মার্চে কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের টালমাটাল বিএনপি। বর্তমান নেতৃত্বে ফুঁসে উঠছে বিএনপির তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।  তাদের প্রধান দাবী হচ্ছে যে, দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে হবে। যোগ্য এবং কর্মক্ষম নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হতে হবে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির সিনিয়র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এখন সারাদেশে তৃণমূলের সঙ্গে স্কাইপে যুক্ত হয়ে বৈঠক করছেন।

প্রতিদিনই কোন না কোন জেলা বিভাগীয় শহরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। এসব বৈঠকের ব্যাপ্তি কোন কোন দিন ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পর্যন্ত হচ্ছে । আর বৈঠক করতে গিয়েই নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রসঙ্গটি এসেছে ।

গতকাল তারেক জিয়া বৈঠক করেছেন রংপুর বিভাগীয় শহরের তৃণমূলের সঙ্গে। সেই বৈঠকেও বর্তমানে দলের মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছে যে, স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য অসুস্থ, বয়স ভাড়ে ন্যুয হয়ে আছেন, তারা দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

এরকম পরিস্থিতিতে এই স্থায়ী কমিটি অযোগ্য এবং দায়িত্ব অক্ষম। দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছে তারা। আর সমস্ত অভিযোগগুলোর জবাবে তারেক জিয়া বলেছেন যে, তিনি জানেন নেতৃত্বের ব্যর্থতা আছে এবং নেতৃত্বে দুর্বলতা আছে।

কিন্তু তিনি দলের গঠনতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে নেতৃত্বে পরিবর্তন করতে চান । তারেক জিয়া রংপুরের তৃণমূল নেতৃবৃন্দের কে বলেছেন যে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মার্চে তারা কাউন্সিল করতে চায় এবং মার্চে যদি কোনো কারণে কাউন্সিল না হয় তাহলে মে মাসের মধ্যে অবশ্যই যেন কাউন্সিল হয় তা নিশ্চিত করতে চান তারেক জিয়া।

এই কাউন্সিলের মাধ্যমে তরুণ এবং কর্মক্ষম নেতেৃত্ব আনতে চান বলে আশ্বস্ত করেছেন। বিএনপির তৃণমূল নেতৃবৃন্দ বলছেন, দলের নেতৃত্বের পরিবর্তন ছাড়া কোন আন্দোলন সংগ্রাম সম্ভব নয়, পাশাপাশি নেতৃত্বে পরিবর্তন না হলে সংগঠনকেও ঢেলে সাজানো এবং সংগঠনকে গুছিয়ে তোলা সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে তোলপাড় চলছে বিএনপিতে। দলের একাধিক নেতা বর্তমানে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন এবং যে প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন তার সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে তৃণমূল নেতৃবৃন্দ বিএনপির কোন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারছে না কেন তা নিয়ে উষ্ণ প্রকাশ করেছেন।

বিএনপির তৃণমুল মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ইস্যু থাকলেও সরকারকে খুশি করার জন্য এ সমস্ত ইস্যুতে কোন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করছে না । তারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।

কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ সমস্ত বিষয় নিয়ে আন্দোলন করতে উৎসহ বোধ করছেন না।  এই অবস্থায় বিএনপি`র মধ্যে হতাশা বাড়ছে বলেও তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন।

উল্লেখ্য যে, তারেক জিয়াও তাদের সঙ্গে একমত এবং তিনি দলের নেতৃত্ব পরিবর্তেনের সঙ্গে একমত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে তৃণমূলের একাধিক নেতা।

তারা বলেছে যে, দলে পরিবর্তন করা হবে তবে তারেক জিয়া বিএনপিকে একটি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে চান এবং সেজন্য তিনি হুটহাট করে নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে চান না । তবে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, নেতৃত্ব পরিবর্তনে একটা গঠনতান্ত্রিক সমস্যা রয়েছে কারণ বর্তমান বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় এবং দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত আছেন।

আবার বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হবার পর সমস্ত ক্ষমতা দলের চেয়ারপারসনের কাছেই।  যেদিন থেকে বেগম খালেদা জিয়া বেরিয়েছেন সেদিন তারেক জিয়া আর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেই। এরকম বাস্তবতায় একমাত্র দলের চেয়ারম্যান ছাড়া কেউই মহাসচিব পরিবর্তন করতে পারে না। 

সে ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মসূচিতে  অংশগ্রহণ করছেন না এবং কোনো রাজনৈতিক বিষয় মাথা ঘামাচ্ছে না, সেজন্য দলের মহাসচিব পরিবর্তন এই প্রক্রিয়ায় এখন সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দলের ওপর তারেক জিয়ার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব থাকলেও মহাসচিব পরিবর্তনের গছনতান্ত্রিক ক্ষমতা তার নেই ।

আর এ কারণেই তারেক কাউন্সিলের মধ্যে যাচ্ছেন এবং বিএনপির মধ্যে এটা নিয়ে মোটামুটি একটি ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, দলে অবিলম্বে কাউন্সিল করা উচিত, এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা উচিত। আগামী মার্চেই কাউন্সিল ধরেই বিএনপি এগোতে চাইছে বলে জানা গেছে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin