বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, গত নির্বাচনের আগে সংলাপের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ, আর সে কারনে এবার হয়তো আর সংলাপ হবে না। বিএনপি বলার জন্য বলে সংলাপ হতে হবে। তারা নির্বাচনে আসবেই।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগনের আস্থা’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ১১তম যে আমাদের সংসদ হতে যাচ্ছে, সে নির্বাচনে বিএনপি আসবেই। এখন ধরেন বলার জন্য তারা বলে সংলাপ হতে হবে। সংলাপ তো আমরা চেষ্টা করে আমরা প্রত্যাখ্যাত হয়েছি। সে জন্য আর হয়তো সংলাপের উদ্যোগ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধান অনুসারেই নির্বাচন হবে। সুতরাং আমরা আশা করি সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে।’
নির্বাচনে যারা পরাজিত হয় তারা সবসময়ই কারচুপির অভিযোগ করে বলে অভিযোগ করেন মন্ত্রী। বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে সব দেশেই এখন র্নিবাচনে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। তারপরও যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তারা নির্বাচনে অংশ নেয়।
দেশের মানুষ এখন সচেতন, তাই যারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক আগামী নির্বাচনে মানুষ তাদেরই নির্বাচিত করবে বলেও মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ।
‘রাজনীতিতে ব্যর্থরা নির্বাচনেও ব্যর্থ’ বিএনপিকে তোফায়েল
বিএনপির কথার কোনো মূল্য নেই মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সবাই বলেছে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভালো হয়েছে। বিএনপি বলছে ভালো হয়নি।
তিনি বলেন, মানুষ এখন বুঝে গেছে বিএনপির কথার কোনো মূল্য নেই। তারা বিগত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যেমন ব্যর্থ হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও অংশ না নিলে ব্যর্থ হবে। যারা রাজনীতিতে ব্যর্থ তারা নির্বাচনেও ব্যর্থ হবে।
(গত ২২ ডিসেম্বর) শুক্রবার সকালে ভোলা শহরের গাজিপুর রোডের নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।
এছাড়াও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব, যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক আরজু, ভোলা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম গোলদার, প্রেসক্লাব সভাপতি এম হাবিবুর রহমান, সাবেক সভাপতি আবু তাহের প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে। এগিয়ে যাবে। বিশ্বের উন্নত ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট জয়লাভ করবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের যে কোনো দিন ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সবদিক থেকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। এ দেশ এখন উদীয়মান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশ। আমরা ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করেছি। দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তরিত হতে চলেছে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরিত হবো। তখন বাংলাদেশ হবে একটি ভিন্ন বাংলাদেশ। আর ২০৪১ সালে আমরা হবো একটি উন্নত দেশ।
মন্ত্রী বলেন, ভোলাও অর্থনৈতিকভাবে একটি উন্নত জেলা। এ জেলায়ও ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। ১৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করে ভোলার নদী ভাঙন রোধ করা হয়েছে। অথচ বিএনপির আমলে ভোলায় দুইজন পানিসম্পদ মন্ত্রী থাকাকালে নদী ভাঙন রোধে কিছুই করেনি। তারা শুধু উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে। বর্তমানে রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য ৪৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে ভোলায় কোনো কাঁচা রাস্তা থাকবে না। ২০১৮ সালের মধ্যে ভোলার প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে।
সিনিয়র এ মন্ত্রী বলেন, অচিরেই ভোলা হবে বাংলাদেশের ভেতর সর্বশ্রেষ্ঠ উন্নত ও সমৃদ্ধ শিল্পনগরী জেলা। এ জেলা হবে বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর। কারণ ভোলায় পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। সেই গ্যাস দিয়ে গ্যাসভিত্তিক শিল্প, কল-কারখানা স্থাপন করা হবে। শিল্প-কারখানা করার জন্য ইতোমধ্যে এখানে জমি বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে। দেশ-বিদেশের অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পদ্যোক্তা ভোলায় জমি কিনে শিল্প, কল-কারখানা স্থাপন করেছে। শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য অনেক ব্যবসায়ী ভোলায় জমি ক্রয় করেছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভোলাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন রয়েছে। এমন দিনও আসবে যেদিন সরাসরি ঢাকা থেকে পদ্মা ব্রিজ পার হয়ে ভোলা-বরিশাল ব্রিজ পার হয়ে ভোলায় আসা যাবে। ভোলা-বরিশাল সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। ভোলা-বরিশাল ব্রিজ স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ভোলা-বরিশাল সড়ক যোগাযোগের জন্য ব্রিজ স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত ভোলা-বরিশাল সড়ক স্থাপিত হবে। ভোলা-বরিশালের ব্রিজ স্থাপিত হলে মাত্র দুই ঘণ্টায় ভোলা থেকে বরিশাল যাওয়া সম্ভব হবে। ঢাকা যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪-৫ ঘণ্টা। রাজনৈতিকভাবেও ভোলা খুব শান্ত। এখানে আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।
ভোলায় ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। এখানে আরো একটি প্রতিষ্ঠান ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপিত হবে। এ ছাড়া এখানে দেড়শো মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। ভোলার সঙ্গে বরিশালের পায়রা বন্দরের সঙ্গে ভোলার যোগাযোগ উন্নত হবে। কারণ ভোলা থেকে পায়রা বন্দরে যেতে সময় লাগবে মাত্র দুই ঘণ্টা।