khaleda_zia_hasina

রাজনীতিতে হঠাৎ উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি আইনগত ব্যবস্থা!

বিদেশে খালেদা জিয়ার সম্পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে পাল্টাপাল্টি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নোটিশে বিদেশে খালেদা জিয়ার সম্পদ নিয়ে বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং তা সংবাদমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে তা করা না হলে ক্ষতিপূরণ আদায়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ বলেছে, খালেদা জিয়ার পাঠানো নোটিশ প্রত্যাহার না করা হলে এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলটি আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করবে। আওয়ামী লীগের কাছে বিদেশে খালেদা জিয়ার সম্পদসংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ আছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে আইনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব অভিযোগ করেছেন, এর কোনো সত্যতা নেই। খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন গত মঙ্গলবার ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানায় ওই নোটিশ পাঠিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওই নোটিশ সাংবাদিকদের দেখানো হয়। নোটিশে বলা হয়, ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সৌদি আরবে খালেদা জিয়া একটি শপিং মলের মালিক এবং সেখানে তাঁর বিপুল সম্পদ রয়েছে। খালেদা জিয়া টাকা পাচারের সঙ্গেও জড়িত।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে নোটিশে বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করা, তাঁর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি এবং তাঁকে হাস্যকর করার উদ্দেশে এই বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্বজনের কাছে খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি খাটো করার অভিসন্ধিতে এই বক্তব্য তৈরি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, ‘এই মানহানিকর বিবৃতির কারণে অপূরণীয় লোকসান ও ক্ষতি হয়েছে। যার জন্য আইনত আপনি দায়ী।’
অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে ঢাকায় পৃথক এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি, প্রমাণ করেন। পারেননি বলে উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এত সোজা না। সবাইকে শুধু বোকা বানিয়ে যাবেন না। সবাই কিছু বোঝে না? বাংলাদেশের মানুষকে এত বোকা ভেবে লাভ নেই।’

সকালে বিএনপি নোটিশ পাঠানোর কথা জানানোর পর গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার আইনি নোটিশ তাঁরা আইনিভাবেই মোকাবিলা করবেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া, ভিত্তিহীন কোনো তথ্য প্রচার করে না। আওয়ামী লীগ কোনো দিন কোনো বানোয়াট কথা বলে না, ভিত্তিহীন তথ্য দেয় না।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ১২টি দেশে খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ এসেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে খালেদা জিয়ার সম্পদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের কাছে অবশ্যই তথ্যপ্রমাণ আছে। তা ছাড়া বিভিন্ন অনলাইনে এই বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘উকিল নোটিশ এখনো আমাদের কাছে আসেনি। পেলে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এই বিষয়টি আলোচনায় এনেছিলেন সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম।

একটি বিদেশি সংস্থার প্রতিবেদনের (জিআইএন রিপোর্ট) বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার নামে শপিং মল আছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার দুই ছেলে এবং বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার নামে বিদেশে সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর প্রতিকার চেয়েছিলেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারের সদস্যদের নামে বিদেশে কী কী সম্পদ আছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সত্যতা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরপর ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। সংবাদ সম্মেলনে একাধিক সাংবাদিক সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার অর্থ পাচারের খবর বিদেশি টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সৌদিতে বিশাল শপিং মল, সম্পদ পাওয়ার বিষয়ে আমরা কিছু করিনি। বিদেশ থেকে প্রচার হয়েছে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী এই খবরটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচার না হওয়ার সমালোচনা করেন।

১১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গতকাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ওনারা নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য এটা করেছেন। আওয়ামী লীগ এটা নিজেরা বানায়নি। তৈরিও করেনি। প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকেও বলেননি। এগুলো এসেছে পত্রপত্রিকায়। সারা বিশ্বের সবাই বিষয়টি জানে। এখানে মানহানি যা হওয়ার এমনিতেই হয়েছে। এটি কি আমি বললে, আপনি বললে বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললে মানহানি হবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেও উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে এবং খুব শক্ত জবাবই পাবেন তাঁরা।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না। তাঁরা বলছেন, এই বিতর্ক রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা বাড়াবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি এই অবস্থান গণতন্ত্রের জন্য ভালো কিছু নয়। রাজনীতিতে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা ও শ্রদ্ধার ভাব না থাকাটা অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ধরনের তথ্য থাকলে বদনাম না করে তিনি আইনিভাবে এগোতে পারতেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, আইনি নোটিশ যে কেউ, যে কাউকে দিতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের নোটিশ দেওয়ার নজির নেই। এটা কাম্য নয়।

prothom-alo

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin