মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। অনেক রণাঙ্গণে তারা যুদ্ধ করছে। তবে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে আফগানিস্তানে। কেবল আফগানিস্তানেই নয়, সেখানকার একটি প্রদেশে সবচেয়ে বেশি সৈন্য নিহত হয়।পাকিস্তান-সংলগ্ন আফগানিস্তানের পূর্ব সীমান্ত নাঙ্গাহার প্রদেশ গত বছর ছিল মার্কিন সৈন্যদের জন্য বিশ্বে সবচেয়ে প্রাণঘাতী স্থান। আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে পাকিস্তান তার মাটিকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে অনুমতি দিচ্ছে অভিযোগ এনে ইসলামাবাদকে নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধ করে দিতে ওয়াশিংটনের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রেক্ষাপটে নতুন এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশিত হলো।
বিশ^জুড়ে যখন নতুন বছরকে বরণ করা হচ্ছিল, তখন নাঙাহারে অচিন জেলায় আতশবাজি উৎসবের সময় মার্কিন সামরিক বাহিনী তার প্রথম মৃত্যুর স্বাদ পায়। ঠিক এই জেলাতেই গত এপ্রিলে জিবিইউ-৪৩ ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট’ বা ‘সব বোমার মা’ ফেলা হয়েছিল।স্টার্স অ্যান্ড স্ট্রাইপসের খবরে বলা হয়, লাতভিয়া থেকে আফগানিস্তানে আসা মার্কিন আর্মি গ্রিন বেরেট মিহাইল গোলিন নিয়মিত টহলের সময় নিহত হন। গত ১২ মাসে নাঙাহারে এটি ছিল অষ্টম মার্কিন সৈন্যের নিহত হওয়ার ঘটনা।গত বছর রণাঙ্গনে অন্তত ৩১ মার্কিন সৈন্য নিহত হয়েছে বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে। ইরাক, সিরিয়া, সোমালিয়া, নাইজার, ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে তারা নিহত হয়। ২০১৬ সালে নিহত হয়েছিল ২৬ জন।
রক্তপাত বাড়াটি আফগান পরিস্থিতিকেই প্রতিফলিত করছে বলে মনে করা যেতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে গত আগস্টে ঘোষণা করেছেন, তিনি আফগানিস্তানে সৈন্য বাড়াবেন। দেশটিতে ১১ হাজার সৈন্য বাড়িয়ে ১৪ হাজার করবেন বলে স্টার্স অ্যান্ড স্ট্রাইপসের খবরে বলা হয়।একইসাথে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নুরার্ট গত সপ্তাহে বলেছেন, এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং মার্কিনিদের টার্গেট করার জন্যও পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।আফগানিস্তানবিষয়ক সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা পরিচালক আমরুল্লাহ সালেহ রোববার তেহরানের ইরানিয়ান পিস স্টাডিজ এসোসিয়েশনের সভায় বলেন, বর্তমানে আফগান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো তালেবান। তালেবান বাজেটের সরাসরি আসে পাকিস্তানের সাহায্য থেকে।
তালেবানই যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকারি বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি সৃষ্টি করছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্ভবত পুরোপুরি সত্য নয়। পশতু বিদ্রোহী অনেক দিন ধরেই মার্কিন ও ন্যাটো বাহনিীর জন্য কাঁটা হয়ে রয়েছে। নেভাল পোস্টগ্রাজুয়েট স্কুলের মতে, নাঙ্গাহারের জনসংখ্যঅর ৯০ ভাগ হলো পশতু।ম্যাথু হো ২০০৯ সালে আফগান যুদ্ধের প্রতিবাদে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে পদত্যাগ করার সময় পদত্যাগপত্রে লিখেছিলেন, পশতুরা তাদের ভূমি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ধর্মের ওপর অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শত্রুর হামলার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। তারা বিদ্রোহ করছে অসংখ্য ছোট ছোট গ্রুপে। তারা তালেবানের সাদা ব্যানারের জন্য যুদ্ধ করছে না, তারা বরং বিদেশী সৈন্য ও কাবুলের অপ্রতিনিধিত্ব সরকারের আরোপিত করের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
ফিলিস্তিনে মার্কিন সাহায্য বন্ধের বিরুদ্ধে সুইডেনের হুঁশিয়ারি
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া বড় দাতা দেশ সুইডেন মঙ্গলবার হুঁশিয়ার করে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘ সংস্থাকে দেয়া তহবিল প্রত্যাহার করে নেয়ার মার্কিন সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। খবর এএফপি’র।জাতিসংঘে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ওলোফ স্কগ জানান, মার্কিন প্রশাসন ১ জানুয়ারি ফিলিস্তিন বিষয়ক জাতিসংঘ ত্রাণ ও কর্মসূচি সংস্থার জন্য দেয়া সাড়ে ১২ কোটি ডলার প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এমন খবর প্রকাশের পর তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালির কাছে তার উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে স্কগ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার উদ্বেগ হচ্ছে যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ব্যাপারে আমাদের আলোচনার সময় ইউএনআরডব্লিউএ থেকে তহবিল প্রত্যাহারের ঘোষণা অনেক নেতিবাচক হবে।
এছাড়া এটি মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।সুইডিশ রাষ্ট্রদূত জানান, তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এটি উত্থাপনের বিষয় একেবারে নাকচ করে দেননি। উল্লেখ্য, আগামী ২৫ জানুয়ারি ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে এটি উত্থাপন করার কথা রয়েছে।এ মাসের গোড়ার দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনকে দেয়া মার্কিন সাহায্য কর্তনের হুমকি দিয়ে টুইটারে বলেন, ফিলিস্তিনের কাছ থেকে ওয়াশিংটন ‘কোন প্রশংসা বা সম্মান’ পায়নি।গত ২ জানিুয়ারি টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এক বছরে ফিলিস্তিনি নাগরিকদেরকে লাখ লাখ ডলার দিলেও তাদের কাছ থেকে ‘কোনো প্রশংসা বা সম্মান’ পাইনি।
dailynayadiganta