সরকারকে ‘শেষ মরণকামড়’ দিতে প্রস্তুত হচ্ছে বিএনপি

আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের আগে সরকারকে ‘শেষ মরণকামড়’ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি যে ভুলগুলো করেছিল এবার তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেদিকেও সজাগ দলটির নেতৃবৃন্দ। বরং নিজেদের ভুলগুলো পর্যালোচনা করে ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছে ২০ দলের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি।

সেই কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিয়ে এবার জোর কদমে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়া মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে দল ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবেন নেতাকর্মীরা, তবুও এবার রাজপথ ছাড়া হবে না বলে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারাও।

শিগগিরই সারা দেশে ইউএনও অফিস, নির্বাচন কমিশন কার্যালয়, থানা এবং ডিসি অফিস ঘেরাও করার কথাও ভাবছে বিএনপি। আর এসব কর্মসূচি পালনের এক পর্যায়ে গিয়ে হরতাল এবং অবরোধের ডাক দেয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে দলের অভ্যন্তরে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্রেকিংনিউজকে এসব তথ্যই জানিয়েছে।

তবে এসব কর্মসূচিগুলো কবে কখন ঘোষণা করা হবে সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত না নিলেও ধারণা করা হচ্ছে অক্টোবর মাসেই আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামবে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা বৈঠক করে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘অনেকেই বলেন, সময় চলে যাচ্ছে। আমি বলি, আপনারা কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন দেখেছেন। কেউ কি জানতেন, কারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন? আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাধ্য হয়ে এবং আন্দোলনকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সুতরাং যেমন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন আপনাদের দৃষ্টির অগোচরে বিশাল আকার ধারণ করেছিল, আমার দৃঢ় বিশ্বাস- এই ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার সরকারের পতনের আন্দোলন নোটিশ ও দিন-তারিখ ঠিক করে হবে না। জনগণই ফ্যাসিস্টদের পথরোধ করে দাঁড়াবে। আমরা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সঙ্গে থাকবো।’

বিএনপি সূত্রে আরও জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে যখন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে- ওই সময় (আন্দোলনের) উপজেলার যেসকল নেতাকর্মীরা জেলায় থাকবেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে উপজেলায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর জেলার যে সকল নেতাকর্মীরা ঢাকায় আছেন, আন্দোলনের সময় তাদের নিজ নিজ জেলায় গিয়ে কর্মসূচিগুলোর সাথে সম্পৃক্ত থাকার নির্দেশ ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। আর এর ব্যত্যয় ঘটলে তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না বলেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

এছাড়া আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আদালতে কর্মসূচি জোরদার করতে আইনজীবীদের কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও সূত্রটির ভাষ্য।

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সামনের দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরে ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রকল্পের বিরুদ্ধে আজকে আমাদেরকেও (বিএনপির) প্রকল্প তৈরি করতে হবে। এই প্রকল্পের কাজ হবে, যেখানে গ্রেফতার করতে যাবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। গ্রেফতার করে যে থানায় নিয়ে যাবে, সেই থানাও ঘেরাও করতে হবে। যেখানে নির্বাচন কমিশন অচল হয়ে যাবে, কমিশন অফিস ঘেরাও করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের যে সমস্ত কর্মকর্তারা আওয়ামী প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে ঘেরাও করতে হবে। তাদের নাম উচ্চারণ করতে হবে।’

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রকল্পের সঙ্গে যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা জড়িত আছেন, তাদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। তাদেরকেও জনতার সামনে উন্মোচিত করতে হবে।’

এদিকে দেশের চলমান রাজনৈতিক ও জাতীয় সংকট থেকে উত্তোরণে এখনও আলোচনাকেই সমাধানের সঠিক এবং গণতান্ত্রিক পথ বলে মনে করছেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু। দলের কর্মপরিকল্পনা, বেগম জিয়ার মুক্তি ও সামনের দিনগুলোতে রাজপথে থেকে অগ্নিঝরা আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায়। সেজন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে আসছি। সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে দেশের চলমান সংকটের সমাধানে আগ্রহী হয় তাহলে তাদের উচিৎ হবে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালোদা জিয়াকে মুক্তি এবং সহায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়া। এই দুটি দাবি মেনে নিলে আমরা মনে করি চলমান রাজনৈতিক সংকট কেটে যাবে। আর যদি সরকার আমাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো না মানে তাহলে আগামী দিনে আন্দোলন ছাড়া আর কোনও পথ থাকবে না।’

সরকারের পতনের মহালগ্ন এসে গেছে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘সরকার পতনের মহালগ্ন এসে গেছে। আর কোনও উপায় নেই। সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে দাপট থাকলেও চেহারায় ছিল অন্যমনস্কতা ও দুঃশ্চিন্তার ছাপ। তবে আমরা সুস্পষ্টভাবে আবার জানিয়ে রাখি, দাপট দেখিয়ে গণদাবি উপেক্ষা করলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। তাই এবার সরকারকে বিদায় নিতেই হবে, যতই ষড়যন্ত্র আর অপচেষ্টা করুন না কেন, আপনাদের (প্রধানমন্ত্রী) এবার বিদায় নিতেই হবে।’

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনের বার্তা দিয়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘জনমতকে উপেক্ষা করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অবৈধ নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ বাকশালী সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এবার তাদেরকে সেই সুযোগ দেয়া হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এই সরকারের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত করবে এবং সেইসঙ্গে কারাবন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিও ত্বরান্বিত করা হবে। আগামী দিনের সেইসব আন্দোলনে যুবদল সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে।’

এসব ব্যাপারে বাকসু’র সাবেক জিএস ও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি কৃষিবিদ সামসুল আলম তোফা ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার একমাত্র নেত্রী। তাঁকে আজ কারাগারে রেখে বর্তমান শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার নির্বাচন করবে এটা তাদের স্বপ্নেও দেখা উচিৎ নয়। কারণ বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে অবদান রয়েছে তাঁকে বাদ দিয়ে এদেশে আর কোনও নির্বাচন হতে দেবে না জনগণ। ১৬ কোটি জনগণ কোনভাবেই এই স্বৈরতন্ত্র মেনে নেবে না। যে কোনও পরিস্থিতিতে যে কোনও মূল্যে খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমরা এবার রাজপথ ছেড়ে যাবো না।’

ব্রেকিংনিউজ

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin