mk_bn-4564845

মার্কিনীদের কেন বিএনপিতে অরুচি?

বিএনপির আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সম্পর্কের অবনতির খবর সবাই জানে। একটা সময় বিএনপির মিত্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং পাকিস্তান। এখন পাকিস্তান নিজেই অর্থনৈতিক দৈন্যতার মধ্যে রয়েছে। আইএসআই আগে বিএনপিতে যে অর্থ জোগান দিতো, তা এখন বন্ধ হয়ে গেছে বলেই জানা গেছে।

কারণ নিজের দেশে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলাতেই পাকিস্তান হিমশিম খাচ্ছে। তাছাড়া ভূরাজনীতিতে এখন পাকিস্তান এতোটাই পিছিয়ে পড়েছে যে, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার মতো সামর্থ্য এবং শক্তি কোনটাই তাদের নেই।

চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কেও আগের মতো গভীরতা নেই। বরং চীন এখন বিএনপিকে নিয়ে নিজেরাই হতাশ। বরং চীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রেখে রেখে চলার নীতি গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

এটা হয়েছে গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আর এ কারণেই চীনও এখন বিএনপির ব্যাপারে উৎসাহী নয়। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক চীনের নেই। বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন বা বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের অভিপ্রায়ও চীনের এখন পর্যন্ত নেই বলে কূটনৈতিক মহল মনে করে।

বিএনপির শেষ ভরসাস্থল ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে দেখা যাচ্ছে আস্তে আস্তে বিএনপির উপর মার্কিনীদের অরুচি। এই অরুচি কেন, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কূটনীতিকরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপি যে দেশটির ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করেছিল, সেটা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনের আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একান্ত বৈঠক করেছিলেন। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক হয়েছিল বিএনপি নেতৃবৃন্দের।

মার্কিন লবিং এ শক্ত অবস্থান নেওয়ার জন্য ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যেতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি বিএনপি নেতৃবৃন্দ। নির্বাচনের পর আবার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীররা একান্ত বৈঠক করেন।

এরপর একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেও মার্কিন কূটনৈতিকরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতৃবৃন্দ তখন নির্বাচনে কারচুপির বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত হাজির করেন। বিএনপি আশা করেছিলে, এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি অবস্থান নিবে এবং নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এই নির্বাচনের পর অন্যান্য দেশের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছিলো এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নীতিতে চলছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর অরুচি হয়েছে। এই ‘কেন’র উত্তর খুঁজতে গিয়ে যে কারণগুলো পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে-   

১. বিএনপির সঙ্গে জামাতের সম্পর্ক

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে বলে আসছিল জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার জন্য। বিশেষ করে জামাতের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বিএনপি সে কাজটি করেনি। বরং ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জামাতী ইসলামকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে নিজেরাই নিজেদের বিতর্কিত করেছিল বিএনপি।

২. তারেক জিয়ার অবস্থান

তারেক জিয়াকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় মাথাব্যাথা রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তারেক জিয়াকে একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। তারেক জিয়া কেন কিভাবে বিএনপির নেতৃত্বে আছে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোধগম্য নয়। এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

৩. বিএনপির নেতৃত্বে দোদুল্যমানতা এবং নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত দেওয়ার অক্ষমতা

খালেদা জিয়া জেলে থাকা এবং তারেক জিয়া বিদেশে থাকা অবস্থায় বিএনপির মূল নেতৃত্ব দিতেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু কোন প্রশ্নের উত্তর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারতেন না এবং নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোন ক্ষমতাও তার ছিল না। একটি সিদ্ধান্তহীন দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ঝুঁকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনো নিতে চায়নি। মার্কিনীদের বিএনপির ব্যাপারে অরুচি তৈরি হওয়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণ।

৪. সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক

বিএনপির সঙ্গে অনেক সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী সংগঠনের প্রকাশ্য গোপন সম্পর্কের কথা জানা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সমস্ত সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় না দেওয়ায় ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেছে। কিন্তু বিএনপি নেতৃবৃন্দ সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি। বরং বিএনপি প্রকাশ্য ও গোপনে এই সমস্ত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে।

৫. ২০১৪ এর অভিজ্ঞতা

২০১৪’তে বিএনপি যে সন্ত্রাস ও সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছিল, সেটি মার্কিনীদের নাখোশ হওয়ার একটি বড় কারণ। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সহিংস পন্থায় নিয়ে যাওয়ার পক্ষে নয়। বিশেষ করে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, জীবন্ত মানুষকে দগ্ধ করা ইত্যাদি ঘটনাগুলোর কারণে বিএনপির উপর আস্থা হারিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

আর এ কারণেই বিএনপির দাবি দাওয়ার ব্যাপারে সহমত পোষণ করে কোন বক্তব্য বিবৃতি দেওয়া থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছেন মার্কিন কূটনীতিকরা। আর এই কারণেই বিএনপি এখন আন্তর্জাতিক মহলে একেবারেই বন্ধুহীন অবস্থায় দিন যাপন করছে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin