উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিকের পর প্রাথমিকের পরীক্ষায়ও প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় বেজায় ক্ষেপেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
কিছু দিনের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বি চৌধুরী বলেছেন, “এ ধরনের ঘটনার পর মন্ত্রীও থাকা উচিৎ না, কিছুতেই না।” রোববার ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে ন্যাশনাল ইয়ুথ ফোরামের বাৎসরিক জাতীয় সম্মেলন ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্টে’ নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি।
পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এবার জেএসসির পর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবরও গণমাধ্যমে এসেছে।
বি চৌধুরী বলেন, “ক্লাস ওয়ান, টু, থ্রি…. প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র, তার পরীক্ষার কাগজ (প্রশ্ন) নাকি ফাঁস হয়ে যায়! এ রকম অপরাধের পর মন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে না, তাদেরকে (অভিযুক্ত শিক্ষক) বহিষ্কারও করা হয় না। এরা কি শিক্ষক থাকার উপযুক্ত?”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বি চৌধুরী এই বিষয়টি নিয়ে তরুণ সমাজকে ভাবার আহ্বান জানান। শিশু ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করলে এই অপরাধ কমানো যাবে বলে মনে করেন তিনি।
“চার বছরের বাচ্চাকে ধর্ষণ করা হয়, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। যারা শিশু ধর্ষণ করে তাদেরকে একমাত্র মৃত্যুদণ্ড সাজা দিতে হবে। যখন চারদিকে অ্যাসিড মারা হত, যেই এই অপরাধের সাজা মৃত্যুদণ্ড হয়ে গেলে কাপুরুষরা সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে গেল।
“কাল আইন করা হোক যে, শিশু ধর্ষণের আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, আমি গ্যারান্টি দিলাম, তার সাত দিন পর থেকে শিশু ধর্ষণ হবে না।”
সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে কোনো আসামিকে ক্ষমা করে দেওয়ার যে বিধান রয়েছে, তা রদ করার আহ্বানও জানান এই পদে দায়িত্ব পালন করে আসা বি চৌধুরী।
“তথাকথিত সাংবিধানিক অধিকার দিয়ে প্রেসিডেন্টের নামে দোষগুলো চাপানো হয়। আসে সরকার থেকে রিকুয়েস্ট, প্রেসিডেন্ট সই করে দেয়- ‘মাফ করিয়া দিলাম’। এই মাফ করার অধিকার প্রেসিডেন্টকে বন্ধ করতে হবে; সন্ত্রাসদের মাফ করতে পারবেন না ও ধর্ষণকারীকে মাফ করতে পারবেন না।”
‘সাইবার ইথিকস অ্যান্ড ইয়ুথ এগেইনেস্ট সাইবার ক্রাইম’ শীর্ষক আলোচনায় বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের একটি অংশ চুরি হয়ে গেছে। দুঃখজনক ব্যাপার হল, এটা শুধু টাকা নয়, সলভেন্সির উপর অ্যাটাক হয়ে গেছে। ঘরে চোর ঢুকলে জিনিসপত্র নিয়ে গেলে যে ক্ষতি হয়, এর মধ্যে বড় ক্ষতি আমার প্রাইভেসি আজ নষ্ট হয়ে গেছে।”
এই চুরির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার সমালোচনাও করেন সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু।
“দেড় বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও রিপোর্ট মানুষের সামনে আসছে না। এই রিপোর্ট যখন আসছে না তখন আমরা কেউ জানি না, এই হ্যাকিংয়ের পেছনে কারা ছিল।”
অনলাইনে এখন মিথ্যা সংবাদ প্রচারের ঘটনা তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, “আপনারা ইদানীং দেখতে পাচ্ছেন, ফেইক নিউজ কীভাবে করা হচ্ছে। তারা ফেব্রিকেটেড নিউজটা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে এবং এটা শেয়ার করতে করতে মনে হয় যেন এটা একটা সত্য ঘটনা। এটা মিথ্যা প্রমাণ করার আগেই অনেক বিস্তার হয়ে গেছে।
“এটা পলিটিক্যালি অত্যন্ত ডেমেজিং ব্যাপার। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, যখন একটি রাজনৈতিক দল কিংবা সরকারি ইনস্টিটিউট ফেইক নিউজের আশ্রয় গ্রহণ করে, তখন কিন্তু দেশের ইনস্টিটিউশনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”
“যে দেশের ইনস্টিটিউশন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, সেখানে জনগণের সিকিউরিটি কে দেবে?” প্রশ্ন করেন তিনি।
বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্টের চেয়ারপার্সন রুমানা ইসলাম সেতুর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান মো. শাজাহান, সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনিও বক্তব্য দেন।
উৎসঃ বিডিনিউজ