বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে এক শ্রেণির লোক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের ছত্রছায়ায় এ দেশের সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরের জায়গা দখলের মহোৎসব চালাচ্ছে। এরা বঙ্গবন্ধুর স্লোগান দেয় কিন্তু হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে ধারন করে না। এরা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির কথা বলে ফায়দা লুটে, অথচ তার আদর্শ ধারন করে না। এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আজকের বাংলাদেশ, এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা। শুক্রবার বিকেলে পিরোজপুর জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, এ দেশের আড়াই কোটি জনগণকে আর ধোকায় ফেলা যাবে না। কলা গাছ দিবেন, চোর দিবেন, ডাকাত দিবেন আর মাথার উপর থাকবে বঙ্গবন্ধুর ছবি। বলা হবে এখানে ভোট না দিলে মুক্তিযুদ্ধ ভেসে যাবে। সেখানে আমাদের কথা হলো যারা সৎ, যোগ্য আর প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারন করে তাদের মনোনয়ন দিন। আর যারা সংখ্যালঘুদের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড করে তাদের আমরা ভোট দিতে পারি না।
রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে পিরোজপুর জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা প্রবীন রাজনিতিবিদ এ্যাডভোকেট চন্ডি চরন পাল।
জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের আহবায়ক তুষার কান্তি মজুমদারের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ক্যাপ্টেন (অবঃ) সচীন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুখেন্দু শেখর বৈদ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হাকিম হাওলাদার, জেলা উদীচীর সভাপতি এম এ মান্নান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খান মো. আলাউদ্দিন, পিরোজপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শফিউল হক মিঠু, রেজাউল করিম মন্টু, জয়দেব চক্রবর্তী।
পরে ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতে তুষার কান্তি মজুমদারকে সভাপতি, গৌতম চন্দ্র সাহাকে সাধারণ সম্পাদক, চন্দ্র শেখর হালদারকে সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিপঙ্কর মাতা মিন্টুকে কোষাধ্যক্ষ করে ১০১ সদস্যের জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
শীর্ষনিউজ
বিএনপিতে ফিরছেন চট্টগ্রামের তিন নেতা
বিএনপি’র রাজনীতিতে ফিরছেন চট্টগ্রামের তিন শীর্ষ নেতা। এরা হচ্ছেন- চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা গাজী শাহজাহান জুয়েল ও উত্তর জেলা বিএনপি নেতা কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান। দলীয় কোন্দলের কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত ও সাময়িক অব্যাহতি পেয়েছিলেন তারা। এরমধ্যে ৬ মাস আগে সাময়িক অব্যাহতি পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র সাবেক সদস্যসচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল।
আর প্রায় সাড়ে ৫ বছর আগে বিএনপি’র তৎকালীন স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য মোরশেদ খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এরশাদ উল্লাহ। তবে তার এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য মোরশেদ খান সুপারিশ করার উদ্যোগ নেয়ায় বিএনপি’র রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এর আগে দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে প্রভাবশালী নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সুপারিশে গাজী শাহজাহন জুয়েল ও কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানের সাময়িক অব্যাহতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নেতাকর্মীরা জানান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীর কারাবন্দি ও অনুসারী নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় সংগঠনের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে। ফলে দলের হাল ধরতে কমিটির সদস্যসচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানের সাময়িক অব্যাহতি প্রত্যাহার করেন বিএনপি’র চেয়ারপারসন। একইভাবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সমপাদক পদে বিকল্প না থাকায় পটিয়া থেকে দুইবার
নির্বাচিত সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েলের সাময়িক অব্যাহতিও প্রত্যাহার করেন। চলতি বছর ২ ও ৩ মে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র পৃথক কর্মীসভায় সংঘর্ষের ঘটনায় কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান ও গাজী শাহজাহান জুয়েলকে দায়ী করে দলীয় পদ-পদবি ও দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র শীর্ষ এক নেতা বলেন, গত ১৮ই নভেম্বর শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের বৈঠকে চট্টগ্রামের দুই নেতার অব্যাহতি প্রত্যাহারের জন্য জোর সুপারিশ করেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
বৈঠকে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি‘র সাংগঠনিক কাঠামোর বেহাল দশা নিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে উপস্থাপন করেন। এতে শাহজাহান জুয়েল ও কাজী হাসানের অব্যাহতি প্রত্যাহারের জোরালো যুক্তি ও দাবি তোলা হয়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, ম্যাডামকে বলা হয়, তারা শাস্তি যা পাওয়ার পেয়েছে।
দলের প্রয়োজনে তাদের অব্যাহতি প্রত্যাহার জরুরি। ম্যাডাম সব শুনে অব্যাহিত প্রত্যাহার করেছেন। এ প্রসঙ্গে কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান বলেন, গাজী শাহজাহান জুয়েল ও আমার অব্যাহতি প্রত্যাহারের খবর জেনেছি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ফোন করে বার্তাটি দিয়েছেন। এটি আমাদের জন্য সুখবর। আমরা আবার দলে ফিরবো। নিজেকে শুধরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করায় কাজ করবো।
গাজী শাহজাহান জুয়েল বলেন, আমার অব্যাহতি যে প্রত্যাহার করা হবে সেটার সবুজ সংকেত আমি আগেই পেয়েছি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়টি নিয়ে ম্যাডামকে বিব্রত করিনি। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করতে আমি উদ্যোগ নেবো। নেতাদের সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসবো। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সমপাদক হারুনুর রশিদ বলেন, নিয়মানুযায়ী অব্যাহতি প্রত্যাহার হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ জেলার দুই নেতা স্বপদে বহাল হবেন।
মহানগর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ উল্লাহর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সুপারিশও ইতোমধ্যে দলীয় চেয়ারপারসনের কাছে পৌঁছে গেছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হতে পারে। তিনি বলেন, চান্দগাঁও- বোয়ালখালী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম. মোরশেদ খানের সাথে বিরোধে জড়িয়ে ২০১২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এরশাদ উল্লাহ। মোরশেদ খান-এরশাদ উল্লাহ সমপর্কে চাচা-ভাতিজা।
অবশেষে চাচা-ভাতিজা মান-অভিমান ভুলে গত বুধবার রাতে ঢাকার গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে এক টেবিলে বসেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাঁরা দু’জন একান্তে আলাপচারিতা করেন। এ সময় অতীতের ভুল-ত্রুটির জন্য মোরশেদ খানের কাছে ক্ষমা চান এরশাদ উল্লাহ।
এ ব্যাপারে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম. মোরশেদ খান ফোনে বলেন, আমাদের মধ্যে মান ছিল না, অভিমান ছিল। আমি তার বাপের মতো। সে বলেছে, আমাকে মাফ করে দেন। আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, এরশাদ উল্লাহকে দলে ফেরাতে আমি বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে সুপারিশ করবো।
এ বিষয়ে এরশাদ উল্লাহ বলেন, জল তো অনেক গড়ালো, আর কতো! রাগ-অভিমান করে তো রাজনীতি করা যায় না। সময়ের পরিবর্তনে অনেক কিছু করতে হয়। অতীত ভুলে গিয়ে আমরা এখন সামনের দিকে এগুতে চাই। এদিকে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত গাজী শাহজাহান জুয়েল ও কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান। গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতির দায়িত্ব পালনের থেকে তৎকালীন সাধারণ সমপাদক আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাংগঠনিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়।
আসলাম চৌধুরী জেলার আহ্বায়ক হওয়ার পর তার সাথে উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন সদস্যসচিব কাজী হাসানও। কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদে দায়িত্বে থাকা আসলাম চৌধুরী বিভিন্ন মামলায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
মানবজমিন