপির নেতৃবৃন্দ এটাকে অবাস্তব এবং মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়নেরই কৌশল হিসেবে মনে করছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের প্যারোল চাইবো কেন? আইনি লড়াই এবং রাজপথের আন্দোলনেই তাঁকে আমরা মুক্ত করে আনবো। তিনি বলেন, ‘ সরকার বেগম জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য নানা চেষ্টা করছে। এই সব গুজব সেই চেষ্টারই অংশ।‘

কিন্তু বিএনপি সূত্রে বলা হয়েছে, বেগম জিয়ার পরিবার দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকে চলছে না। পরিবার দেখছে, বেগম জিয়ার সুস্থতা ও শান্তি । নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁর একজন আত্মীয় বলেছে, ‘এভাবে একটা মানুষ কষ্ট পেতে পারে না। এ বয়সে কোথায় তাঁর নাতিনীদের সঙ্গে আরাম আয়েশে জীবন কাটানোর কথা সেখানে তিনি জেলে তিল তিল করে মরছেন।‘ ওই আত্মীয় এটাও বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া বিএনপির জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন। নিজের জীবনের সব সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর দুঃসময়ে বিএনপি উল্লেখ করার মতো কিছুই করতে পারে নি।‘

সূত্র মতে, কূটনৈতিক মধ্যস্থতায় সরকার রাজি হলেই কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারোল প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে, রাজনৈতিক সমঝোতার যোগসূত্রকারীরা বলেছে, এটাই এই মুহূর্তে সবার জন্য সম্মানজনক সমাধান।

বাংলা ইনসাইডার/

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin