khaleda-hasina

শেখ হাসিনাকে এবার কি প্রতিদান দিবেন খালেদা?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবথেকে উদারতম ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাজনীতিতে তিনি মহানুভবতা, ক্ষমা এবং অন্যকে দান করার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা নজিরবিহীন।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষণ করলে যে জিনিসটা দেখা যায় যে, তিনি শুধু দিয়েছেন, তাঁকে কেউ প্রতিদান দিয়েছে এই হিসেব খুবই কম এবং দু-একজন ছাড়া শেখ হাসিনা কাউকে কৃতজ্ঞতা জানাবেন- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

যারা শেখ হাসিনার জন্য এতটুকু করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে শেখ হাসিনা জীবন উজাড় করে দেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ঘটনা যখন ঘটে, তখন শেখ হাসিনা ছিলেন জার্মানীতে। সেসময় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী যে মমতা দেখিয়েছিলেন, সেই ঋণ তিনি শোধ করেছেন সারা জীবন দিয়ে। 

শেখ হাসিনা বোধহয় এরকমই মানুষ। আমরা যদি শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার দ্বৈরথ বিশ্লেষণ করে দেখি, তাহলে দেখা যাবে তাঁদের দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মাঝে শেখ হাসিনা বারবার খালেদা জিয়ার বিভিন্ন উপকার করেছেন।

আর এই উপকারের প্রতিদান তিনি পেয়েছেন তিক্ততা, হিংসা, কুৎসিত আক্রমণ এবং নোংরামির মধ্য দিয়ে। এবারও বেগম খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনা উদারতা দেখালেন। এই উদারতার প্রতিদান তিনি কি পাবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উঠেছে অনেক প্রশ্ন। আসুন দেখে নেয়া যাক, বেগম খালেদা জিয়ার জন্য শেখ হাসিনা কি কি দিয়েছিলেন-

১৯৮২ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ক্ষমতা দখল করেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৫ দলীয় জোট। এরপর রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার ভঙ্গুর রাজনৈতিক দল এবং প্রায় অকার্যকর ৭ দলীয় জোট নিয়ে আওয়ামী লীগের পেছনে পেছনে প্রায় অভিন্ন কর্মসূচী দিতে থাকে।

এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল আওয়ামী লীগ এবং ১৫ দলীয় জোট। নব্বইয়ে স্বৈরাচারের পতন হয়; এই স্বৈরাচার পতনের পুরো কৃতিত্বই ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশাল সংগঠন এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ত্যাগী এবং লড়াকু মনোভাব। শেখ হাসিনার কারণেই এরশাদের পতন ঘটে (যাকে বেগম খালেদা জিয়া তাঁর স্বামীর খুনী মনে করেন)।

সেই এরশাদের পতন শেখ হাসিনা ঘটিয়ে ক্ষমতায় বসান বেগম খালেদা জিয়াকে। ৯১ এর অবাধ, নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন, এটা ছিল শেখ হাসিনার একটি দান। কিন্তু ৯১-এ ক্ষমতায় এসে বেগম খালেদা জিয়া কি দিলেন প্রতিদানে? 

তিনি দিলেন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের স্বীকৃতি, তিনি ৭৫ এর আত্মস্বীকৃত খুনীদের পদোন্নতি দিলেন, খুনীদের চাকরি দিলেন, ভোটের অধিকার হরণ করে মিরপুর-মাগুরার মতো উপনির্বাচন করলেন। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসেন, ক্ষমতায় এসে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত যত দুর্নীতি, অনিয়মের বিচার করতে অনীহা প্রকাশ করেন।

বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণেও তিনি রাজি ছিলেন না। শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন যে একটি নির্দলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা দেশে বিকশিত হোক। যেন জনগণের ভোটের অধিকার আর গণতন্ত্রের চর্চা অটুট থাকে। আর একারণেই তিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করেন, বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি করে সরকারের ভারসম্য প্রতিষ্ঠা করেন। 

২০০১ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা স্থানান্তরের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর বিনিময়ে কি দিলেন? ২০০১ এর পহেলা অক্টোবরের নির্বাচনের পরেই বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির তাণ্ডব শুরু হয়, সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মারধর, হত্যার এক মহাযজ্ঞ চলে।

খালেদা জিয়া সরকার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় এবং ১৫ই আগস্টের মতো শোকাবহ দিনকে বিকৃত করার জন্য শুরু করেন মিথ্যে বীভৎস জন্মদিন উৎসব। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত সরকার লুণ্ঠন, দুর্নীতি সীমাহীন পর্যায়ে চলে এবং সেই প্রেক্ষাপটে আসে ওয়ান ইলেভেন।

ওয়ান ইলেভেন আসার পর শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া দুইজনই গ্রেপ্তার হন এবং সংসদ ভবনে অবস্থিত অস্থায়ী কারগারে তাঁদেরকে বন্দি করা হয়। এসময় শেখ হাসিনা উদারতার আরেক নজির স্থাপন করেন। তিনি তাঁর রান্না করা খাবার বেগম খালেদা জিয়ার জন্য পাঠাতেন এবং বেগম খালেদা জিয়া যেন একটু ভালো থাকেন সেইজন্য খোঁজখবরও নিতেন। কিন্তু এর প্রতিদানে বেগম জিয়া কি করলেন?

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং ২০১৪ এর নির্বাচনে অংশ নিতে বেগম জিয়া অস্বীকৃতি জানান এবং এই সময়ে শেখ হাসিনা তাঁকে টেলিফোনে গণভবনে এসে নির্বাচনী আলাপ করার অনুরোধ করেন। সেইসময়ে বেগম খালেদা জিয়া যে নোংরা এবং কুৎসিত ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছিলেন তা সকলেই জানে, নতুন করে কিছু বলার নেই। 

অর্থাৎ শেখ হাসিনা যে তাঁকে মহানুভবতা দেখিয়ে তাঁর জন্যে এতকিছু করলেন, বেগম জিয়া তাঁর প্রতিদানে দিলেন বিদ্বেসপূর্ণ কটুক্তি। আর এবার শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবার মতো সিদ্ধান্ত দিলেন। খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন, এই মুক্তির পর ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তিনি আর কি নির্মম প্রতিদান দিবেন শেখ হাসিনাকে, সেটাই দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী। 

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin