kha_tare_job

শিগগিরই সুদিনের আশা বিএনপির – কাল ৪১ বছরে পা দেবে বিএনপি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তিনি থাকছেন যুক্তরাজ্যে। শিগগিরই তাঁর দেশে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বারবার ক্ষমতায় যাওয়া দলটি ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে ক্ষমতার বাইরে। আর মাত্র চার মাস পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখনো সরকারের কাছে চাওয়া বিএনপির কোনো দাবিই পূরণ হয়নি।

উল্টো সরকারের নানা পদক্ষেপে নিত্যনতুন দাবি বাড়ছে বিএনপির। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, এরপর খালেদা জিয়ার মুক্তি আর এখন ইভিএম বাতিলের মতো দাবি যুক্ত হয়েছে।

আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপির কোনো কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছেন না ক্ষমতাসীনেরা। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কাল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।

বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন ও খারাপ সময় পার করছে—দলটির নীতিনির্ধারকেরাই এমন কথা বলছেন। তবে তাঁরা এ-ও বলছেন, সময় খারাপ হলেও এই পরিস্থিতি বেশি দিন থাকবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন আনবে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, দ্রুতই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে।

বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি সমাবেশ হবে। এ দিন ৪১ বছরে পা দেবে বিএনপি। সমাবেশের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অনুমতি দিয়েছে। এই সমাবেশ থেকে বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান আসবে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা জানিয়েছেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, দল সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে, এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। একটি মিছিল করলে পুলিশ দিয়ে পেটানো হয়। মিছিল ভেঙে দেওয়া হয়। নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। এভাবে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে কোনো রাজনৈতিক দল চলতে পারে না।

এ কারণে দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার করতে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানানো হবে। এই আন্দোলনের সফলতার ওপর নির্ভর করবে বিএনপির আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া।

বিএনপির বর্তমান অবস্থার বিষয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি খারাপ সময় পার করছে, এটি সত্য। তবে এই সময় বেশি দিন থাকবে না। যত তুফান আসুক, বিএনপি সেই তুফান মোকাবিলা করবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিএনপি পরিবর্তন আনবে। এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আর বেশি দিন লাগবে না, পুলিশের কাছে অনুমতি নিয়ে বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে না। এ দেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনবে।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, টানা ১২ বছর দল ক্ষমতায় না থাকার কারণে নেতা-কর্মীরা হতাশ। দলের চেয়ারপারসনের কারাবাস নেতা-কর্মীদের হতাশা আরও বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় করণীয় কী, তার সমাধান বের করতে দলের নীতিনির্ধারকেরা প্রতি সপ্তাহে তিন-চারবার করে বসছেন। কিন্তু কোনো সমাধান আসছে না। সব দিক থেকে সরকার এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে যে, কোনোভাবেই কোনো কিছু করা যাচ্ছে না। ওই সূত্র বলছে, আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু বিএনপির সামনে নেই। শান্তিপূর্ণ গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সময়ের পরিবর্তন আনতে হবে।

বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য বিএনপির ভূমিকা দেখতে চায় জনগণ। এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে না পারলে বিএনপিকে দোষ দেবে জনগণ। এ কারণে দলের মহাসচিব দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। জনগণের মৌলিক অধিকার ফেরাতে বিএনপি কাজ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি একা এই অবস্থা থেকে দেশকে বেরিয়ে আনতে পারবে না। সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে একটি সর্বদলীয় ঐক্যের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি পিছিয়ে রয়েছে বলেও মনে করেন দলের শীর্ষ নেতারা। এর পেছনেও সরকার ‘দায়ী’ বলে তাঁরা দাবি করছেন। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে। অনেকে বাড়িছাড়া। গুম-খুনের শিকার হয়েছেন অনেক নেতা-কর্মী। এসব কারণে দলের তৃণমূলও সেভাবে মাঠে নামতে পারছে না।

বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মাঠে নামার জন্য নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানাবেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এরপর দলটি নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়েও করণীয় নির্ধারণ করবে।

বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ১২ বছর আগে ক্ষমতা ছাড়া হওয়ার পর থেকেই বিএনপিকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিএনপির কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক—কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না, আবার নেতা-কর্মীরা নিজেরাই আছে বেকায়দায়। ফলে সবকিছু ঠিকভাবে এগোচ্ছে না। তিনি বলেন, আগের অনেক অনড় বিষয় থেকে বিএনপি বেরিয়ে এসেছে। দলটি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যা যা প্রয়োজন তা করছে। তাঁর মতে, বিএনপি একটি কঠিন সময়ের মধ্যে আছে, তবে এই পরিস্থিতি থেকে দলটি বেরিয়ে আসবে।

ডা. জাফরুল্লাহ আরও বলেন, দলটি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারলে দলটির জন্য ভালো তো বটেই, দেশের জন্যও ভালো। তবে এই সময়টা কবে আসবে, বলা কঠিন। আগামী এক-দেড় মাস সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে রাজনীতিতে পরিবর্তন আসার পাশাপাশি বিএনপির খারাপ অবস্থানেরও পরিবর্তন আসতে পারে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin