‘ক্ষমতায় টিকে থাকার চিন্তায় সরকার তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এলে জনগণের জানমালের দায়িত্ব নেবে, সরকারের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে ভবিষ্যতের সব নির্বাচন রংপুরের মতোই হবে বলে আমার বিশ্বাস’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
শনিবার জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর জাতীয় পার্টিতে যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়লাম, কথা ছিল আমাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে। জানতাম নির্বাচন করলে জয়ী হব; কিন্তু নির্বাচন করতে দেওয়া হয়নি। আমাকে জেলে পাঠানো হয়। আওয়ামী লীগকে বার বার সমর্থন দিলাম। বিনিময়ে কী পেলাম? আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ আমাদের বন্ধু নয়। আমাদের বন্ধু আমরাই, আর জনগণ।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, গুম খুন ধর্ষণ ও দুর্নীতির চিত্র দেখলে মনে হয় দেশে সরকার নেই। এ থেকে রক্ষা পেতে রংপুর সিটি নির্বাচনের মতোই ভবিষ্যতের সব নির্বাচনেই দেশবাসী লাঙ্গলের ওপর আস্থা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে। কারণ সরকারের পরিবর্তন চায়। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মেজর অব. খালেদ আখতার, নুরুল ইসলাম নুরু, ইয়াহিয়া চৌধুরী এমপি, ইসহাক ভূইয়া, ফখরুল আহসান শাহাজাদা প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামে। তিনি ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের মঠবাড়িয়া উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। পরে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
’৬৯ সালে এগারো দফা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মঠবাড়িয়ার আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৮ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।
২০০১ সালে তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচন করে পিরোজপুর-৩-এর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও বিরোধে জড়ানোর পাশাপাশি সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতির কারনে তাকে বিএনপি মনোনয়ন দেয়নি। ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান রুস্তম আলী ফরাজী।
এরপর থেকে আর তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হননি। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে জিতে আসেন। ওই নির্বাচনের পর আরো ১৩ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সঙ্গে ফরাজীর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্রই থেকে যান তিনি।