একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নেয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। সেগুলোর বাস্তবায়ন করতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২০০ আসনে এমপিদের টিকেট নিশ্চিত করে নিজের কম্পিউটারে রেখেছেন। এমনটাই জানিয়েছে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র।
আওয়ামী লীগ পরিকল্পনা হচ্ছে, সব আসনে জোর না দিয়ে ২০০ আসনে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। দলটির নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে সরকার গঠন করার জন্য ১৫১ আসনই যথেষ্ট। সুতরাং ৩০০ আসনের পেছনে না দৌঁড়ে ২০০ আসনে ভালো প্রার্থী বাছাই করে এর পেছনে অর্থ, রাজনৈতিক শক্তি এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে অর্জিত প্রশাসনিক সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। বাকি ১০০ আসন জোট-মহাজোটের জন্য বিবেচনা করা।
সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক দিন ধরেই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ও দলীয়ভাবে নানা জরিপ চালানো হচ্ছে। এসব জরিপের ফল নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে নেতারা অল্পস্বল্প যা জানছেন, তাতে জরিপের ফল খুব আশাবাদী হওয়ার মতো নয় বলে অনেকের ধারণা।
অবশ্য গত ১১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে তিনি জরিপ করেছেন। জরিপের ফল এত ভালো এসেছে যে ভোট হলে ২০০৮ সালের চেয়েও বেশি ভোট পাবে আওয়ামী লীগ।
গত এক বছরে যে তিনটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে কেবল নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। কুমিল্লায় বিএনপি ও রংপুরে জাতীয় পার্টি জয়ী হয়। এই ফলাফলকেও জনপ্রিয়তার একটা মাপকাঠি মনে করেন অনেক নেতা। শনিবারের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশে টানা তিনবার জয়ী হওয়া কঠিন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব। এ জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, দলীয় কোন্দল নিরসন ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের নেতৃত্বে ১২টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলকে কাছাকাছি কয়েকটি জেলা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে তারা জেলায় জেলায় সফর শুরু করবে। এরপর উপজেলা পর্যায়ে যাবে। সরকারের চার বছর পূর্তির দিন ১২ জানুয়ারি থেকেই এই সফর শুরু হচ্ছে।
চলবে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভাগীয় শহরগুলোতে সফর শুরু করবেন ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। শুরুতেই তিনি বরিশাল, সিলেট ও রংপুর যাবেন। এ বিষয়গুলো শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়।
বৈঠকে ছিলেন এমন একাধিক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ছয় মাস অন্তর প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে জরিপ করছেন। ১২টি দলকে সাংগঠনিক সফরে গিয়ে প্রচারের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তা লিখিতভাবে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব জরিপ সমন্বয় করেই প্রার্থীদের আগেভাগে মাঠে নামার নির্দেশনা দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ চলছে। তৃণমূল থেকেও নাম চাওয়া হবে। প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটা আগে থেকে শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন এলে অনেক প্রার্থী নেমে টাকা খরচ করা শুরু করেন। এতে নেতা-কর্মীরাও নানা লোকের পেছনে ছুটতে থাকেন। একটু আগে প্রার্থী ঠিক করে দেওয়া হলে তাঁকে নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়।
পূর্বপশ্চিম