‘সরকারের নির্দেশেই খালেদা জিয়ার রায়ের সার্টিফাইড কপি দেওয়া হচ্ছে না’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কখা বলেন। এসময় তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অথবা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বিচারক ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় ১০ দিনে লিখে শেষ করতে পারেননি, এতে এটিই প্রমাণিত হয়, পুরো রায় না লিখে তড়িঘড়ি সাজার অংশটুকু লিখে বিচারক রায় দিয়েছেন। জালজালিয়াতি ও ঘষামাজা করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা দিয়ে প্রহসনের রায় দেয়া হয়েছে। গোটা জাতি এ রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ মামলার কোনো অংশেই খালেদা জিয়া জড়িত নন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করতে বর্তমান সরকার তাদের ‘আন্দোলনের ফসল’ ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের ‘অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত’ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
রিজভী আরো বলেন, খালেদা জিয়ার মনোবল ভাঙতেই তাকে নির্জন কারাগরে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোনো সাজা বা কারাবাস খালেদা জিয়ার মনোবল দুর্বল করতে পারবে না।
খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার ‘মাস্টারমাইন্ড’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বিশেষ দূত সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ—এমন মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার। তাই সরকারের নির্দেশে মিথ্যা সাজানো ও ঘষামাজা করা মামলায় তাঁকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন বলেন, ‘জাল-জালিয়াতি ও ঘষামাজা করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রহসনের রায় দিয়েছে সরকার। কারণ, মাত্র ১০ দিনের মধ্যে বিচারক ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় লিখেছেন। অথচ নিয়ম অনুসারে সাত দিনের মধ্যে আসামিপক্ষকে রায়ের কপি দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না।’
রিজভী বলেন, আইনে পাঁচ দিনের মধ্যে বিবাদী পক্ষকে রায়ের কপি সরবরাহের বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে রুলস মানা হচ্ছে না। এটি বিচার বিভাগের ওপর সরকারের আগ্রাসী হস্তক্ষেপ প্রমাণ করে। সরকারের নিষেধের কারণেই রায়ের কপি পাওয়া যাচ্ছে না। রায়ের কপি না দেয়ায় দেশের প্রথিতযশা আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইন বিশ্লেষক ও স্বাধীন বিবেকের বু্দ্ধিজীবীরা বিস্মিত হয়েছেন। তা হলে নিশ্চয়ই রায় সংশোধন করা হচ্ছে। নিশ্চয়ই তা হলে আওয়ামী লীগের নির্দেশমতো মনগড়াভাবে রায় সংশোধন করা হচ্ছে- এই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।
‘সরকারের নির্দেশে খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের কপি দেওয়া হচ্ছে না। নিশ্চয় সরকার প্রধানের নির্দেশে মনগড়া রায় সংশোধন করা হচ্ছে। আর সে জন্য রায়ের কপি দিতে বিলম্ব করা হচ্ছে,’ যোগ করেন রিজভী।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ দলের নেতাকর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে নিপীড়ন করা হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাকে ঘুমানোর সুযোগ না দিয়ে একনাগাড়ে ১৯-২০ ঘণ্টা বসিয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হচ্ছে। মাথার ওপর এক হাজার পাওয়ারের বৈদ্যুতিক বাতি ঝুলিয়ে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।
শেখানো কথা বলতে বাধ্য করতে রিমান্ডে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ করে শিমুলের রিমান্ড বাতিল এবং মুক্তি দাবি করেন রিজভী।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।
এই রায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার রায়: রিজভী
‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই রায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার রায়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
বৃহস্পতিবার ২ টা ৫০ মিনিটে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই কথা বলেন। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার থাকলে স্বাধীনতা থাকে, গণতন্ত্র থাকে, এই জন্য জন্যই তাকে সাজা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেন রিজভী। কাঁদতে কাঁদতে, চোখ মুছতে মুছতেই সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও আমরা এটা দেখিনি। কোনো দেশে একজন স্বামীহারা, সন্তানহারা, আরেক সন্তানের মাতৃত্বের স্নেহ বঞ্চিত হয়ে শুধু মানুষের জন্য যিনি কাজ করেছেন। এটি যেন এক দীর্ঘ প্রতিহিংসার ফল। মনের মধ্যে যে বিষ পুষে রেখেছিলেন, তারই বহিঃপ্রকাশ। এ রায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসা পূরণের রায়।’
একদলীয় শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্যই এ রায় দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এ রায় বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা গণবিরোধী রায়। একজন ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য এই রায় দেওয়া হয়েছে। রায়ে ন্যায়বিচার হয়নি। শুধু চাকরি রক্ষার্থে এই রায় দেওয়া হয়েছে।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে মন্তব্যও করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি এ রায়ের প্রতি ঘৃণা জানাচ্ছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।’
এর আগে বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ বাকী আসামীদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।