bnp-flag

রায় ও ভাঙন আতঙ্কে বিএনপি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির ভিতরে চলছে নানামুখী আলোচনা। শুধু তাই নয়, এক ধরনের আতঙ্কও তৈরি হয়েছে। যদিও দলীয় নেতারা বলছেন, আতঙ্কের কিছু নেই। যে কোনো মূল্যে দলীয় ঐক্য ধরে রাখা হবে।

চেয়ারপারসনের সাজা হলে সরকারবিরোধী একক আন্দোলনে যাবে বিএনপি। কোথাও কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যারা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে তারা চিরতরে হারিয়ে যাবে। অতীতেও অনেকেই এমন করেছিল। আজ তারা কোথাও নেই। সংকট মোকাবিলা করেই বিএনপি আগামীর রাজনীতি করবে।

তারপরও ত্যাগী নেতারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ভিতরে অন্তর্কলহ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের দুটি মামলার গতি বাড়ায় এ আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে।

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি যেসব নেতার জন্য সফল হয়নি বলে দলে আলোচনা আছে, তাদের দিকেই সন্দেহের দৃষ্টি। এরা সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিয়ে বিএনপিকে আবারও ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।

বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীরাও দল ভাঙার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতন্ত্র যখন সমাজের ভিতরে শিকড় গাড়তে পারেনি, তখন অন্যভাবে হলেও দলটাকে (বিএনপিকে) ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা হতেই পারে।

আর তা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক সবাই উদ্বেগ ও আতঙ্কে আছেন। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দল ভাঙার চেষ্টা হতেই পারে। অতীতেও হয়েছে। নেতা-কর্মীরাও উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত।

তবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে কিছুই হবে না। আমার বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে কেউ ভাঙতে পারবে না।’ নাম প্রকাশ না করে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, কেন্দ্রীয় অনেক নেতার মধ্যেই হঠাৎ আবার সরকার প্রীতি বেড়ে গেছে। তারা নানা কায়দায় চেষ্টা করছেন, দলীয় সিদ্ধান্তগুলো সরকারের অনুকূলে নিতে।

এমনকি তারা আর্থিকসহ নানা সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাবও দিচ্ছেন কিছু নেতাকে। যারা তাদের কথা শুনছেন না, তাদের নানারকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। নতুন করে মামলা-মোকদ্দমা দেওয়া শুরু হয়েছে। এরাই ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর কৌশলে বেগম খালেদা জিয়াকে দিয়ে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ডেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের ঢাকায় এনে বিপদে ফেলেছিলেন।

সেই ব্যক্তিরা এবারও মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দলকে বিপদে ফেলার জন্য তত্পর হয়ে ওঠেছেন। এ প্রক্রিয়ায় দলের স্থায়ী কমিটির দু-একজন সদস্যসহ কেন্দ্রীয় কমিটির ডজন খানেক নেতা জড়িত থাকার কথা দলে আলোচনা আছে। এ ছাড়া চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের দুজন বিতর্কিত কর্মকর্তাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে।

বেগম খালেদা জিয়াকে মামলার চাপ দিয়ে সরকারের প্রস্তাবগুলোতে রাজি করাতে না পারলে শেষ পর্যন্ত তাকে অন্তরীণ করে হলেও সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান তারা। এদের কেউ কেউ আগামী সংসদের বিরোধী দলের নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বলে নেতা-কর্মীরা ধারণা করছেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কারা কী করছেন, জানি না। তবে জন্মের পর থেকেই বিএনপির বিরুদ্ধে বার বার ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কেউই সফল হয়নি। এ সরকারও ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু সফল হবে না। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে দল ভাঙার যত চেষ্টাই করা হোক না কেন, তা কখনোই সফল হবে না। অতীতেও তারা অনেক চেষ্টা করেছে, ওয়ান-ইলেভেন এর সময়ও করেছে, পারেনি। মামলা-হামলা দিয়ে কখনো জনআন্দোলন ঠেকানো যায় না। কাজেই তারাও (সরকার) সফল হবে না।

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আবারও একটি প্রতারণার নির্বাচন করতে চাচ্ছে সরকার। এর আগে দল ভাঙতে চায় তারা। কিন্তু এবার আর তা হবে না। সেই চেষ্টা করলে নতুন বছরে এই সরকারকে উচ্চ মাশুল দিয়ে বিদায় নিতে হবে।

বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও দলের ত্যাগী নেতারা মনে করেন, দলের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রধানত দায়ী বেগম খালেদা জিয়ার ঘরে বসে থাকা। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। আর সে জন্য বিএনপিকেও বদলাতে হবে। বদলাতে হবে চেয়ারপারসনের অফিসের সময়সূচি।

কোনোক্রমেই রাত ১০টার পর তার অফিসে থাকা ঠিক হবে না। আবার অফিসে আসতেও হবে তাঁকে বিকাল ৪টার মধ্যে। এ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অঘোষিতভাবে অন্তরীণ করেই রাখা হয়েছে। এ জন্য অনেকটা তিনি নিজেই দায়ী।

আর ঘরে বসে না থেকে তাঁর উচিত সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করা। তা না হলে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র মোকাবিলা সম্ভব হবে না। তৃণমূল সফর করলে দল যেমন চাঙ্গা হবে, সরকারও ষড়যন্ত্র থেকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে।

বিডি প্রতিদিন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin