nurul_huda

সংসদ ভেঙে নির্বাচনে সিইসি’র আপত্তি নেই!

আগাম নির্বাচন চাইলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। বর্তমান সংবিধানের অধীনে সংসদ না ভেঙে আগাম নির্বাচন করা যাবে না। তাই আগাম নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার একটি রুটিন মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে অল্পবিস্তর কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সর্বদা নির্বাচনে প্রস্তুত থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই ইসিকে প্রশ্ন করা হলে তারা বলবেন, আমরা প্রস্তুত। কিন্তু দেশের বিরাজমান বাস্তবতায়, হিসাব-নিকাশের প্রশ্ন নাকচ করা যায় না।

বেশ কয়েকটি সাংবিধানিক সংস্থার নিবিড় সম্পৃক্ততা দরকার পড়ে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে। উপরন্তু মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তুতি সত্যিই আছে কিনা তা এক বিরাট প্রশ্ন। কারণ ইসি আগে বলেছে, তারা সংলাপে পাওয়া মতামত বিবেচনায় নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করবেন। কিছু বিষয় তারা নিজেরাই বাস্তবায়ন করবেন। কিছু বিষয়ে তারা আইন সংশোধনে সরকারের কাছে সুপারিশ রাখবেন। সেসব এখনো বাকি। অথচ এখন তারা বলছেন, ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে প্রস্তুত।

তিনি কি জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে সংসদ ভেঙে না সংসদ রেখে নির্বাচন- সেই প্রশ্নকে তাতিয়ে তুলছেন? তিনি কি সংসদ ভেঙে নির্বাচন করাকেই অধিকতর কাঙ্ক্ষিত ও অপরিহার্য মনে করছেন? অবশ্য কারো মতে সিইসি’র মন্তব্যের হয়তো আদৌ কোনো তাৎপর্য নেই। তিনি নেহাৎ বলার জন্য বলেছেন। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সিইসি কিছু বিবেচনা করে বলুন আর নাই বলুন, আগাম নির্বাচন আর সংসদ ভেঙে দেয়া সমর্থক।

সংসদ না ভেঙে কোনোভাবেই আগাম নির্বাচন করা যাবে না। বৃটেনের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীরাও অনেক সময় সুবিধামতো সময় খুঁজেছেন। বিরোধী দলের কাজ নিজেরাই কৌশলে করেছেন। আগাম নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে একটা অজুহাত তৈরি করে সংসদ ভেঙে দিতে রানীকে পরামর্শ দিয়েছেন। বৃটেনের সাম্প্রতিক ইতিহাসেও বিরোধী দল নির্বাচন না চাইতে এবং মেয়াদের অনেক আগেই সাধারণ নির্বাচন করার নজির আছে।

বৃটেনে ক্ষমতাসীন দলের প্রধানমন্ত্রী যাতে নিজের ও দলের সুবিধায় সংসদ ভেঙে না দিতে পারে সেজন্য ফিক্সড টার্মস পার্লামেন্ট আইন পাস করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সংবিধানে সংসদ রেখে বা না রেখে নির্বাচন করার বিধান আছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ বলেছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ- অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে: তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।

(৪) সংসদ ভাঙিয়া যাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্য পদ শূন্য হইলে পদটি শূন্য হইবার নব্বই দিনের মধ্যে উক্ত শূন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’

অধিকাংশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক একমত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংসদ রেখেই নির্বাচন দিতে আগ্রহী। সাম্প্রতিক রাজনীতিতে বিএনপি বা অন্য কোনো দল আগাম নির্বাচন চায়নি। সরকারি দলও আগাম নির্বাচনের কথা বলেনি। বরং বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নির্দিষ্ট করে গত সপ্তাহে বলেছেন, ২০১৮ সালের শেষাশেষি বর্তমান সংসদের মেয়াদ পূরণের ৯০ দিন আগে নির্বাচন হবে।

এতেও পরিষ্কার যে, সরকারি দল সংসদ রেখেই নির্বাচন করবে। এই প্রেক্ষাপটে সব থেকে জোরালো যে ধারণার ওপর আলো পড়েছে সেটা হলো তিনি শুধু প্রশ্নের পিঠেই রুটিন উত্তর দিয়েছেন কি দেননি। কারো মতে, তিনি স্রেফ রুটিন উত্তর দিয়েছেন। বরং তিনি পরিষ্কার করেছেন যে, বিরোধী দলের সংস্কার প্রস্তাবের কোনো কিছু বিবেচনা না করলেও তিনি সরকারি শর্তে একটা নির্বাচন করিয়ে দিতে প্রস্তুত আছেন। সেদিক থেকে তার বক্তব্য সরকারি দলকে অধিকতর স্বস্তি দেয়ারই কথা?

সিইসি বলেছেন, সরকার আগাম নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার চাইলে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুত রয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ কথা বলেন।

আগাম নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘সরকারের ওপর নির্ভর করে আগাম নির্বাচনের বিষয়টি। তারা যদি আগাম নির্বাচনের ব্যাপারে বলে, তখন আমরা পারবো। ৯০ দিনের সময় আছে। আমাদের ব্যালট বাক্স, যা যা দরকার হাতে আছে, শুধু পেপারওয়ার্কগুলো করা লাগবে।’

এর আগে নির্বাচন ভবনে ইসি’র সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিংক। বৈঠকের বিষয়ে সিইসি বলেন, ইসি’র ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ আস্থা আছে। ইসি ইইউকে আশ্বস্ত করেছে, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ বিষয়ে কোনো আপস হবে না।

উল্লেখ্য যে, ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে আলাপ-আলোচনা করেছে তাতে অধিকাংশ দলই সংসদ ভেঙে নির্বাচনের দাবি তুলেছে। কিন্তু সিইসি বা কমিশনারদের কেউ এখনো পর্যন্ত অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে সংসদ ভেঙে না রেখে সংসদ নির্বাচন করা উচিত সে বিষয়ে মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত রয়েছে।

যদিও বিরোধী দলের অভিযোগ রয়েছে যে, যারা ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ তারা প্রার্থী হিসেবেও প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটাতে পারেন। সংবিধান বিশারদরা মনে করেন ইসি চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের আওতায় সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ প্রদানের এখতিয়ার রাখেন। কিন্তু সেটা রাখা না রাখা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাধীন।

উৎসঃ   মানবজমিন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin