রিপনের নামে চিঠি নিয়ে বিএনপিতে তুমুল আলোচনা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে ভোটের লড়াইয়ে আগ্রহী আসাদুজ্জামান রিপনের নামে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো এক চিঠি বিএনপিতে সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে।

ওই চিঠিতে বিএনপিতে মাঠের কর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ আনা হয়েছে। আবার ভোটের লড়াইয়ে নামার সময় এলে অর্থবিত্তের বিষয়টি চলে আসে বলেও আক্ষেপের কথা বলা হয়েছে এতে।

একজন রাজনীতিকের জীবনে নানা ত্যাগের কথা উল্লেখ করে কেন প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত করা হবে সে প্রশ্নও রাখা হয়েছে।

রিপন বলেছেন এই চিঠি তিনি লেখেননি। তবে চিঠিতে যা বলা হয়েছে তার বিরোধিতাও করছেন না তিনি।

আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে হলে প্রার্থিতা জমা দিতে হবে আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে। আর এতদিন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের নাম আসলেও সম্প্রতি আবার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জান রিপন ভোটে করতে তার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি দলের মনোনয়ন ফরমও কিনেছেন। আজ সোমবার আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

এই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রিপনের নামে চিঠিটি ছড়িয়েছে।

চিঠিতে যা আছে

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যখন কোন জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ আসে, নিজের এত দিনের কষ্টের, শ্রম ঘামের মূল্যায়ন এর সুযোগ আসে তখন পাহাড় সমান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আমার অর্থনৈতিক মানদণ্ড। কিছু অর্বাচীন এগিয়ে আসে, বলে নির্বাচন করতে অর্থ লাগে, তার অর্থ নেই তাই তাকে নয় আলালের ঘরের সর্ব সুখ ভোগী আমার সেই বন্ধুকে মনোনয়নের জন্য এগিয়ে আনা হয়।’

বিএনপির নেতারা জানান, তাদের দলে ভোটে আগ্রহী নেতাদের মধ্যে অর্থবিত্তে পিছিয়ে রিপন। আর তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি যথেষ্ট খরচ করতে পারবেন কি না, এই প্রশ্ন আছে নেতাদের মধ্যে। এই হতাশার কথাই উঠে এসেছে চিঠিতে।

নিজেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের বর্ণনা করে ওই চিঠিতে রাজনীতি করতে গিয়ে বলা হয়েছে রাজনীতির প্রেমে পড়ে চুরি হয়ে গেছে অবেলায় অনেক স্বপ্ন। হারিয়েছে প্রেমিক, বন্ধুর প্রেমিকা যখন বিয়ের চুরি পড়েছে, তখন তাকে পরতে হয়েছে লোহার চুরি, বন্ধু যখন প্রিয়াকে নিয়ে ফুলসয্যায় তখন তিনি কারাগারের ভেতর ‘ইলিশ ফাইলে’।

বন্ধু যখন তার টাকায় বাবাকে হজে পাঠায় আর তখন তার বাবার থানা -পুলিশ, কোর্ট কাচারি ঘুরে ক্লান্ত হয়ে রণে ক্ষান্ত দিয়ে অন্য ভুবনে চলে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘এই জীবন কাহিনি শুধু আমার নয় রাজনীতির মায়াজালে বন্ধু সকলের। কালের সাক্ষী, কালের ইতিহাস হয়ে বয়ে বেড়াতে হয় আমাদের।’

ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির মনোনয়নের কথা ইঙ্গিত করে বলা হয়, ‘তবে কেন আমায় বঞ্চিত করা হবে আমার প্রাপ্যতা থেকে? বন্ধুরা আসুন এগিয়ে বন্ধ হোক এই তামাশা।’

রিপন এবং অন্যরা যা বলছেন

এই চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে রিপন বলেন, ‘আমি এমন লেখা লেখিনি। হয়তো কোনো সমর্থক বা কর্মীরা লিখতে পারে। এখন আসলে এগুলো আমার দেখার সুযোগও নেই।’

‘প্রচুর কাজ, ব্যস্ততা আছে। যেহেতু সামনে নির্বাচন সেহেতু তারা হয়তো আমাকে সিম্বল হিসেবে রেখে তাদের মনের কথা লিখেছে। আমি দেখিনি লেখাটা এখনও।’

তবে ফেসবুকে রিপনের নামে এই চিঠিতে অনেকেই বক্তব্য সমর্থন করে নানা কথা লিখছেন।

শহীদ নামে একজন সাবেক ছাত্রনেতা লেখেন, ‘ড. রিপনের চিঠি পড়লাম। এটা তৃণমূলের প্রতিটি নেতা কর্মীর মনের কথা। দল তো তৃণমূলের ভাষা বুঝে না। চেনে না প্রকৃত কর্মী। ত্যাগীরা সর্বদা উপেক্ষিত।’

‘আপনি রাজপথে যতই অ্যাকটিভ থাকেন লাভ নাই। যত সময় নেতার বাসায় হাজিরা না দেবেন তত সময় পরিক্ষীত কর্মী হতে পারবেন না। এত কিছুর দরকার নাই পকেটে টাকা আর গাড়ি থাকলে আপনার চেয়ে অ্যাকটিভ কর্মী আর কেহ নাই; পদ পদবী আপনার কাছে দৌড়ে আসবে।’

ফারুক ইকবাল নামে একজন লিখেছেন, ‘আসাদুজ্জামান রিপন ছাত্রদলের প্রাক্তন নেতা হিসাবে বিশ্বস্ত। মনোনয়ন পাওয়ার দাবিদার।’

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান খন্দকার লিখেছেন, ‘ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করে করে দলকেই ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। দল এখন দালালদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রভাবশালী একজন সহ-সভাপতি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চিঠির অনেকগুলো বিষয়ের সঙ্গে আমি একমত। তবে সব গুলোর বিষয়ে না। কারণ মাঠের কর্মীদের সবসময় মূল্যায়ন করা হয় না এটাও যেমন ঠিক তেমনি সবসময় মূল্যায়ন করার সুযোগও থাকে না। আর অর্থের কারণে কেউ কেউ এগিয়ে যায় এটা শুধু বিএনপি না, সামগ্রিক রাজনীতির চিত্র। তবে ঢাকা উত্তরে মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ণ হবে এটা আমরা দেখতে চাই।’

প্রার্থী বাছাই হতে পারে আজ

রিপর ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আরও চার জন। এরা হলেন ২০১৫ সালের এপ্রিলের ভোটে ঢাকা উত্তর থেকে আনিসুল হকের বিরুদ্ধে লড়া তাবিথ আউয়াল, বিএনপির সহ-প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কায়ুইম।

এদের মধ্যে এম এ কাইয়ুম বিদেশে পলাতক। তিনি গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যা মামলার আসামি।

আজ রাকে গুলশান কার্যালয়ে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপরও চূড়ান্ত করা হবে দলের প্রার্থী। তবে কাইয়ুমের সাক্ষাৎকার কীভাবে নেয়া হবে, সেটি স্পষ্ট নয়।

(ঢাকাটাইমস

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin