রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি হলেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান কোনো রাজনৈতিক দলই তাঁকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানায়নি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাহুল গান্ধীকে শুভেচ্ছা না জানানোর ঘটনায় অবাক হয়েছেন কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ। গত ১৬ ডিসেম্বর উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৪৭ বছর বয়সী রাহুল গান্ধী।
রাহুল গান্ধীর ওয়েবসাইটে দেখা যায় সভাপতি হবার পর তিনি অভিনন্দনে ভাসছেন। শুধু দেশে নয়, বিদেশ থেকেও তাঁর জন্য অভিনন্দন বার্তা আসছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন থেকে শুরু করে, পাকিস্তান পিপলস পর্টি পর্যন্ত অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর নেতৃত্বের নবযাত্রার শুভকামনা করেছেন। শুধু বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল রাহুল গান্ধীর অভিষেকে কোনো শুভেচ্ছা বা অভিনন্দন জানায়নি।
অবশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। তবে কংগ্রেস নেতারা এটাকে স্রেফ ব্যক্তিগত বার্তা বলেই মনে করছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতীয় কংগ্রেসের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দুটি দলই গ্রামীণ এবং দরিদ্র মানুষের পক্ষে রাজনীতি করে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে ভারত যে সহযোগিতা করেছিল, তা কংগ্রেস সভাপতি শ্রীমতি ইন্দীরা গান্ধীর উদ্যোগেই। ৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর মিসেস গান্ধীর অভিভাবকত্বেই শেখ হাসিনা দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান।
২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন শেখ হাসিনাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হলে, কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা এবং তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি তাঁকে এবং বেগম জিয়াকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন। ভারতের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে মোদির জয়জয়কারে কংগ্রেস মুখ থুবড়ে পড়ে। সর্বশেষ গুজরাট এবং হিমাচলেও নরেন্দ্র মোদি তাঁর ক্যারিশমা অব্যাহত রেখেছেন।
যদিও ভারতের প্রগতিবাদীরা নরেন্দ্র মোদিকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে মনে করেন। প্রগতিশীল এবং মুক্ত চিন্তার জনগণের মধ্যে মোদি বিরোধী ক্ষোভ ক্রমশ পুঞ্জিভূত হচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছে। ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের এক তরফা নির্বাচনে সমর্থন দেয় ভারতের কংগ্রেস সরকার। ওই নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার ব্যাপারে সোনিয়া গান্ধী ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
২০১৪ এর এপ্রিলে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির বিপুল বিজয়ের পর বিএনপি আশা করেছিল এবার ভারত আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু বিএনপিকে হতাশ করে নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার সঙ্গে সুসম্পর্ক আরও গভীর করেন। এই সুসম্পর্কের কারণেই কী রাহুলকে এড়িয়ে গেল আওয়ামী লীগ?
কারণ ভারতের রাজনীতির খোঁজ খবর যাঁরা রাখেন তাঁরা জানেন, নরেন্দ্র মোদি এবং রাহুল গান্ধীর একটা ব্যক্তিগত দ্বৈরথ রয়েছে। রাহুল কংগ্রেসের সভাপতি হলে মোদি তাঁকে ‘আওরঙ্গজেব’ বলে খোঁচা মারেন। রাহুলকে অভিনন্দন জানালে পাছে মোদি বিরক্ত হন এজন্যই কী চুপ আওয়ামী লীগ আর বিএনপি? হয়তো আগামী নির্বাচনে দুদলেরই মোদির আশীর্বাদ দরকার।
মনে রাখা দরকার, গত বছর অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি পুননির্বাচিত হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী তাঁকে অভিনন্দন জানান।
বাংলা ইনসাইডার