bnp-flag

ভোটযুদ্ধে প্রস্তুত বিএনপি

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।দলটি তাদের শরিকসহ প্রায় অর্ধেক আসনে একক মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে।

জনসমর্থন বিএনপিকে আরো আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার দিন বিমানবন্দর এলাকায় জনতার ঢল পরে কক্সবাজার সফরে ব্যাপক জনসমাগম তারপর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা এখন বেশ চাঙ্গা ও আত্মবিশ্বাসী।

দলটির নেতারা বলছেন, গত রোববার ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা, তার আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ দিতে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর রাজনৈতিকভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে। পরপর বড় দু’টি কর্মসূচি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। বিশেষ করে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি মানবিক কর্মসূচিকে ঘিরে অনেক দিন পর নিরুত্তাপ রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে পেরেছে বিএনপি। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দীর্ঘ যাত্রাপথে নেতাকর্মীদের জাগিয়ে তোলা গেছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এই দু’টি কর্মসূচিতে সরকারের ভেতরেও নাড়া পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ১২ নভেম্বরের সমাবেশ একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ।এই সমাবেশ যাতে সফল না হয় তার জন্য সরকার নানা ভাবে চেষ্টা করেছে। ঢাকা শহরে অঘোষিত হরতাল পালন করেছে।পরিবহন মালিকদের দিয়ে পরিবহন বন্ধ রেখেছিল।আশেপাশের শহর থেকেও যারা আসতে চেয়েছিল তাদেরকে আটকিয়ে দিয়েছিল।তারপরও যে সমাবেশ হয়েছে তাকে ঐতিহাসিক সমাবেশ বলা যায়।

তিনি বলেন, প্রায় পৌঁনে দুই বছর পর বিএনপি সমাবেশের আহ্বান করেছিল তা শতভাগ সফল হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো দেশে দুর্নীতির মহাৎসব চলছে। এমন কোনো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান নেই, সরকারি ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক, শেয়ার বাজার সেখান থেকে টাকা লুট পাট করা হয়নি। দেশে গুম খুন নির্যাতন সব কিছুর বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ জানানোর জন্য সমাবেশে যোগ দিয়েছে।শুধু বিএনপি না সাধারণ মানুষও এই সমাবেশে যোগ দিয়েছিল, এটা ছিল সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের নিরব প্রতিবাদ।

বিএনপির এ নেতা বলেন, নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে আলোচনাই প্রথম পদক্ষেপ আমরা মনে করি।আর যদি আমাদের দাবি মানা না হয় তাহলে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।কারণ বর্তমান সরকারের অধীনে কি ধরণের নির্বাচন হয় বা হয়েছে তা আমরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দেখছি।এই সরকারের অধিনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আত্মবিশ্বাস বিএনপির আগেও ছিল বর্তমানেও আছে।কিন্তু অসংগঠিত ছিল। গুম খুন নির্যাতন জেল-জুলুম এসব কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা যে পর্যায়ে ছিল সেখান একটা ফরমেটের মধ্যে আনতে সাংগঠনিক ভাবে কাজে লাগানোর জন্য এ কর্মসূচিগুলো কাজে লেগেছে। নতুন করে একে অপরের সাথে দেখা হয়েছে, নতুন করে সবাই দেখেছে বিএনপিকে বাঁধা দিয়ে আটকানো যায় না।

তিনি বলেন, বিএনপির ব্যাপারে সরকারি মহলে একটা অপপ্রচার থাকে যে বিএনপির সমাবেশ হলে গোলযোগ হবে, সংঘর্ষ হবে যেভাবে আওয়ামী লীগের মধ্যে হচ্ছে সেইটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে যে আশংকা ছিল সেটাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে।অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিএনপি বিশ্বাস করে এই মেসেজটা নেতাকর্মীদের কাছেও পৌঁছেছে, দেশবাসি এবং সরকারের কাছেও পৌঁছেছে।এই রেশ থাকতে থাকতে আমরা আরো বিস্তৃত কর্মসূচিতে যেতে চাই যেখানে আমরা আমাদের বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করবো যার মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে যা যা করণীয় সেই কাজে এই কর্মসূচিগুলা আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি প্রাণশক্তি যোগাবে বলে ধারণা আমাদের।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের দমন পিড়নের কাজে। তার মধ্য দিয়েও আমরা লড়ায় করে যাচ্ছি সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে। পরপর তিনটা সফল কর্মসূচি চলমান আন্দোলন সফল করতে আমাদের আরো শক্তি যোগাবে মনবল বৃদ্ধি করবে এবং আগামীতে যে দাবি নিয়ে আমরা রাজপথে আছি অর্থাৎ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমাদেরকে অনেক দুর নিয়ে যাবে। চলমান আন্দোলনকে সফল করতে প্রয়োজনীয় ফুয়েল বা মানসিক শক্তি আমরা পেয়েছি এই কর্মসূচির মাধ্যমে।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোমবার টুইটারে এক বার্তায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা সফল করার জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকারের চক্রান্ত, বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় যোগ দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে বেগবান রাখার জন্য দেশের লাখো মানুষ এবং বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থককে আন্তরিক ধন্যবাদ।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বুধবার রাত ৮টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থা করণীয় ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, শিগগিরিই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে। তবে নেতারা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং নির্বাচনী কার্যক্রম দু’টোই অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের এপ্রিলে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমে হামলা ও বাধার মুখে পড়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর আর তিনি মাঠের কর্মসূচিতে যাননি। গত অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্য থেকে তিনমাস পর খালেদা জিয়া দেশে ফেরেন। ওই দিন বিমানবন্দর সড়কে ব্যাপক জনসমাগম করেছিল বিএনপি। এরপর কক্সবাজারের পথে পথে বিপুল জনসমাগম ও ঢাকায় বড় জনসভা করে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি সরকারকে একটা বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

আরটিএনএন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin