faruk

সকালে নির্বাচন ডিক্লেয়ার করলে বিকেলে ‘উই আর রেডি’

প্রকৃতিতে শীতের হিমেল হাওয়ার পরশ থাকলেও দেশের নির্বাচনী আবহাওয়া উষ্ণ। বর্তমান সরকারের মেয়াদপূর্তির সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তাপ বাড়ছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো এখন ব্যস্ত যার যার মতো করে চূড়ান্ত হিসেব কষতে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতারাও নিজেদের জানান দিতে শুরু করেছেন, বিভিন্নভাবে নিজেদের মেলে ধরছেন।

আগামী নির্বাচন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজ’র কথা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক চিফ হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল আবদিন ফারুকের সঙ্গে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির অন্যতম এ নেতা জানান, সকালে তফসিল ঘোষণা হলে ওইদিন বিকেলেই তারা প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘সকালে নির্বাচন ডিক্লেয়ার করলে বিকেলে উই আর রেডি।’

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনে আসা নিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা যে কারণে যাইনি সে কারণটি আবারও তারা (আওয়ামী লীগ) পুনরাবৃত্তি করতে চাচ্ছে। তারা সংবিধান-সংবিধান বলছে। সংবিধান, এটা তো পরিবর্তনশীল। সংবিধান তো আল্লাহর কোরআন না যে এটা অমিট করতে পারবো না, ডিলে করতে পারবো না।

সে কারণে তারা ২০১৪ সালে বিএনপির মতো বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে যে নির্বাচন করেছিল; সেই নির্বাচন তারা গায়ের জোরে, পুলিশি সহযোগিতায় নিপীড়ন-নির্যাতন করে প্রায় শেষপর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তবু বেগম খালেদা জিয়া দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে অনেক কিছু সহ্য করেছেন। তাদের (সরকারি দল) অত্যাচার-অবিচারে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারিনি।

আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা-গুম করা হচ্ছে, হামলা-মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করা হচ্ছে। তবুও আমাদের চেয়ারপারসন সমঝোতার ডাক দিয়েছেন। এখনো সমঝোতার দ্বার খোলা আছে। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এজন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে একটি নিরপেক্ষ বা সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

ফারুক বলেন, আমরা মনে করি ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি করে যদি আরেকটি নির্বাচন হয়, সে নির্বাচন দেশের মানুষ বা বিশ্বদরবারের কেউ মেনে নেবে না। গায়ের জোরে কতক্ষণ থাকা যায়? সবসময় থাকা যায় না। আমি মনে করি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। যদি আওয়ামী লীগ সরকার মনে করে দেশে শান্তির আবহ বজায় থাকুক সেক্ষেত্রে জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের নেগোসিয়েশনে বসা। তাহলে একটা শান্তির পথ উন্মুক্ত হতে পারে- এটাই আমার বিশ্বাস।

‘একদিকে রাজনৈতিক সমঝোতা, অন্যদিকে আন্দোলনের হুমকি’; নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান কি এটাই- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বিএনপির শিখতে হবে না। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ প্রাচীন দল হলেও বিএনপির কাছে তাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বিএনপিকে তারা বলে নব্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠিত দল।

কিন্তু জিয়াউর রহমান যে দল গঠন করে গেছেন; তারা (আওয়ামী লীগ) বলেন, তাদের মধ্যে মুসলিম লীগ, ন্যাপ, বিভিন্ন দলছুট নেতাদের নিয়ে উনি (জিয়াউর রহমান) একটা সংগঠন তৈরি করেছেন। সেই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।

ফারুক বলেন, কেউ বাঙালি বলে। এখানে কিন্তু বাঙালি বলতে আমরা বলি শুধু বাঙালি জাতি। যারা বাংলায় কথা বলে। কিন্তু এখানে তো অনেক নৃ-গোষ্ঠী আছে, তারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলেন। এই যে আমরা বলি উই আর এ বাংলাদেশি। সে কারণে জিয়াউর রহমান এ কথাগুলো বলে গেছেন। সে কারণটুকু তারা বুঝে গেছেন যে, আমরা রাইটিস্ট দল। আসলে আমরা নট-রাইটিস্ট।

আমরা একটা মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল। সব দলের সঙ্গে, সব মতের সঙ্গে, সব ধর্মের সঙ্গে একটা সহানুভূতিশীল সমন্বয় করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদটা টিকিয়ে রাখলেই বাংলাদেশে নিরপেক্ষ সরকার বা জাতীয়তাবাদী সরকার গঠন হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আওয়ামী লীগ থেকে আমাদের শিখতে হবে না। আওয়ামী লীগকে আমাদের কাছ থেকে শিখতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগের হাতে স্বাধীনতার পর গণতন্ত্র নির্মমভাবে নিহত হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে পার্লামেন্টকে। বাকশাল গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পাকিস্তান আমলের বক্তৃতা আমাদের মনে আছে। তখন আমরা ছাত্রলীগ করতাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে আমরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। তখন আলোচনার নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন সময় নষ্ট করা হয়েছে।

এ সুযোগে পাকিস্তান তার বর্বর সেনাবাহিনীকে এ দেশে আনার সুযোগ পায়। তখন ইয়াহিয়া খানকে সাফ বলে দেয়া যেত, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। আজকের মধ্যে ক্ষমতা না দিলে তোমার সঙ্গে আসসালামু আলাইকুম। যেটা মওলানা ভাসানী বলেছেন। তারা এটা বলতে পারত। কিন্তু না বলে তাদের কেউ কেউ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।

জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘আমি মনে করি আওয়ামী লীগ তখন ভুল করেছিল কিন্তু তারা সেটা স্বীকার করে না। তারা ওই সময় বলছিল, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। সে মুক্তিটা কি অর্থনৈতিক মুক্তি, যেটা আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বলে আসছি।’

‘তোমরা (পশ্চিম পাকিস্তান) যে আমাদের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য করছ, আমাদের শোষণ করছ, তোমাদের দেশে স্বর্ণের এক দাম আর আমাদের দেশে আরেক দাম, তোমার দেশে চালের দাম চার টাকা কেজি আর আমার দেশে ১০ টাকা- এসব কথা বলেই তো শোষকদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। ১০ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ, তারা একটা স্বাধীনতার সপক্ষের দল- এটা আমরা অস্বীকার করি না।’

নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগের শুরুতেই দেশ পরিচালনার যে ব্যর্থতা, ৭৩ সালের নির্বাচনে হেলিকপ্টারে করে তারা ভোটের বাক্স এনে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল, যে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং- আমরা তা দেখেছি। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল হতে পারে কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে তারা চায় না বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র পরিচালনা করুক।

তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায়। তারাই স্বাধীনতা ঘোষণাকারী, তারাই স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী, তারাই স্বাধীনতা এনেছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা এখানে নেই- এ অহঙ্কার যতদিন না আওয়ামী লীগের কাঁধ থেকে যাবে, ততদিন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত হবে না।

ফারুক আরও বলেন, ‘আমি মনে করি আওয়ামী লীগ দুই টার্ম পার্লামেন্ট করেছে। তাদের আর দরকার নেই। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে ‘গুড এক্সিট’ নিয়ে চলে যাক। আমি ক্ষমতায় যাব সেটা কথা নয়। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনে সাম্যবাদী দল ক্ষমতায় আসলেও আমি তাদের সাপোর্ট করব।’

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin