আবারো বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন ও গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিএনপি বলেছে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও জনগণের রক্ত চুষে খেতে এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের লুটপাটের আরো বেশি সুযোগ করে দিতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এমনকি কয়েক দফা বন্যায় দেশে তীব্র খাদ্য সঙ্কট চলছে তার ওপর বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়বে। আসলে জনগণের প্রতি ভোটারবিহীন সরকারের দায়বদ্ধতা নেই বলেই জনগণকে নিষ্পেষণ ও অপমান করতে এই দাম বৃদ্ধিবিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন।
রিজভী আরো বলেন, বর্তমান সরকার একের পর এক জনবিরোধী কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কমার কথা। কিন্তু বিদ্যুতের দাম না কমিয়ে উল্টো বাড়ানো নজিরবিহীন এবং গণবিরোধী। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি (ফার্নেস) তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করা হলে খরচ আরো কমানো যেতো।নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।এসময় দলের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও জনগণের রক্ত চুষে খেতে আবারো বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম যা আগামী মাস থেকেই কার্যকর হবে। যেখানে বিদ্যুতের দাম কমানোর কথা সেখানে পূর্বের তুলনায় পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসায় এখন বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে বাড়বে ৩৫ পয়সা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। যা শুধু অযৌক্তিক ও গণবিরোধী নয় ভোটারবিহীন সরকারের লুটপাট নীতির বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, গোটা দেশটাকে গিলে খেতেই রক্তচোষা সরকার উন্মত্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজারসহ পুরো অর্থনৈতিক খাতকে তিলে তিলে খেয়েও তাদের স্বাদ মিটেনি। তাই বার বার গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গরীবের রক্ত পান করাটাই যেন তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। এর আগে গত মার্চে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার এবং খুচরা পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধুমাত্র লুটপাটের জন্যই গরিবের সর্বশেষ সম্বলটুকু আত্মসাৎ করে সরকার আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ালো।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিদ্যুতের সাথে সব কিছু সম্পর্কিত। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষ। শিল্পখাতেও পড়বে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব। এমনিতে সরকারের লুটপাট আর ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশে কোনো বিনিয়োগ নেই। এমন সময় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা মানেই বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা। এতে গোটা অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। প্রতিযোগী মূল্যে শিল্প উৎপাদন সক্ষমতা ব্যাহত হবে। এছাড়া বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো, রফতানি সক্ষমতা, শিল্প বহুমুখীকরণ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
অর্থাৎ ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে। দেশে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে বেকারত্ব।রিজভী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দামও। বর্তমানে নিত্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। তার ওপর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাশুলও দিতে হবে নিম্ন আয়ের মানুষদের। কৃষিখাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। নতুন করে বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধিতে কৃষি ও শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুত প্রকল্পের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে কুইক রেন্টাল প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এসব প্রকল্পের পেছনে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের আত্মীয়স্বজন। এদের লুটপাটের আরো বেশি সুযোগ করে দিতেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি এখন লুটের খাত।
আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আরেকবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এই গণবিরোধী সিন্ধান্ত প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।এছাড়া গত বুধবার বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করেন রিজভী।
dailynayadiganta
ধানের শীষ থেকে নৌকায় হুদা!
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও প্রায় এক বছর বাকি থাকলেও এখন থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নানামুখী সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ঠিক তারই প্রমাণ মিলল বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা নাজমুল হুদার কথায়। ক’দিন আগেই তার বিরুদ্ধে চলা দুর্নীতি মামলার সাজা কমিয়ে চার বছর করেছেন উচ্চ আদালত।এরই মাঝে নাজমুল হুদা পরিবর্তন ডটকমকে জানালেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়ে তিনি নির্বাচন করতে চান।নাজমুল হুদা টেলিফোনে পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্ত করতে চাই আমি।’
এক্ষেত্রে মহাজোটে যুক্ত হয়ে নৌকা প্রতীকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি। আর প্রধানমন্ত্রী তাকে এ বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন।ধানের শীষ থেকে নৌকায় আসা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ডিগবাজি খাওয়ার ইতিহাস আমার নেই। আমি চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত আরো শক্ত করতে।’‘আমি দল পরিবর্তন করছি না। শুধু জোট পরিবর্তন করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে কথা দিয়েছেন, আমি মনোনয়ন পাবো। তবে দোহার থেকে নয়, আমি এবার লড়বো গুলশান থেকে। আমি বিশ্বাস করি তার (প্রধানমন্ত্রী) দেয়া কথা ভঙ্গ হবে না,’ বলেন নাজমুল হুদা।বিএনপির প্রতিও ক্ষোভ ঝাড়েন নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, ‘২০দলীয় জোটের সাথে থেকে আমি যে সম্মান পাইনি, তা ১৪ দলে থেকে পাবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মহাজোটে যুক্ত হবার সাথে আমার বিরুদ্ধে দেয়া দুর্নীতি মামলার রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ওটা আইনি বিষয়। আর এটা রাজনৈতিক। এই রায় তো এস কে সিনহা স্বৈরাচারি কায়দায় দিয়েছিলেন। আমার বিরুদ্ধে আক্রোশ মেটাতে।’দল পাল্টানো, ভোল পাল্টানো – কখনোবা দুর্নীতির কারনে আলোচনায় এসেছেন বিএনপি আমলের যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
দুর্নীতি ছাড়েনি তার স্ত্রী সিগমা হুদাকেও। স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীরও সাজা হয়েছে দুর্নীতির দায়ে।প্রসঙ্গত, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ২০১০ সালে তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)। পরবর্তী সময়ে তাকে বিএনএফ থেকেও বহিষ্কার করা হন।
পরে গত মে মাসে তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স-বিএনএ। তবে তাতেও তেমন সাড়া পাননি।তিনি সর্বশেষ আলোচনায় আসেন গত ১৮ই নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত হয়ে। সেখানে তাকে বসে থাকতে এবং কথা বলতে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের সাথে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কথা বললে তারা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘মহাজোট স্বাধীনতার পক্ষের সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে যারা জনগণমুখী তারা সুযোগ পাবে।’
‘মহাজোটের মন অনেক বড়। আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি (নাজমুল হুদা) স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করছেন। তিনি যুক্ত হলে তো ভালোই হবে,’ যোগ করেন তিনি।হুদার যোগদান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ পরিবর্তনকে বলেন, ‘আমাদের তো একটি ১৪-দলীয় জোট আছেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মহাজোট করেছিলাম। এবারও নির্বাচনে মহাজোট হবে।
আমরা উনার (নাজমুল হুদার) কার্যকলাপ লক্ষ্য করেছি। আমাদের কাছে মনে হয় তিনি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। এতে করে মহাজোট আরো শক্তিশালী হবে। জনগনমুখীরা অবশ্যই মহাজোটে সুযোগ পাবেন। আর মামলার বিষয়টি তার ব্যক্তিগত।’
poriborton