ershad

যেভাবে এরশাদের নারী কেলেঙ্কারি হাতে নাতে ধরে ফেলেন বিদিশা

.”২০০৩ সালের জুনের দিকে এরশাদ একবার সৌদি আরব গেল।দিন কয়েক থাকবে সেখানে। ফিরবে আগের মতই, দুবাই হয়ে।
ওকে তুলে দিতে আমি এয়ারপোর্ট পর্যন্ত গেলাম।বিদায়ের মুহুর্তে কি মনে করে যেন ওর মোবাইলগুলো নিয়ে নিলাম।
বললাম,”বিদেশে এতগুলো মোবাইল সঙ্গে রেখে কী লাভ।বরং হারিয়ে যেতে পারে।”
এরশাদ দিতে চায়নি,কিন্তু না দেয়ার মতো কোন জোরালো কারণও দেখাতে পারে নি।ফলে মোবাইলগুলো আমার কাছে দিয়েই যেতে হলো।
এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতেই শুরু হয়ে গেল গোয়েন্দাগিরি।মাথা থেকে সেই সন্দেহটা তখনো নামাতে পারিনি।তবে খুব শীঘ্রই সে অভিযানের ফল পেলাম।
ওর গ্রামীণের নাম্বারটিতে মেসেজ বক্সে বেশ কয়েকটি রহস্যজনক এসএমএস পেলাম।

কেউ একজন লিখেছে এরশাদকে,” আপনি বলেছেন আমি নাকি রাভিনা ট্যান্ডনের মতো দেখতে।আমি খুব খুশি হয়েছি।”
সেই একই নাম্বার থেকে আর একটা ম্যাসেজ, “কেমন লেগেছিল সেদিন?আবার কবে দেখা হবে?”
আর একটা লেখা,”আপনি কালো পোষাক পছন্দ করেন।আপনার কাছে যখন যাবো,কালো কাপড় পরেই যাবো।”
বিষয়গুলো নিয়ে আমি আর রেজা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম।এরশাদের ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও রেজা তখন আমাকে বিভিন্ন কাজে নানা ধরনের সহযোগিতা করেছে।সেও চাইতো না যে, তার স্যার এইসব বাজারের মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুক।

রেজার সঙ্গে অবশ্য পরে আমার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্রে ছিল সক্রিয় ভূমিকা।
আমি রেজাকে বললাম,”রেজা ভাই এক কাজ করলে কেমন হয়,এরশাদ সেজে বরং ওই মেয়েকে ডেকে আনি।”
সে একমত পোষণ করলো।আমি এরশাদের মোবাইল দিয়েই ওই মেয়েকে ম্যাসেজ পাঠালাম।কেবল তার কুশল জানতে চাইলাম।
সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর পেলাম, আমি এখন ঢাকায়।”
বুঝলাম মেয়েটা ঢাকায় থাকে না।
সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ পাঠালাম,”ক্যান উই মিট?”
“হয়ার?”
“সেম প্লেস।”

আমি তখনও জানি না,আগে তারা কোথায় মিলিত হয়েছিল।তারপরেও মনে হলে এরশাদ সেজে এ উত্তরটাই দেয়া ভালো।আশা ছিল হয়তো আলাপ চালাতে চালাতে জায়গাটার কথা জেনে নিতে পারবো।
উত্তর পেলাম,”ওকে।আই উইল কাম টুমোরো,৫ পিএম।বি রেডি।”
কিছুক্ষন পর আবার একটা ম্যাসেজ। “ক্যান ইউ গিভ মি ইউর অফিস এড্রেস এসেইন।”
বুঝলাম আগে ওরা এরশাদের অফিসেই মিলিত হয়েছে।আমি অফিসের ঠিকানাটা দিয়ে দিলাম।
পরদিন বেলা তিনটার দিকেই আমি অফিসে চলে গেলাম।

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখি পপি এসে হাজির। পপি মেয়ে আমারই সমবয়সী হবে।
পপি বললো,”মামি কোথায় যাচ্ছেন?আপনাকে ক্লান্ত লাগছে কেন?”
“না ক্লান্ত না।এক জায়গায় যাচ্ছি,মজার একটা ব্যাপার আছে।যাবি আমার সঙ্গে।”
সে রাজি হয়ে গেল।আমার সঙ্গে গাড়িতে উঠলো।আমরা সোজা চলে এলাম এরশাদের বনানীর অফিসে।সেখানে ঢুকতেই দেখা এরশাদের কর্মচারী জাহাঙ্গীরের সঙ্গে।

বললাম,”একটা মেয়ে আসবে।সোজা আমার কাছে পাঠিয়ে দিবি।”
এরশাদের রুমের পাশে একটা রুম ছিল।আমি সেখানে গিয়ে বসলাম।একপর্যায়ে পপি গেল বাথরুমে।এরই মধ্যে মেয়েটি এসে ঢুকলো।মেয়েটিকে একনজর দেখলাম,ইশারায় বসতে বললাম।

কয়েক মুহুর্তেই সে অসহিষ্ণু হয়ে পড়লো,তা প্রকাশও করলো।
বললো,”আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছেন কেন? আমি যে এসেছি এই খবরটা স্যারকে দেন।”

“ওনাকে খবর দেয়া হয়েছে।আর একটু বসতে হবে।”
এই সময়টায় আমি মেয়েটার দিকে ভালো ভাবে তাকালাম।আমার দৃষ্টির সামনে সে কিছুটা বিব্রত হলো।
জিজ্ঞাসা করলাম,”নাম কী?”
“দীপা।”
“আপনার রেট কত? ঘন্টায় কত নেন?”
আমার প্রশ্নে সে রীতিমত ঘাবড়ে গেল।এর মধ্যে বাথরুম থেকে বের হয়ে এসেছে পপি।
দু’জন মহিলাকে দেখে সে আরও ভয় পেয়ে গেল।একবার পপি’র দিকে একবার আমার দিকে তাকাতে লাগলো।মনে হলো আমাকে চিনতে পারলো।
“আপনি বিদিশা ম্যাডাম?”
“জি,আমি বিদিশা।তা কতদিন ধরে চলছে?”
প্রথমে সে কিছুই বলতে চাচ্ছিল না।আমি কষে একটা থাপ্পড় লাগালাম।
কী করে পারলাম এ কাজ করতে, নিজেও জানি না।আমি মনে হয় রাগে, ঘৃণায় আমি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম।
তবে এতে কাজ হলো।ভয় পেয়ে গেল সে।হড়বড় করে সব বলে দিল।

সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ে।তার একজন বয়ফ্রেন্ডও আছে,ঢাকাতে কোন এক টেলিভিশন চ্যানেলে চাকরি করে।অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা স্বচ্ছল নয়,তাইই টাকার জন্য এসব করে।
“সবশেষ কবে দেখা হয়েছে এরশাদের সঙ্গে।কোথায় মিলিত হয়েছো?”
“এই অফিসে।মাস দুয়েক আগে।সেদিন আপনি বিদেশে ছিলেন।বিদেশ থেকে ফোন করেছিলেন স্যারকে।তারপর আপনার রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছিল।স্যারের ওটা ইরেক্ট হচ্ছিল না।তারপরেও নানাভাবে চেষ্টা করেছি।”

দীপা জানালো শেষবার এরশাদ তাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিলো।
দীপাকে চাপ দিয়ে আগের বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা।জেনে নিলাম।বের হয়ে আসলো এরশাদের বিকৃত যৌনাচারের কাহিনী।
আমি জানতাম পরে এরশাদ হয়তো এসব কথা বেমালুম অস্বীকার করতে পারে।
সে কথা ভেবে দীপার সঙ্গে আলাপচারিতার পুরোটাই ভিডিও করে রাখলাম।

দীপা কেবল এ পর্যায়ে বললো,”ম্যাডাম আমি আপনাকে কখনো দেখিনি। আজ দেখলাম।আপনার মতো সুন্দরী বউ থাকতে,এই বুড়ো বয়সে স্যার কেন বাইরে বাইরে এসব করে? তাছাড়া সে তো কিছুই করতে পারে না।”
নিজের স্বামী সম্পর্কে এসব এসব কথা শুনে লজ্জায় আমার ভাষা হারিয়ে গেল।কী বলবো।ঠিক এসময়ে ফোন এল।সৌদি আরব থেকে এরশাদ।
“বিদ ডার্লিং,কোথায় তুমি?”
“আমি অফিসে।”

“এই অসময়ে অফিসে কী করছো।”
“তোমার কিছু কিছু কাজ গুছিয়ে রাখছি।”
“আহহা রে,এই রকম একটা বউ যদি আমার আগে থাকতো!তাহলে আমি অনেক আগেই ক্ষমতায় চলে যেতাম।”
আমার রাগে গা জ্বলছিলো।
বললাম,”এখানে একজন আছে,তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়।তুমি নাকি তাকে আগে থেকেই চেনো।”
“কে,কে?”
“দেখোই না কথা বলে।”

আমি ফোনটার লাউড স্পিকার অন করে দীপার হাতে দিলাম।এরশাদ এবং দীপার সব কথাবার্তাই শুনতে পাচ্ছিলাম আমরা।
“স্যার আমি দীপা।”
“কে?”
এরশাদ যেন চমকে গেল।
“স্যার আমি দীপা।ময়মনসিংহের দীপা।”
“তুমি?তুমি এখানে কী করছো? কে তোমাকে আসতে বলেছে?যাও যাও এক্ষুণি বের হয়ে যাও।”
আতঙ্কে, রাগে রীতিমত চিৎকার করতে লাগলো সে।
দীপা বললো,”স্যার আমি তো যেতে পারছি না।ম্যাডাম আমাকে যেতে দিচ্ছেন না,আটকে রেখেছেন।”
“তুমি কি ওকে কিছু বলেছো নাকি?সাবধান কিছুই বলবে না।”
আমি দীপার কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিলাম।
বললাম,”তুমি চিন্তা করো না ডার্লিং।আমি সব জেনে গেছি।দীপার উপর রাগ করো না,সে কিছুই বলতে চায় নি।আমি চাপ দিয়ে কথা বের করে নিয়েছি।দীপার সব কথাও আমি ভিডিও করে রেখেছি।কাজেই তোমার আর এবার কষ্ট করে কোন মিথ্যা অজুহাত দিতে হবে না।”

আমি আর এরশাদকে কোন কথাই বলার সুযোগ দিলাম না।কেটে দিলাম লাইন। কয়েক মুহুর্ত পরেই এরশাদ ফোন করলো।ধরলাম না।তারপর মোবাইল বন্ধ করে রাখলাম।
একটু পর রেজাকে ফোন করলো সে,”বিদিশাকে থামাও।সব জেনে গেছে ও।”
রেজা এসে আমাকে জানালো সে কথা।আর রেজা আমাকে থামাবে কী,আমার এই পুরো অভিযানের পিছনে তো সেও আছে।এয়ারপোর্টে এরশাদের কাছ থেকে মোবাইল নেয়ার পেছনেও রয়েছে তার বুদ্ধি।

কিছুক্ষণ পর দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে হাজির রুহুল আমিন হাওলাদার।বুঝলাম এরশাদই ফোন করে পাঠিয়েছে তাকে।
সে এসেই বললো,”ম্যাডাম প্লিজ বাসায় যান।”
এ কথা বলতে বলতেই তার চোখ গেল আমার সামনে বসে থাকা দীপার দিকে।একটু যেন চমকে গেল সে।
দীপা বললো,”আমি তো ওনাকে চিনি।উনিও চেনেন আমাকে।”
আমি হাওলাদারের দিকে তাকালাম।

সে কিছুই বলতে পারলো না।মাথা নিচু করে থাকলো।
অথচ এই হাওলাদারকে আমি কতই না ধার্মিক মনে করতাম।উঠতে বসতে মুখে আল্লাহ’র নাম।
তার মহাসচিব হওয়ার পিছনে ছিল আমারই হাত।আমি এরশাদকে বলে বলে তাকে মহাসচিব বানিয়েছি।তার আগে ছিল এবিএম শাহজাহান সাহেব।আইরিন নামের একটি মেয়ের সঙ্গে শাহজাহান সাহেবের সম্পর্কে কথা জানাজানি হয়ে গেলে সেটা নিয়ে পার্টিতে বেশ হৈ চৈ হয়।
তখন হাওলাদারই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে।জানায়, তাকে মহাসচিব বানালে সে এরশাদকে অফিসে দেখে রাখতে পারবে।খারাপ মেয়েরা যাতে না আসতে পারে,সে দিকে নজর রাখবে।

এখন দেখা যাচ্ছে সেই মহাপবিত্র হাওলাদারেরও সম্পর্ক রয়েছে দীপার সঙ্গে।
আমি বিস্মিত কণ্ঠে বললাম,”আপনিও জড়িত এর সঙ্গে?”
হাওলাদার কোন জবাব দিতে পারলো না।
আমি দীপার হাত থেকে মোবাইলটা নিলাম।সেখানেও দেখলাম হাওলাদারের নাম্বারটা। যা বুঝার বুঝে গেলাম।
দীপার মোবাইলে আরও অনেক বিখ্যাত এবং সুপরিচিত লোকের নাম পেলাম।তাদের নাম্বার সেভ করা।

..
সূত্র ঃ শত্রুর সঙ্গে বসবাস
বিদিশা। (পৃষ্ঠা ১১৯ থেকে ২০৩)

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin