বিএনপির জেলা সভাপতিরা রাজধানীতে আন্দোলন দেখতে চান বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতিরা বলেছেন, যদি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলায় প্রহসনমূলক কোনো রায় দেয়া হয় তাহলে মুহূর্তের মধ্যে পুরো দেশ অচল করে দেয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে বিএনপির। আমরা কথা দিচ্ছি প্রহসনের রায় হলে কেউ ঘরে বসে রইবে না, গর্জে উঠবে বাংলাদেশ।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানের গ্রাউন্ড বল রুমে দ্বিতীয় অধিবেশনের বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেলা সভাপতিরা।
তারা বলেন,প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তুলা হবে পাড়া মহল্লায়। চুল পরিমান ছাড় যেমন সরকার দিচ্ছে না আমরাও দিব না। আঘাত যত আসবে আন্দোলন তত প্রগাঢ় হবে বলে মন্তব্য করেন একাধিক নেতা।
এসময় একাধিক নেতা জানান, দেশের মানুষ প্রহসনের রায় হলে মানবে না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করব। বাধা আসলে এবার জবাব দেয়া হবে।
আন্দোলন করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছেন বলেও জানান নেতারা।
নেতারা বলেন, তবে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জনগণকে সাথে নিয়ে এই সরকারের প্রতিটি আঘাতের জবাব দেয়া হবে। জুলুমের জবাব দিবে জনগণ।
এসময় জেলা বিএনপির সভাপতিরা আরো বলেন, বিগত দিনে তৃনমূল বিএনপি নিজেদের শরীরের রক্ত দিয়ে আন্দোলন করেছে আর ভবিষ্যতেও করবে। আমরা পাড়া মহল্লায় আন্দোলন করে হামলা মামলার শিকার হয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছি। আর অন্যদিকে ঢাকার নেতারা আন্দোলনকে চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বার প্রান্তে নিতে পারছেন না। তাই এবার আমরা রাজধানী কেন্দ্রিক আন্দোলন দেখতে চাই।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতিরা বলেন, রাজধানীতে গত আন্দোলনের মতো আর কোন ব্যর্থ আন্দোলন দেখতে চায় না।
তারা বলছেন, জেলা নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছে কেন্দ্রের দিকে। কেন্দ্রীয় যে কোনো ডাকে সাড়া দেবেন তারা। তবে গত আন্দোলনের মতো আর রাজধানীকে দেখতে চায় না তারা।
বক্তব্যে তারা বলেন, প্রয়োজনে সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে রাজধানীতে স্থান ভাগ করে দিতে হবে যেন আন্দোলনকে আরো বেগবান করা যায়।
নির্বাহী কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুতেই বক্তব্য রাখেন রংপুর জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা সভাপতি মো. শাহাজাহান, কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম আলম।
এরআগে বেলা ১১ টায় শুরু হয় দীর্ঘ ২ বছর পর ডাকা বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির এ সভা। শুরুতে নেতাদের সামনে শোক প্রস্তাব রাখেন দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মাহাবুব উদ্দিন খোকন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার পরেই দীর্ঘ ১ঘন্টা ১৫মিনিট বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এদিকে বিএনপির চলমান সভায় দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলার নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে আরো বেশি কৌশলী হয়ে একটি সফল আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন। এসময় তারা বলেছেন, বিগত দিনের মতো আর কোনো ব্যর্থ আন্দোলন দেখতে চায় না তৃণমূল।
শনিবার রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে এমন দাবিই করেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতারা।
বিগত দিনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় চতুর্মুখী চাপে রয়েছেন কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এছাড়া যে সব নেতাকর্মী ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির আগে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের টার্গেট করে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে দলের পক্ষ থেকে। এজন্য রাজধানী থেকে একটি সফল আন্দোলনের অপেক্ষায় রয়েছেন তৃণমূল বিএনপি। তারা আর কোনো ব্যর্থ আন্দোলন দেখতে চান না।
বিএনপির মেহেরপুর জেলা সভাপতি মাসুদ অরুন জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি যেন কোনো প্রহসনের রায় না দেয়, আমরা আশা করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। যদি এ ধরনের কোনো রায় হয় তাহলে জনগণ এর জবাব দেবে। এছাড়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। এই দাবি আদায়ে আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো। আমরা আমাদের দাবির কথা ম্যাডামকে জানিয়েছি। এ লক্ষ্যে দলের প্রধান জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশনের শুরু থেকে রংপুর জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা সভাপতি মো. শাহাজাহান, কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম আলমসহ অন্যান্য জেলা থেকে আগত নেতারা ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য রাখেন।
এসব নেতাকর্মীদের অধিকাংশই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে একটি সফল আন্দোলনের কর্মসূচি দেখতে চান। তারা বলেন, বিএনপিকে আরো কৌশলী হয়ে সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামতে হবে। প্রয়োজনে জাতীয় নেতাদের বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব দিয়ে তাদের অধীনে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে।
এর আগে শনিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা ০৫ মিনিটে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হোটেল লা মেরিডিয়ানের সভাস্থলে পৌঁছালে তার সভাপতিত্বে শুরু হয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সভা।