সম্পদ জমা দিলেই মুক্তি পাচ্ছেন সৌদিতে আটক প্রিন্সরা

সৌদি আরবে সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী ধরপাকড়ে আটক হওয়া ব্যক্তিদের শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
কথিত দুর্নীতির অভিযোগে আটক রাজপরিবারের সদস্য ও ব্যবসায়ীদের তারা বলেছেন, সরকারকে নগদ অর্থ দিয়ে তারা মুক্তি পেতে পারেন।

আটক ব্যক্তিরা সরকারের এ প্রস্তাবে রাজি হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়বে কয়েকশ’ বিলিয়ন ডলার। এরই মধ্যে কেউ কেউ এ প্রক্রিয়ায় মুক্তিও পেয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

দুর্নীতি দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর ইতিমধ্যে দেশজুড়ে সহস্রাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুমকিও আলোচনায় এসেছে।

সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, তিনি অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলার অঙ্কের অর্থ নিয়ে তদন্ত করছেন। সৌদি রাজপরিবার থেকে ২০১ জনকে আটকের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা এরই মধ্যে ৫০০ ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে প্রিন্স, মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এবং দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন।
আটক ব্যক্তিদের তালিকায় রাজপরিবারের সদস্য এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী আল-ওয়ালিদ বিন তালাল এবং তার কন্যা প্রিন্সেস রিম বিন তালালের নামও রয়েছে।

অনেককেই রাখা হয়েছে রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে। ব্যাপক মারধর ও নির্যাতনের ফলে অন্তত ১৭ জনকে হাসপাতালে নেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের বেশিরভাগকে এখন অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। ধরপাকড়ের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ৭০ ভাগের কাছেই এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আটক কয়েকজন এ প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন।

এরই মধ্যে যুবরাজের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বিন নায়েফ, যিনি গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে সুলতান বিন আবদুল আজিজেরও। তার ছেলেদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েমের পথে যাদেরই অন্তরায় বলে মনে করছেন তাদেরই তিনি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছেন বা সরিয়ে দিচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এখানে আরও স্বচ্ছতা বা স্বাধীনতার বুলি আওড়ানো অবান্তর।

যুগান্তর

নজিরবিহীন ঘটনা: সৌদি পত্রিকায় ইসরাইলি সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত

ইরানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইসরাইল এবং সৌদি আরব পুরোপুরি ঐকমত্যে অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল গাদি ইসেঙ্কট। বৃহস্পতিবার সৌদি একটি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া অভূতপূর্ব এই সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ইসরাইল ও সৌদি আরব কখনোই একে অপরের সঙ্গে লড়াই করে না।

প্রথমবারের মতো ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কোনো সিনিয়র কর্মকর্তা সৌদি কোনো মিডিয়াকে এই ধরনের সাক্ষাৎকার দিলেন। হারেজ লিখেছে এটি সৌদি আরবের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা । আর আগে এমনটা হয়নি । যদিও ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

সৌদি অনলাইন সংবাদপত্র ‘ইলাপ’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইসেঙ্কট ইরানকে ‘এই অঞ্চলের জন্য প্রকৃত ও বড় হুমকি’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ইরানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইসরাইল এবং সৌদি আরব পুরোপুরি ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

ইসরাইলের এই সেনাপ্রধান ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, অস্ত্র কারখানা নির্মাণ এবং মধ্যপ্রাচ্যেজুড়ে গেরিলা ও সন্ত্রাসী সংগঠনকে উন্নত অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে ইরান এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, ‘লেবানন থেকে ইরান পর্যন্ত একটি শিয়া ক্রিসেন্ট তৈরির মাধ্যমে ইরান মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে চাচ্ছে এবং তারপর পারস্য উপসাগর থেকে লোহিত সাগরের দিকে অগ্রসর হতে চাইবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটি যাতে না ঘটে তার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

ইসেঙ্কট বলেন, ‘লেবাননে হিজবুল্লাহর উপর হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের নেই। আমরা ইরানী প্রচেষ্টাকে উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টা হিসেবে দেখছি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি তাদের জন্য খুব বেশি সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না।’

তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘হঠাৎ করেই স্থানীয় বিস্ফোরণ ঘটলে তা ব্যাপক কৌশলগত সংঘাতের দিকে পরিচালিত করতে পারে।’

ওই সাক্ষাত্কারে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ওঠে আসে। এরমধ্য রয়েছে দুই সপ্তাহ আগে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দুঃখজনক পদত্যাগ এবং সৌদি আরবে রাজপুত্র, মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার; সৌদি আরব কর্তৃক সরাসরি জনসাধারণকে হুমকি এবং ইরান ও হিজবুল্লাহকে নিয়ে ইসরাইলের লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয় স্থান পায়।

এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে আমেরিকা এবং রাশিয়ান সরকারের মনোভাব নিয়েও ইসেঙ্কট মন্তব্য করেন।

ইরান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণাকে তিনি স্বাগত জানান। ট্রাম্প তার ওই ঘোষণায় বলেছেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সমাপ্তিটানা এবং সিরিয়া ও ইরাকের ওপর ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলা করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘আমি ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে এই অঞ্চলের জন্য একটি আশা হিসাবে দেখছি।’

ইসরাইলের শীর্ষ এই সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে এই অঞ্চলের জন্য একটি নতুন আন্তর্জাতিক জোট গঠনের সুযোগ রয়েছে। ইরানের হুমকি রুখতে আমাদের একটি বড় এবং কৌশলগত পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। ইরানকে মোকাবেলা করার জন্য গোয়েন্দা তথ্যসহ মধ্যপন্থী আরব দেশগুলোর সঙ্গে আমরা তথ্য বিনিময় করতে ইচ্ছুক।’

সৌদি আরবের সঙ্গে ইতোমধ্যে এই ধরনের তথ্য বিনিময় হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে ইসেঙ্কট বলেন, ‘প্রয়োজন হলে তাদের (সৌদি) সঙ্গে আমরা তথ্য শেয়ার করতে ইচ্ছুক। আমাদের এই দুই দেশের মধ্যে অনেক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইরান সম্পর্কে ইসরাইল এবং সৌদি আরবের মনোভাব একই রকম। আমি ওয়াশিংটনে চিফ অব স্টাফদের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং সেখানে সৌদি রাষ্ট্রদূত যা বলেছিলেন তা আমি শুনেছি। ইরান বিষয়ে আমরা যা মনে করি তার ওই বক্তব্য ছিল তারই প্রতিধ্বনি। আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে তাদের (সৌদি) সঙ্গে চুক্তি করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি হচ্ছে হিজবুল্লাহসহ ইরান ও তার মিলিশিয়া বাহিনীকে সিরিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমরা খোলাখুলিভাবে, শান্তভাবে এবং গোপনে সবভাবেই বলেছি যে, আমরা সিরিয়ায় ইরানের একত্রীকরণকে কখনোই গ্রহণ করবো না এবং ইরানের মনোযোগ দামেস্কেসের পশ্চিমাঞ্চলের ‘সউদা রাড’; যেটি আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। আমরা ইরানের কোনো ধরনের উপস্থিতিকে অনুমোদন করবো না। কারখানা বা সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের বিরুদ্ধে আমরা তাদের সতর্ক করে দিয়েছি এবং আমরা তা অনুমোদন করবো না।’

লেবাননের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে ‘জটিল’ হিসাবে বর্ণনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রিয়াদ থেকে হারিরির পদত্যাগের পদক্ষেপটি ছিল বিস্ময়কর। তবে আমি দেখতে পাচ্ছি যে হিজবুল্লাহ এখন আর্থিক চাপ অনুভব করতে শুরু করেছে। তারা এখন গুরুতর সমস্যার মধ্যে পতিত হয়েছে। এছাড়াও, আমরা হিজবুল্লাহর সমর্থনে ভাটা পড়ার বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি এবং হিজবুল্লাহকে সমর্থনকারী জনগণ ও দাহিয়ায় (বৈরুতের একটি শিয়া আশ্রয়কেন্দ্র) বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী জনগণের মধ্যেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এটা এমন কিছু যা আমরা অতীতে দেখিনি।’

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আমেরিকা ও রাশিয়ার নীতিমালাকে ইসরাইল কিভাবে দেখে সে বিষয়েও তিনি মত ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘আমেরিকান সৈন্যদের এই অঞ্চলে নিয়ে আসা কিংবা কোনো স্থল যুদ্ধ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের সুন্নি অক্ষকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে এবং তাদের সমর্থণ দিয়ে যাচ্ছে। একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে রাশিয়ারও একটি নীতি রয়েছে। আর তা হলো কেবল সিরিয়ার মধ্যে রাশিয়ান স্বার্থ দেখা।’

তিনি আরো বলেন, ‘সব পক্ষের সঙ্গে মিল রেখে কিভাবে চলতে হয় রাশিয়ানরা তা ভাল করেই জানে। তারা এক দিকে আসাদ, ইরান এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে জোট তৈরি করেছে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।’

তিনি বলেন, ‘আইএসকে গুরুতরভাবে পেটানো হয়েছে এবং সংগঠনটি খুব শিগগিরই নির্মূল হয়ে যাবে। তবে সিরিয়া ও এই অঞ্চলের অন্যান্য অংশে তাদের আদর্শ ও ধারণা ভিন্ন কোনো নামে আবারো ফিরে আসতে পারে।’

তিনি সিরিয়ার যুদ্ধে ইসরাইলের না জড়ানোর দীর্ঘমেয়াদী নীতিও ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি পরিষ্কার নীতি রয়েছে। যতক্ষণ না আমাদের ‘ডুরজ’ ভাইদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সিরিয়ার যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করব না। আমরা ‘খাদেরে’ হস্তক্ষেপ করেছি। আমরা হারমন পর্বতে আমাদের ট্যাংক প্রস্তুত রেখেছি এবং আল-নুসরা ফ্রন্টকে সতর্ক করে দিয়েছি যে, তারা যদি খাদেরে প্রবেশ করে, তবে আমরা তাদের আক্রমণ করব। এই হুমকি কাজে দিয়েছে।’

ইসরাইল আল-নুসরাকে সহায়তা দিচ্ছে কিনা- জিজ্ঞাসা করা হলে ইসেঙ্কট এই দাবিকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি বলেন, ‘আইএসের মতোই আল-নুসরা এবং তার সমর্থকরা আমাদের শত্রু। আমরা তাদের উপর একাধিকবার আক্রমন করেছি। আমরা গোলানের গ্রামবাসীকে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছি এবং আমরা আমাদের ডুরজ ভাইদের সাহায্য করেছি। আমরা শুধুমাত্র মানবিক উপায়ে সাহায্য করি।’

হারেৎজ অবলম্বনে

Check Also

মুখ ফিরিয়ে নিলেন আত্মীয়স্বজন, হিন্দু বৃদ্ধের সৎকার করলেন মুসলিম যুবকরা

বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় ভারতের বুলন্দশহরের বাসিন্দা রবিশংকরের। অথচ প্রতিবেশীরা মনে করেন করোনা সংক্রমণের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin