nurul_huda

সময়মতো সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত : সিইসি নূরুল হুদা

দেশের প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ‘বাস্তবতা’ হিসেবে অবিহিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলিনি। তবে প্রতি জাতীয় নির্বাচনেই সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকে। এটা একটা বাস্তবতা। এত তাড়াতাড়ি আপনারা এই সিদ্ধান্ত চান কেন? অনেক সময় আছে। এখনো এক বছরের বেশি সময় আছে সেই অবস্থানে পৌঁছাতে। এত আগে তো সেই সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না।

সময়মতো সেনা মোতায়েনের বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত নয়। তবে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

প্রসঙ্গত গত সোমবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের জানান আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। পরদিন মঙ্গলবার সিইসি এ কে এম নুরুল হুদা সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশনারদের এ ধরনের বক্তব্যে তাদের মধ্যে বিভক্তি ফুটে উঠছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বিভক্তির কারণ নেই।

আপনারা (সাংবাদিক) নাছোড়বান্দা লোক। শুনতে চান উনি (মাহবুব তালুকদার) হয়তো বলেছেন। উনি (মাহবুব) কিন্তু বলেছেন এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত না। মাহবুব তালুকদার মনে করেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন হবে, এটা তার ব্যক্তিগত মত। কমিশনের সভার বরাত দিয়ে তিনি এ কথা বলেননি।

এ ছাড়াও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পর সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সম্পাদক-সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই সব সংলাপের পাঁচ/ছয়টি দল ছাড়া প্রায় সব দল, ব্যাক্তিত্ব, বিশেষজ্ঞ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পরামর্শ দেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের ক্ষুদ্র দুই/তিনটি শরীক দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়।

তবে অধিকাংশ দলই ইভিএমের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে। আর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মহলও বাংলাদেশের নির্বাচনের দিতে তাকিয়ে রয়েছে। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন। তাই জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে এবং সে ভোট সঠিকভাবে গণনা করা যায় সে জন্যই অন্তত এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

‘ইসির সঙ্গে সংলাপে অধিকাংশ দলই সেনা মোতায়েনের পরামর্শ দিয়েছেন। সংলাপের সুপারিশ এবং সেনা মোতায়েন নিয়ে আপনাদের মনোভাব কী? এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, আমাদের এই মনোভাবটা কমিশন মিটিংয়ের আগে আমি বলতে পারবো না। আমাদের মনোভাব তো আমার মনোভাব হবে না। যেহেতু এটা নিয়ে কমিশনের সাথে এখনো আলোচনা করিনি। তাই এখনই বলা যাবে না, আমাদের কী মনোভাব।

জনগণ তো চায় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হোক; কমিশন কি জনগণের দিকটা বিবেচনা করবে নাকি নির্বাচন কমিশন যেটা সঠিক মনে করে সেই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে? এর জবাবে তিনি বলেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবো। কারণ জনগণ কিভাবে বলেন সেটা তো পরিমাপ করার কিছু নেই আমাদের কাছে। পরিমাপ করে তো বলতে পারি না যে কত সংখ্যক জনগণ চায় আর কত সংখ্যক জনগণ চায় না। সেটা একটা দিক আছে জনগণের কথা আমরা শুনি, আমরা বিবেচনা করি। তবে যে সিদ্ধান্ত আমরা নেব সেটা কিন্তু পুরোপুরি কমিশনের সিদ্ধান্ত।

একজন কমিশনার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কথা বলেছেন- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, আমি পত্রিকা পড়ে দেখেছি উনি বলেছেন এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত নয়। সেটা আমি লক্ষ করেছি। উনি মনে করেন যে সেনা মোতায়েন করার প্রয়োজন হবে। এটা তার একটা ব্যক্তিগত মতামত। উনি তো খুব বেশি ভুল বলেছেন মনে হয় না। এটা আমরা সময়মতো বলবো। সময়মতো অবশ্যই আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে জাতিকে জানাবো যে, আমরা কিভাবে করবো। মানে সেনা মোতায়েন কিভাবে করবো। সেনা মোতায়েন করার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত তা জানাবো আমাদের কমিশন মিটিংয়ের পর। তখন বিস্তারিতভাবে আলোচনা হবে সেনা মোতায়েনের অবস্থা নিয়ে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি। কমিশন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে আইন-শৃংখলাবাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করতে হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), সংবিধান ও সিআরপিসি সংশোধন করতে হবে।

সেনাবাহিনী হচ্ছে দেশ রক্ষা বাহিনী; এরা আইন-শৃংখলা বাহিনী না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন হবে নাকি অন্য কোনো পদ্ধতিতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন বিষয়ে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ইতোপূর্বে দেশে যতগুলো সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, প্রত্যেকটিতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন হয়নি।

সিইসি নূরুল হুদাকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয় রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে রংপুর সিটির ভোটের মধ্য দিয়ে জাতিকে কি কোনো বার্তা দেবেন? জবাবে তিনি বলেন, অবশ্য আমাদের প্রত্যেকটা নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো বটেই; অন্যান্য নির্বাচনও আমরা একেবারেই নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবো। জাতীয় নির্বাচনে যাতে মানুষের মধ্যে, ভোটারদের মধ্যে আমাদের প্রতি আস্থার অবস্থান সৃষ্টি হয়, আমরা সেজন্যই কাজ করে যাচ্ছি। সেই বার্তাটা কি রংপুর দিয়ে আসবে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সেই বার্তা তো শুরু হয়ে গেছে। জাতীয় পর্যায়ে দুটো নির্বাচন করলাম এবং ভবিষ্যতে যে নির্বাচনগুলো করবো রংপুর সিটি করপোরেশনসহ সবগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা সেই বার্তাগুলো পৌঁছে দিতে চাই।

রংপুরে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। প্রার্থীরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন সেই ব্যাপারে কমিশন কী বার্তা দেবে জানতে চাইলে নুরুল হুদা বলেন, যেহেতু দলীয়ভাবে নির্বাচন হবে, সেহেতু দলের এবং দলীয় প্রার্থীদের আচরণ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আচরণবিধি তারা মেনে চলবে এবং চলেছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে বলতে পারি যে, প্রার্থীগণ নির্বাচনী আচরণবিধি বিধান মেনে চলেছে এবং ভবিষ্যতে তারা মেনে চলবেন এটা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।

রংপুর নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না হয় সেজন্য স্থানীয় এমপি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রশাসনকে আপনারা কী পরামর্শ দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ১৯ তারিখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যারা আছেন তাদেরকে নিয়ে একটা মিটিং করবো। আমরা রংপুরে গিয়ে প্রার্থীদের সাথে কথা বলবো। যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তাদের সাথে সভা করবো। একাধিকবার তাদের সাথে আমরা মিলিত হবো। এর মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে বার্তা তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো।

ইনকিলাব

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin