গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে তার চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এখন সেই দাবি থেকে কিছুটা সরে এসেছেন দলের নেতারা। তারা বলছেন, শুধু ইউনাইটেড নয়, যে কোনও বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হতে পারে। তবে সরকারি হাসপাতালে খালেদা জিয়া চিকিৎসা হোক সেটা চান না তারা।
শুক্রবার ( ৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে করে বিএনপি। সেখানে সাংবাদিকেদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এটাই শুধু বলিনি যে বেগম খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। আমরা বিশেষায়িত হাসপাতালের মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতালের নাম বলেছি। কিন্তু আরও তো বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে তিনি যেতে চান না, আমরাও তাকে নিতে চাই না। কারণ এই সরকারকে তো বিশ্বাস করা যায় না।’
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠাবো। তার সঙ্গে দেখাও করবো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানাবো খালেদা জিয়ার সুচিকিৎিসার ব্যবস্থা করতে।’
মির্জা ফখরুল জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বাম হাত ও বাম পা অবশ হয়ে গেছে। তিনি ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারছেন না। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় শাস্তি দিয়ে কারাগারে বে-আইনিভাবে আটক রেখে হত্যা করার হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘সরকার নিশ্চিত হয়ে গেছে খালেদা জিয়াকে মুক্ত হলে তাদের রাজনৈতিক অতিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে। একইসঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হতে বাধ্য। এই জন্য তার জামিন হওয়ার পর বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় তাকে বেআইনিভাবে আটকে রেখেছে।’
অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিশেষ করে সংবিধান লঙ্ঘন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তাদের অভিযুক্ত হতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষকেও আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ। আপনাদের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে আইন ও বিধান দ্বারা পরিচালিত। এ দায় আপনাদেরও বহন করতে হবে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জেলগেটে বিচার হয়েছে-আওয়ামী লীগ নেতাদের এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড . খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সময় জেলগেটে যে বিচার হয়েছে সেটা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহীতার। তখন দেশে মার্শাল ল’ ছিল। তখন দেশের সংবিধান রহিত ছিল।’
‘ক্যামেরা ট্রায়াল নয়। পুরো দরজা খোলাই ছিল। এটা ক্যামেরা ট্রায়াল হলো কীভাবে’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে মোশাররফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চান। তার কথায় সত্যের অপলাপ। কারণ পরিত্যক্ত পুরনো কারাগারের গেটের বাইরেও কত ধরনের বাধা থাকে আপনারা জানেন। গত দুই ঈদে আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখন আপনারা দেখেছেন কারাগারের গেটের বাইরে কোথায় আমাদের আটকে দিয়েছে। তাহলে সেখানে কীভাবে দরজা খোলা থাকে বলছেন প্রধানমন্ত্রী?’