সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেছে মুক্তামণি

চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে এবং দেশের সব মানুষের ভালবাসার মায়া কাটিয়ে বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামনি মারা গেছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বুধবার সকালে আজ সকালে নিজ বাড়িতে মারা যায় মুক্তামনি। মুক্তামনির নানা ফকির আহমেদ বলেন, ‘আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের নিজ বাড়িতে সে মারা যায়।’

উল্লেখ্য, গত বছর সংবাদমাধ্যমে মুক্তামনি বিরল রোগে আক্রান্ত এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর অনেকে মুক্তার চিকিৎসায় হাত বাড়ান। পরে মুক্তামনির চিকিৎসার সব ধরনের খরচের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর গত বছরের ১২ জুলাই রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামনিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

প্রথমে তার রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে বায়োপসি করে জানা যায়, তার রক্তনালীতে টিউমার হয়েছে। তখন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা। মুক্তামনির সব রিপোর্ট দেখে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান।

এরপর ঢামেকের চিকিৎসকরাই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এর পর মুক্তামনির হাতে ৫ আগস্ট প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। প্রথমে তার হাতের ফোলা অংশে অস্ত্রোপচার করে তা ফেলে দেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল মুক্তামনির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন।

পরে মুক্তামনির হাত আবার ফুলে যাওয়ায়, ফোলা কমানোর জন্য হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর প্রায় পাঁচ মাস পর গত ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এক মাসের ছুটিতে বাবা-মার সঙ্গে মুক্তামনি নিজ বাড়িতে ফিরে।

মুক্তমনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন সোমবার রাতে জানান, রক্তনালি টিউমারে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামনি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। হাত অনেক ফুলে গেছে। হাতের ফোলা অংশ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে আবারও। কথাও বলছে না।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অর্থো সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. হাফিজ উল্লাহ বলেন, ‘মুক্তামনির জেনারেল কন্ডিশন খুবই খারাপ। রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে। তার হাতের যে টিউমার অপারেশন করা হয়েছিল, সেটা আবার বড় আকার ধারণ করেছে। টিউমারে দুই/তিনটি ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন ওর শরীরে অনেক জ্বর ছিল। সকাল থেকে খাওয়া-ধাওয়া করেনি। জ্বর সারাতে ওষুধ লেখে দিয়েছি। ওর যে অবস্থা সাতক্ষীরাতে সেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। সেজন্য ঢাকায় পাঠাতে পরামর্শ দিয়েছি।’

মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘সোমবার সকাল ১১টার পরে মুক্তামনির শরীরের তাপমাত্রা বেশি দেখে ডা. সামন্ত লাল সেন স্যাররে ফোন করি। তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের একজন কনসালটেন্ট ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে পাঠান মুক্তার শরীরের অবস্থা দেখতে। তারা মুক্তামনির জ্বরের জন্য ওষুধ লিখে দেন।

কিন্তু সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনিকে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin