বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করলে জনগণ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে না। তাই সংসদ বহাল ও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
রবিবার বিকেলে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে রবিবার বিকাল সাড়ে চারটায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা দলের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল ও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের সমাপনী পর্বে পৌঁছেন খালেদা জিয়া।
সরকার পাকিস্তানিদের কায়দায় চলছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘একই অবস্থায় আজকে দেশ গণতন্ত্রহীন। দেশে নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন হয় না।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এলডিপি সভাপতি কর্নেল অব. অলি আহমদ, মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছেন, এটা নিয়ে সবসময় আওয়ামী লীগ হীনম্মন্যতায় ভোগে। তারা সত্যটাকে গোপন করে। শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন— দেশ ও দেশের মানুষ এটা জানে। তার ঘোষণায় সাড়া দিয়েই সারাদেশে মানুষ, সিপাহীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো।’
খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশের অনুমতির ব্যাপারে বিড়ম্বনার অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, রবিবার দুপুর ১২টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের ভয় পায়। তারা মানুষকে সম্মান দিতে জানে না। তাই দেশের মানুষও এখন আওয়ামী লীগকে সম্মান করে না।’
এর আগে রবিবার বেলা ১২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা দলের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল ও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের উদ্বোধন করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সমাবেশে অনুমতি নিয়ে সরকার গড়িমসি করেছে বলে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য হয়, মুক্তিযোদ্ধা দল আজকের এই অনুষ্ঠানটি পালন করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে যখন অনুমতি চেয়েছে, তখন তাদের সঙ্গে অনেক রকম গড়িমসি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে মুক্তিযোদ্ধের সমাবেশের অনুমতি নিয়ে সরকার গড়িমসি করে। মাইক ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না, হল ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। এখানে আমাদেরকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। আশা করব, ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধা দলের কোনো অনুষ্ঠানে সরকার বা সরকারের প্রশাসন কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘকাল ধরে তারা দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা যে চেতনা ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনার সঠিক ইতিহাস জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে সাফল্যের সঙ্গে কাছ করছে মুক্তিযোদ্ধা দল।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা দল সঠিক আদর্শ তুলে ধরার কাজ করছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানোর কাজ করে চলেছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে চলেছে। তারা আমাদের কাছে নমস্য। কারণ তারা জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহ্বানে যারা স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এবং অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল সেই সংগঠন।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা দলে অনেক সেক্টর কমান্ডার রয়েছেন, অনেক বীর উত্তম, বীর প্রতীক, বীর বিক্রম রয়েছেন; যারা অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশকে স্বাধীন করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের এই মাসে কাউকে ছোট করতে চাই না, খাটো করতে চাই না, আমরা ডেবিলসকে তার শেয়ার দিতে চাই, এই আদর্শ আমরা শিখেছি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে।
তারা আওয়ামী লীগ তারা মুক্তিযুদ্ধকে একটা সেলফ প্রোডাক্টে পরিণত করেছে, ধর্ম ব্যবসায়ীরা যেভাবে ধর্মকে তাদের ব্যবসায় পরিণত করে আজকে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাকে, মুক্তিযুদ্ধ তাদের রাজনৈতিক একটা প্রোডাক্টে পরিণত করতে চাইছে। তারা ভাগ করে ফেলেছে দেশকে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি, তারা বলে যে, তারাই নাকি একমাত্র মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের শক্তি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।