mirza_fakhrul

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৮০ ভাগ মানুষ বিএনপিকে ভোট দিবে: মির্জা ফখরুল

‘একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন না, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ বিএনপিকে ভোট দিবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮২তম জন্মবার্ষিকী’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, সাংবাদিক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হক, নুরী আরা সাফা, ব্যারিস্টার বদরুদ্দেজা বাদল, রফিকুল ইসলাম রাসেলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব সরকারের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিন এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করুন। তা না হলে জনগণই আপনাদের বাধ্য করবে।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার জিয়াউর রহমানকে কলুষিত করতে চায়। মিথ্যা মামলা দিয়ে বেগম জিয়াকে আদালতে আটকে রেখে হেনস্থা করছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার পর মামলা দিয়ে ঘায়েল করছে। তারা আমাদেরকে এক ঘরে করতে চায়। এই অচলায়তন ভেঙে ফেলতে হবে। আমরা কখনো আর গণতন্ত্র বিরোধী শক্তিকে দেশের ক্ষমতায় দেখতে চাই না।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শুক্রবার জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, রচনা প্রতিযোগিতা, দুঃস্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের লোকেরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম মিথ্যাচার করে। এই মিথ্যাচারগুলো এজন্য করে যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে শুধু তারা ভয় পায় না, তারা মনে করে তার আদর্শ, দর্শন বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে চলে যায় তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। আমরা দেখেছি, এই আওয়ামী লীগ ছিল না, বাকশাল ছিল। তাদের দলের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, সে দলকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে দর্শন দিয়েছিলেন, যে দল গঠন করেছেন সে দল আজো এ দেশের মানুষের বুকের মধ্যে। আজকে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন না, শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ এই বিএনপিকে ভোট দিবে। সুতরাং আপনারা পদত্যাগ করুন, একটি নিরপেক্ষ সরকারেরর অধীনে নির্বাচন দিন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান যেদিন শহীদ হলেন ঢাকা’র মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে সমগ্র ঢাকায় মানুষ দিয়ে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। সেদিন কৃষক তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। এক রিক্সাওয়ালা কালো পতাকা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এখান থেকে ওখানে চলে গিয়েছিল। এটা আমার কথা নয়, টাইমস পত্রিকায় খবর এসেছিল। তার জানাজায় লাখ লাখ মানুষ সেদিন উপস্থিত হয়েছিলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এই ফ্যাসিস্ট সরকার, যারা গণতন্ত্রকে একবার নয় বহুবার ধ্বংস করেছে। তারা আজকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে আজকে তারা একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবার জন্যে একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।

বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কষ্ট দিচ্ছে। আজকে আমরা সবাই জানি এই মামলা একটা মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এই মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে সপ্তাহে আজ পাঁচ দিন প্রায় আদালতে আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এসময় তিনি বলেন, আর আমরা এই গণতন্ত্র বিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না। আমরা চাই না বিএনপিকে ধ্বংস করে দিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে একটা অপশক্তি আমাদের বুকের উপরে দিনের পর দিন চেপে থাকুক।

মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা আজকের এই দিনে শপথ গ্রহণ করি যে আগামী দিনে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বাধ্য করে বলবো পদত্যাগ করুন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন, তারপর নির্বাচন অতিদ্রুত দিন এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করুন। অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষ যারা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছে, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা অবশ্যই এই ফ্যাসিস্ট, অত্যাচারী, নির্যাতনকারী সরকারকে বাধ্য করবে জনগণের একটি নির্বাচনের জন্য।

এসময় সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের সমালোচনা করে বলেন, যেখানে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে সেখানেই জিয়াউর রহমান সফল হয়েছেন বলেই তারা শহীদ জিয়াউর রহমান, তার পরিবার এবং বিএনপিকে ভয় পায়। এজন্য তারা আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেয় না। তারা নয় বছর ধরে নিপীড়ন-নির্যাতন করে যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যত নির্যাতন করুক না কেনো, বিএনপির পেছনে এদেশের জনগণ আছে। আগামী নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দিতে হবে।

এই সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে এই ছোট পরিসরে আমাদের এখানে সভা করতে হচ্ছে। আমাদের এক ঘরে করে ফেলেছে। কোথাও তারা আমাদেরকে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া না। আমরা এই অনুমতি নির্ভর রাজনীতি বর্জন করি, এটা আমরা প্রতিহত করবো। আমরা এই অনুমতির জন্য আর বসে থাকবো না। যে বাঁধ তারা সৃষ্টি করেছেন। তারা মনে করেছে যে, এই বাঁধ চিরদিন থাকবে। আমাদেরকে ঘরের মধ্যে রেখে দেবে। আমি বলতে চাই, এই বাঁধ ভাঙবে, এই বাঁধ ভেঙে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে, আবার দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হবে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin