bnp_rodshow

সর্বাত্মক আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি, কলা-কৌশল চূড়ান্তে জোটের সঙ্গে বৈঠক আজ

সর্বাত্মক আন্দোলনের দিকেই এগুচ্ছে বিএনপি। আর সেই আন্দোলনের কৌশল কেমন হবে, এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়নি। রবিবার রাতে জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ফের স্থায়ী বৈঠকে বসবে। আর সেখানেই চূড়ান্ত হবে আন্দোলনের রূপরেখা।

এমন তথ্যই জানা গেছে শনিবার রাতে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলেন।

স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য জানান, সবকিছুই নির্ভর করছে সরকারের আচরণের ওপর। সরকার যদি বিচারের নামে প্রহসণ করে যেনতেন একটা রায় দিয়ে দেশনেত্রীর রাজনৈতিক জীবনে কালিমা লেপনের চেষ্টা করে তবে আমাদের সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে জরুরি বৈঠক করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে নেতারা রায় বিপক্ষে গেলে পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। নেতারা আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের জন্য দলে আরো আলোচনার কথা বলেছেন। কৌশল নির্ধারণে আজ জোটের বৈঠক ডাকা হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে ডাকা হবে বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠক।

১ ফেব্রুয়ারি পুনরায় বৈঠকে বসবে স্থায়ী কমিটি। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গত রাতে তার গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে দুই ঘন্টা। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত রাতের বৈঠকে স্থায়ী কমিটির নেতারা কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। নেতিবাচক রায় এবং গণগ্রেপ্তারের শঙ্কা প্রকাশ করেন কোন কোন নেতা। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আলোচনার পথ খোলা রেখে পর্যায়ক্রমে সর্বাত্মক আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়। সভা থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠক চলাকালে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি আদালতে বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য হঠাৎ সমাপ্ত ঘোষণা করে আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়। প্রবীণ আইনজীবীদের মতে এমন ঘটনা শুধু অপ্রত্যাশিত ও অস্বাভাবিক নয়- রহস্যজনক।

এটা বিএনপি এবং খালেদা জিয়াকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার অপচেষ্টার অংশ বলেই দেশবাসী মনে করে। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীগণ এই মামলার রায় এবং তৎপরবর্তী সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়ে সরকার ও সরকারি দলের বিভিন্ন প্রস্তুতির কথা যে ভাষায় বলে চলেছেন- তাতে প্রমাণিত হয় যে, মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকলেও তার রায় কী হবে তা সরকার ও সরকারি দলের জানা আছে।

স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, জাল-জালিয়াতি করে বিচারের নামে প্রহসন এবং বিরোধী পক্ষকে দমন করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করার আরেকটি নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এমন আচরণে দেশের জনগণ আজ উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির আজকের সভা থেকে বেগম খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা নিয়ে সরকারের আইন ও আদালতের নিয়ম-নীতি বিরুদ্ধ আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ ব্যাপারে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচারের নামে সরকারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

রাতে জোটের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন খালেদা জিয়া

২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বেগম খালেদা জিয়া। রবিবার রাত সাড়ে আটটায় গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।

এদিকে শনিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক করেন বেগম জিয়া। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল প্রেস ব্রিফিং করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে জাল-জালিয়াতি করে বিচারের নামে প্রহসণ এবং বিরোধীপক্ষকে দমন করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করার একটি নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ এবং আইনের শাসন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এমন আচরণে দেশের জনগণ আজ ক্ষুব্ধ এবং ক্রুদ্ধ। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেটা জাতি আশা করছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সকলের অংশগ্রহণে সেটাকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি।’

তিনি আরো বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায়কে কেন্দ্র করে পুরো জাতি আজ উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ। আমরা মনে করি, এটা গভীর ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য।

বৈঠক শেষে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এই প্রেস ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি শুধু একটি রেজুলেশন আপনাদের সামনে পড়ে শোনাব। গত ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য হঠাৎ সমাপ্ত ঘোষণা করে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

উপস্থিত প্রবীণ আইনজীবীদের মতে, এমন ঘটনা শুধু অপ্রত্যাশিত ও অস্বাভাবিক নয়, রহস্যজনক। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জাতীয় নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার জন্য দ্রুত রায় ঘোষণা-তা সেই অপচেষ্টা অংশগুলোই দেশবাসী মনে করে।

সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে গত কয়েকদিন ধরে সরকারের মন্ত্রীগণ এবং বিশেষ দূত (জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) এই মামলার রায় এবং তার পরবর্তী সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়ে সরকার এবং সরকারি দলের বিভিন্ন প্রস্তুতির কথা যে ভাষায় বলে চলেছেন তাতে প্রমাণিত হয় যে মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকলেও তার রায় কী হবে তা সরকার এবং সরকারি দলের জানা আছে বলেই মনে হয়।’

‘বিএনপির আজকের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে সরকারের আইন ও আদালতের নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধ আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ ব্যাপারে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচারের নামে সরকারি ষড়যন্ত্রের নামে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ শেষে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখিত বক্তব্য শেষ করেন মির্জা ফখরুল।

এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়।

খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়েও আওয়ামী লীগ আগের অবস্থানেই রয়েছে। ফলে এসব বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করে দলের করণীয় নির্ধারণ করতেই মূলত সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠক বসেন তিনি।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin